আপনি কি ৬ ঘণ্টার কম ঘুমান

9 hours ago 1
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

গবেষণা বলছে, যারা দিনে ৬ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা অন্যদের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি থাকে। আর স্থূলতা থেকে কত রকম রোগ হতে পারে, সে আবার অন্য আলোচনা।

আজ (১৪ মার্চ) বিশ্ব ঘুম দিবস। তাই আজ আবারও মনে করিয়ে দেওয়া দরকার যে, ঘুম ভালোভাবে জীবিত থাকার পূর্বশর্ত। এটি মানুষের শরীর ও মনের জন্য এক অপরিহার্য প্রক্রিয়া। ঘুম শুধু ক্লান্তি দূর করে না। বরং শারীরিক ও মানসিকভাবে মানুষকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আধুনিক জীবনের ব্যস্ততায় অনেকেই পর্যাপ্ত ঘুমের গুরুত্ব ভুলে যান। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ঘুম না হলে শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে তা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

পর্যাপ্ত ঘুমের উপকারিতা

ঘুম মানে শুধু বিশ্রাম নয়, এটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুমের উল্লেখযোগ্য উপকারিতাগুলো আলোচনা করা হলো:

১. শারীরিক সুস্থতা
ঘুম মানুষের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমায়। পর্যাপ্ত ঘুমালে হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি কমে, পরিপাক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা কমে, ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়, পেশি মেরামত ও বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।

২. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি
স্মৃতিশক্তির উন্নতি, শেখার ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সৃজনশীলতা বাড়াতে ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুমালে মনোযোগ ও একাগ্রতা বৃদ্ধি পায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা বাড়ে, তথ্য সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সহজ হয়।

৩. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং হতাশা বৃদ্ধি পেতে পারে। ভালো ঘুম আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখে, আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে।

৪. রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ঘুমের বিকল্প নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ঘুম অনিয়মিত, তাদের ঠান্ডা-সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

পর্যাপ্ত ঘুম না হলে যেসব ক্ষতি হয়

পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর ও মস্তিষ্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ সংক্রান্ত কিছু সাধারণ সমস্যার মধ্যে রয়েছে স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও শেখার ক্ষমতা কমে যাওয়া, ক্লান্তি ও অবসাদগ্রস্ত অনুভূতি, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি, ওজন বৃদ্ধি ও হরমোনজনিত সমস্যা, কর্মদক্ষতা কমে যাওয়া এবং সৃষ্টিশীলতা হ্রাস।

ভালো ঘুমের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ঘুম নিশ্চিতে কিছু কার্যকরী পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে:

নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি মেনে চলুন: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং জেগে উঠলে দেহের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে সুসংগঠিত করে।

আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করুন: ঘর অন্ধকার, শান্ত ও শীতল রাখুন। আরামদায়ক বিছানা ও বালিশ ব্যবহার করুন।

ডিভাইসের ব্যবহার কমান: ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে মোবাইল, ল্যাপটপ বা টিভি দেখা বন্ধ করুন। এগুলো থেকে নির্গত নীল আলো মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বাধাগ্রস্ত করে।
ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পরিহার করুন: সন্ধ্যার পর চা, কফি বা অ্যালকোহল পান না করাই ভালো। এসব পানীয় ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।

ব্যায়াম করুন: নিয়মিত ব্যায়াম করলে ঘুমের মান উন্নত হয়, তবে ঘুমানোর আগে ভারী ব্যায়াম না করাই ভালো।
শিথিলায়নের অভ্যাস গড়ে তুলুন: ঘুমানোর আগে বই পড়া, মেডিটেশন করা বা হালকা গান শোনার মাধ্যমে শিথিলায়নের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।

পর্যাপ্ত ঘুম কী

২০১৫ সালে আমেরিকান একাডেমি অব স্লিপ মেডিসিন এবং স্লিপ রিসার্চ সোসাইটি অতীতের কয়েক হাজার গবেষণা প্রবন্ধ পর্যালোচনা করে বিভিন্ন বয়সী মানুষের পর্যাপ্ত ঘুমের সময়সীমার একটি প্রস্তাব তুলে ধরে। সেখান থেকে জানা যায়, ১ থেকে ২ বছর বয়সী শিশুদের ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা এবং ২৬ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমাতে বলা হয়েছে। ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার।

আরএমডি/জিকেএস

Read Entire Article