ইউজিসিতে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি, কর্মকর্তার কক্ষে যাওয়া ‘মানা’

4 hours ago 1
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ভবনে সাংবাদিকদের প্রবেশে হঠাৎ ‘অলিখিত’ কড়াকড়ি আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ। ভবনে প্রবেশের আগে যার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, তার আগাম অনুমতি নেওয়া লাগবে। অনুমতি মিললেও আবার সেই কর্মকর্তার কক্ষে যাওয়া যাবে না। কর্তৃপক্ষ একটা খোলা জায়গা নির্ধারণ করে দেবেন, সেখানে বসে কথা বলতে হবে।

সম্প্রতি ইউজিসি কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সৈয়দ আশ্রাফুজ্জামান। তবে তার কাছে কোনো লিখিত আদেশ নেই। মৌখিকভাবে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান ও সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম এ আদেশ দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

তবে সচিব ফখরুল ইসলাম এমন আদেশ দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন। অবশ্য আদেশের কথা স্বীকার করেছেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন।

ইউজিসির কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে জানান, সম্প্রতি ইউজিসি সচিবসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও গণঅভ্যুত্থানে তাদের ভূমিকা নিয়ে গণমাধ্যমে একের পর এক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ফলে সাংবাদিকদের তথ্য পাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতেই কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে, সাংবাদিক প্রবেশে এমন কড়াকড়ি আরোপ করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষা বিটে কর্মরত সাংবাদিকরা। ঠিক কী কারণে এমন কড়াকড়ি তা বুঝতে পারছেন না তারা। বিষয়টি নিয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যানের পদক্ষেপ চেয়েছেন তারা।

শিক্ষা বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ইরাব) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসিফ হাসান কাজল। তিনি দৈনিক জনকণ্ঠে কর্মরত। ইউজিসিতে প্রবেশে বাধার মুখে পড়েছেন তিনি।

আসিফ হাসান কাজল জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারককারী সংস্থা হিসেবে ইউজিসিতে শিক্ষা সাংবাদিকদের সবসময় অবাধে যাতায়াতের সুযোগ ছিল। সম্প্রতি তারা সেখানে সাংবাদিকদের প্রবেশ অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করেছেন। আমি নিজে বাধার মুখে পড়েছি। তাদের এ সিদ্ধান্ত উদ্ভট মনে হয়েছে। এ ধরনের স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বাধা বলে মনে করি।

পদে পদে নিয়ন্ত্রণ আরোপ

ইউজিসিতে রোববার (১৬ মার্চ) সাত কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ চূড়ান্তে শিক্ষার্থীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সংগ্রহের জন্য ভবনে প্রবেশ করতে চাইলে বাধা দেন নিরাপত্তা প্রহরীরা।

তারা জানান, রেজিস্ট্রি খাতায় নাম-পরিচয় লিখতে হবে এবং কোন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলবেন, তা জানাতে হবে। সাংবাদিকরা তখন নিরাপত্তা প্রহরীদের জানান, একজন নয়, সংবাদের প্রয়োজনে একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ করা দরকার।

কিন্তু সেটা সম্ভব নয় জানিয়ে তারা বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তারা ইউজিসির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সৈয়দ আশ্রাফুজ্জামানকে ডাকেন। তিনি সাংবাদিকদের তার কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে আশ্রাফুজ্জামান জানান নতুন নিয়মের কথা।

তার ভাষ্যমতে, ‘নতুন নিয়মে একজন সাংবাদিককে প্রথমে রেজিস্ট্রি খাতায় নাম-পরিচয়, মোবাইল নম্বর, প্রবেশের সময়, কতক্ষণ থাকবেন এবং কার সঙ্গে দেখা করবেন, তা লিখতে হবে। এরপর সেই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলবেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। তিনি সম্মতি দিলে ভবনে প্রবেশের অনুমতি মিলবে।’

এখানেই শেষ নয়। সংবাদকর্মীকে ওই কর্মকর্তার কক্ষে প্রবেশ নিষেধ। তিনি কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত একটি ওপেন স্পেসে (খোলা জায়গা) বসবেন। সেখানে কর্মকর্তা এসে দেখা করবেন। সেই জায়গাটি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায়ও থাকতে পারে বলে জানান ইউজিসির কয়েকজন কর্মকর্তা।

জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান রোববার (১৬ মার্চ) বিকেলে জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্দেশনাটা আমি দিয়েছি, এটা সত্য নয়।’ তবে ইউজিসির প্রশাসনিক সভায় সাংবাদিকসহ সব ধরনের ভিজিটরের প্রবেশের ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

হঠাৎ এমন কড়াকড়ি আরোপের কারণ জানতে চাইলে অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন বলেন, ‘অনেক কর্মকর্তার কক্ষে এক নয়, একাধিক ব্যক্তি এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করেন। কখনও কখনও দেখা যায় বেলা ১১টায় এসে বিকেল ৩টায় বের হচ্ছেন। এতে কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আবার কিছু কাগজও মিসিং (খোয়া গেছে)। সে কারণে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এখনও অর্ডারটি (অফিস আদেশ) হয়নি। দু-একদিনের মধ্যে এ নিয়ে আদেশ হতে পারে।’

তবে বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইউজিসি সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম। সোমবার (১৭ মার্চ) দুপুরে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিকিউরিটি ইনচার্জ কীভাবে, কী বলেছেন; তা জানি না। তবে এমন কোনো আদেশ কিন্তু জারি হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, হচ্ছে; সেটা সত্য। যে নিয়মের কথা বলা হচ্ছে, তাতে সাংবাদিকরা অন্তর্ভুক্ত নয় বলে আমি জানি।’

ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের একজন সদস্য সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখেছেন যে একজন কর্মকর্তার কক্ষে একজন ভিজিটর এসে ৩ ঘণ্টা অবস্থান করেছেন। এখন ৬ ঘণ্টা অফিস। ৩ ঘণ্টা ভিজিটরের সঙ্গে কাটালে অফিস টাইম থাকে কতটুকু? সেজন্য এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সাংবাদিকদের আমরা সবসময় ওয়েলকাম করি। আমার দপ্তরে যেকোনো সময় যেকোনো সংবাদকর্মী আসতে পারবেন, এটুকু আমি বলতে পারি।’

এএএইচ/এমআরএম/জিকেএস

Read Entire Article