আলীর (রা.) ন্যায়পরায়ণতা ও এক ইহুদির ইসলাম গ্রহণ

2 days ago 1
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

হজরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) ছিলেন নবিজির (সা.) চাচাতো ভাই, জামাতা ও সাহাবি। তিনি নবিজির (সা.) কাছে প্রতিপালিত হয়েছিলেন এবং তার সন্তানতুল্য ছিলেন। ইসলামের আবির্ভাবের সময় তিনি ৮ থেকে ১১ বছর বয়সী বালক ছিলেন। ওই বয়সেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি নবিজির একজন গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হয়ে ওঠেন।

যে রাতে নবিজি (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পরিকল্পনা করেছিলেন, সে রাতে মক্কার মুশরিকরা নবিজির (সা.) বাড়ি ঘিরে রেখেছিল তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে। নবিজি (সা.) হজরত আলীকে (রা.) নিজের বিছানায় রেখে মুশরিকদের চোখে ধুলো দিয়ে মক্কা ত্যাগ করেন। সকাল পর্যন্ত মুশরিকরা হজরত আলীকে (রা.) নবিজির (সা.) বিছানায় দেখে ভাবছিল নবিজি (সা.) শুয়ে আছেন। সকালে নবিজিকে (সা.) হত্যা করতে উদ্যত হয়ে মুশরিকরা বুঝতে পারে নবিজি (সা.) নন, হজরত আলীই (রা.) সারা রাত তার বিছানায় শুয়ে ছিলেন। এভাবে আলী (রা.) নবিজিকে (সা.) রক্ষা করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নেন।

মদিনায় হিজরতের পর মুসলমানদের বিভিন্ন যুদ্ধে আলী (রা.) অত্যন্ত বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। বদরের যুদ্ধে তিনি মুসলমানদের পাতাকাবাহী ছিলেন। ওহুদের যুদ্ধে মুসলমানরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে তিনি নবিজিকে (সা.) রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। খন্দকের যুদ্ধে তিনি আরবের কিংবদন্তি যোদ্ধা আমর ইবনে আবদে ওয়াদকে পরাজিত করেন যাকে এক হাজার সৈন্যের সমতুল্য মনে করা হতো। খায়বারের যুদ্ধে ইহুদিদের সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গটি আলীর (রা.) নেতৃত্বে বিজিত হয়।

নবিজির (সা.) ওফাতের পর হজরত আবু বকর (রা.) ও ওমরের (রা.) খেলাফতকালে তিনি তাদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শক বা উপদেষ্টা ছিলেন। হজরত ওমর (রা.) শাহাদাতের সময় যাদেরকে পরবর্তী খলিফা নির্ধারণের দায়িত্ব দেন, তিনি তাদের অন্যতম ছিলেন। হজরত ওমরের (রা.) পর হজরত ওসমান (রা.) খলিফা হন। ওসমানের (রা.) শাহাদাতের পর হজরত আলী (রা.) খলিফা হন।

হজরত আলী (রা.) অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন। তার ন্যায়পরায়ণতার বিভিন্ন ঘটনা আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। এখানে আমরা এ রকম একটি ঘটনা উল্লেখ করছি।

একবার আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) তার প্রিয় বর্মটি হারিয়ে ফেলেন। পরে তিনি তা এক ইহুদির হাতে দেখতে পান, যে তা বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে গিয়েছিল। আলী (রা.) বর্মটি দেখে চিনে ফেলেন। তিনি ইহুদিকে বলেন, এটা আমার বর্ম, অমুক জায়গায় সম্ভবত আমার উট থেকে পড়ে গিয়েছিল। ইহুদি তা অস্বীকার করে এবং একজন বিচারকের কাছে বিষয়টি নিষ্পত্তির দাবি জানায়। আলী (রা.) তার দাবি মেনে নেন।

সে অনুযায়ী তারা উভয়ে বিচারপতি শুরাইহের (রহ.) কাছে উপস্থিত হন। শুরাইহ আলীকে (রা.) বলেন, আমিরুল মুমিনিন, আমি আপনার সত্যবাদিতায় সন্দেহ করি না, কিন্তু বিচারে আপনার দাবি সত্য প্রমাণ করতে আপনাকে দুজন সাক্ষী উপস্থিত করতে হবে যারা সাক্ষ্য দেবে যে বর্মটি আপনার। আলী (রা.) নিজের মুক্তিপ্রাপ্ত দাস কানবার ও ছেলে হাসানকে সাক্ষী করতে চান। বিচারক শুরাইহ বলেন, বাবার পক্ষে ছেলের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়।

হজরত আলী (রা.) মনে করতেন, বাবার পক্ষে ন্যায়নিষ্ঠ ও সত্যবাদী ছেলের স্বাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তিনি বলেন, সুবহানাল্লাহ! জান্নাতি একজন ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়? আপনি কি জানেন না আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, হাসান ও হোসাইন জান্নাতি যুবকদের নেতা! কিন্তু শুরাইহ তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন যে তিনি বাবার পক্ষে ছেলের সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন না।

হজরত আলীর (রা.) পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার মতো আর কেউ ছিল না যে জানতো বর্মটির মালিক তিনি। তিনি ইহুদির দিকে ফিরে বলেন, বর্মটি নিয়ে যান, আমার আর কোনো সাক্ষী নেই।

ইহুদি তার এই ন্যায়পরায়ণতায় বিস্মিত ও মুগ্ধ হয়। সে বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে এটি আপনার বর্ম, হে আমিরুল মুমিনিন! আপনি আমাকে আপনারই নিয়োগকৃত বিচারকের কাছে নিয়ে এলেন আর বিচারক আপনার বিরুদ্ধে আমার পক্ষেই রায় দিলেন! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) তাঁর রাসুল।

শুরাইহ (রহ.) ও আলীর (রা.) সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতায় মুগ্ধ হয়ে ইহুদি ইসলাম গ্রহণ করে।

ওএফএফ/জেআইএম

Read Entire Article