ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
• ২০২৬ সালে ই-কমার্সের বাজার হবে দেড় লাখ কোটি টাকার
• ই-কমার্স খাতে ৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান
• ক্যাশ অন-ডেলিভারিতে আস্থা বেড়েছে ক্রেতার
• ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৭৮ প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পণ্য ও সেবা দিচ্ছে
• নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে
একটা সময় ছিল যখন কোনো পণ্য কিনতে সরাসরি মার্কেট বা শপিংমলে যাওয়ার বিকল্প ছিল না। দোকানে গিয়ে দশ রকম পণ্য যাচাই-বাছাই করে কেনাকাটা করতেন ক্রেতারা। কিন্তু সময় বদলেছে। বেড়েছে ব্যস্ততাও। ফলে অনেকের পক্ষেই এখন কয়েক ঘণ্টা সময় নিয়ে মার্কেট বা শপিংমলে যাওয়ার সুযোগ হয় না। এরকম মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তারা ঈদ কিংবা যে কোনো উৎসব ঘিরে ঝুঁকছেন অনলাইনে কেনাকাটায়।
আসন্ন ঈদুল ফিতরেও এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে না। দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই ক্রেতারা কিনতে পারছেন পছন্দের পণ্য। অনলাইনে কেনাকাটায় থাকছে বিভিন্ন রকম মূল্যছাড় বা অফারও। ই-কমার্স সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দিন দিনই অনলাইনে শপিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ক্রেতারা খুব সহজেই পছন্দের পণ্য হাতের নাগালে পাচ্ছেন। এজন্য তাদের কষ্ট করে মার্কেট বা শপিংমলে যেতে হচ্ছে না।
হাসনাহেনা একজন কর্মজীবী নারী। থাকেন রাজধানীর বাসাবো এলাকায়। সারাদিন অফিস শেষ করে বাসায় ফিরে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে মার্কেটে যাওয়ার মতো সুযোগ বা মানসিকতা থাকে না তার। তাই এবার পুরো পরিবারের ঈদের কেনাকাটা করছেন অনলাইনে।
ঘরে বসে অনলাইনে পছন্দের পণ্য অর্ডার দিচ্ছি। তিনদিনের মধ্যে সেসব পণ্য হাতে পেয়ে যাচ্ছি। এতে সময় বাঁচে আর ঈদে মার্কেট-শপিংমলে মানুষের জটলা এড়ানোও সম্ভব হয়।- কর্মজীবী নারী হাসনাহেনা
কথা হলে এই কর্মজীবী নারী জাগো নিউজকে বলেন, আসলে আমাদের মতো যারা কর্মজীবী নারী, অফিস-সংসার সামলে এত সময় থাকে না যে মার্কেটে গিয়ে পছন্দ করে ঈদের কেনাকাটা করবো। তাই ঘরে বসে অনলাইনে পছন্দের পণ্য অর্ডার দিচ্ছি। তিনদিনের মধ্যে সেসব পণ্য হাতে পেয়ে যাচ্ছি। এতে সময় বাঁচে আর ঈদে মার্কেট-শপিংমলে মানুষের জটলা এড়ানোও সম্ভব হয়। ক্যাশ অন-ডেলিভারি হওয়ায় পণ্য পছন্দ না হলে রিটার্ন দেওয়ার সুবিধা তো আছেই।
- আরও পড়ুন
- অথবা ডটকমের নতুন চমক কসমেটিকস-জুয়েলারি পণ্য
- ক্রেতার অপেক্ষায় বিক্রেতা, বোনাসের অপেক্ষায় চাকরিজীবী
- ঈদে বেচাবিক্রির চেয়েও নিরাপত্তা নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা
ঢাকার মতো বড় শহরগুলোতে কোথাও যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভোগান্তি সড়কের যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যাম ঠেলে অনেকে ঈদের কেনাকাটা করতে বের হতে চান না। যে কারণে ঈদের কেনাকাটায় একটি বড় অংশের ক্রেতা এখন অনলাইননির্ভর।
এছাড়া আজকাল অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে সরাসরি দোকান থেকে কেনার অভিজ্ঞতা পাচ্ছেন ক্রেতারা। একটি সিঙ্গেল মার্কেটপ্লেস থেকে হাজার রকমের পণ্যের মধ্য থেকে নিজের পছন্দ করা পণ্য কেনা যাচ্ছে। সেই পণ্য আবার নির্দিষ্ট সময়ে ডেলিভারি পেয়ে যাচ্ছেন ঘরে বসেই।
২০২১ সালে দেশের ই-কমার্সের বাজার ছিল ৫৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকার। বছর ঘুরতেই ২০২২ সালে তা ৬৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছায়। তবে পরবর্তীসময়ে তা কিছুটা নিম্নমুখী ধারায় চলে যায়। বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ই-কমার্সের বাজার প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেট ডটকমের তথ্য বলছে, ২০২৬ সালে দেশের ই-কমার্সের বাজার হবে এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা।
দেশে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি ফেসবুক পেজভিত্তিক ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে, যা এফ-কমার্স বা ফেসবুকভিত্তিক অনলাইন ব্যবসা নামে পরিচিত। এদের বেশিরভাগই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা। বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটির মতো। অথচ পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মাত্র ১ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ ই-কমার্স থেকে পণ্য কেনেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪ অনুসারে, দেশের ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৭৮টি প্রতিষ্ঠান অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিজেদের পণ্য ও সেবা দিয়ে থাকে।
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম পিকাবো ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মরিন তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে এবারের অনলাইনে ঈদের বাজার গত বছরের তুলনায় একটু স্লো। বছরের অন্য সময়ের চেয়ে ঈদের সময় আমরা অনলাইনে সেলে একটা জাম্প আশা করি। সাধারণত আগের মাসের তুলনায় ঈদের মাসে ৪০-৫০ শতাংশ সেলস প্রবৃদ্ধি থাকে। তবে এবছর আমরা দেখছি সেটা তুলনামূলক কম।’
মাঝে ই-কমার্স নিয়ে মানুষের মনে এক ধরনের বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার তারা অনলাইনে কেনাকাটা করছেন। বিশেষ করে ক্যাশ অন ডেলিভারি হওয়ার কারণে মানুষের আস্থা বেড়েছে।- পিকাবো ডটকমের প্রধান নির্বাহী মরিন তালুকদার
রমজানের এখন মাঝামাঝি। চাকরিজীবীদের অনেকে ঈদের বোনাস এখনো হাতে পাননি। ফলে ঈদের কেনাকাটাও জোরেসোরে এখনো জমেনি। ২০ রোজার পর থেকে সব প্ল্যাটফর্মে ক্রেতাদের ভিড় আরও বাড়বে বলে মনে করছেন মরিন তালুকদার।
‘আশা করছি সামনের সপ্তাহে সেই জাম্পটা আমরা দেখতে পারবো। এছাড়া বর্তমান অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ঈদ বাজারের খানিকটা ভাটায় বড় ভূমিকা পালন করেছে’- যোগ করেন ব্যবসায়ী।
ঈদে সাধারণত পোশাকের দোকানগুলোতে সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকে ক্রেতার। যদিও অন্য পণ্যও টুকটাক বেচাবিক্রি হয়। রবিন তালুকদার বলেন, ‘আমরা সাধারণত যেসব পণ্য বিক্রি করি যেমন- মোবাইল ফোন, এসি, টিভি, যা মূলত বিলাসী পণ্যের কাতারে পড়ে। ফলে অনেকে এখন এসব পণ্যের তুলনায় শুধু প্রয়োজনীয় পণ্যের দিকে বেশি নজর দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা মনে করি এটি সাময়িক সময়ের জন্য।’
‘মাঝে ই-কমার্স নিয়ে মানুষের মনে এক ধরনের বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার তারা অনলাইনে কেনাকাটা করছেন। বিশেষ করে ক্যাশ অন-ডেলিভারি হওয়ার কারণে মানুষের আস্থা বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রায় আট বছর ধরে ব্যবসা করছি। শুরু থেকেই একটি বিষয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি, ক্রেতারা যেন আমাদের সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন। এটি সত্যি যে, করোনার সময় অনলাইন ব্যবসা অনেক বেড়েছে। তখন কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটেছে। যার কারণে গোটা ই-কমার্স খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষত ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমাদের চ্যালেঞ্জ সামাল দিতে হয়েছে। যারা শহরতলী বা প্রত্যন্ত এলাকায় থাকেন তাদের মধ্যে এখনো আস্থার অভাব আছে।’
‘আসলে একটা শিল্পের শুরুর দিকে অনেক সমস্যা হয়, যখন কোনো পলিসি না থাকে। আমাদের ডিজিটাল ই-কমার্সের যে পলিসি ছিল সেটা কিন্তু যথাযথভাবে কার্যকর করা হয়নি। ফলে তখন অনেক ক্রেতা প্রতারিত হয়েছেন। আশা করছি ধীরে ধীরে আমরা এটি কাটিয়ে উঠতে পারবো।’
‘আমাদের দেশে কারও তথ্য কেউ শেয়ার করে না। ফলে বাংলাদেশে ই-কমার্স খাতের সঠিক আকার বড় করা কিছুটা কঠিন। তবে এ খাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আড়াই লাখের মতো মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যারা কি না সরাসরি এ খাতের সঙ্গে জড়িত। আর সাপ্লাই চেইন বিবেচনা করলে পাঁচ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।’
এ উদ্যোক্তা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে অনলাইনে কেনাকাটার হার এখনো ২ শতাংশের নিচে। যদিও এটি দিন দিন বাড়ছে। নতুন প্রজন্ম যাদের আমরা জেন-জি নামে অভিহিত করি তারাই অনলাইনের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। কারণ, তারা অনেক বেশি প্রযুক্তিনির্ভর এবং ঝামেলা ছাড়াই ঘরে বসে শপিং করতে পারছেন। ফলে বাড়ছে অনলাইন হাটের চাহিদা।’
ই-কমার্স এখনো বাংলাদেশে নতুন। তবে নিকট ভবিষ্যতে এ খাতের অনেক প্রসার ঘটবে। ব্যবসার পরিধি বাড়বে। আজকের নতুন প্রজন্ম আগামী দিনে আরও বেশি অনলাইনে কেনাকাটায় অভ্যস্ত হবে।- ‘অথবা ডটকম’র জেনারেল ম্যানেজার তানবির হোসেন
রবিন তালুকদারের ভাষ্য, ই-কমার্স ব্যবসা পুরোটাই তরুণদের ফোকাস করে। কারণ, যারা ক্রেতা ও ব্যবসায়ী, তাদের প্রায় সবাই তরুণ। আমাদের টার্গেটেড ক্রেতা হচ্ছে ২০ থেকে ৩৮ বছরের মানুষ। নতুন প্রজন্ম খুবই অ্যাডভান্সড। তারা কোনো পণ্য অর্ডার করার পর দ্রুত ডেলিভারি চায়। তরুণদের এ খাতে আনতে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবসায় যুক্ত করছি।
- আরও পড়ুন
- বাজেটের মধ্যে মিলছে না পছন্দের পোশাক
- ভোক্তার অধিকার লঙ্ঘনের তুলনায় অভিযোগ নগণ্য
- অনলাইনে ঈদের কেনাকাটায় যে ভুল করবেন না
দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের অনলাইন মার্কেটপ্লেস ‘অথবা ডটকম’র জেনারেল ম্যানেজার তানবির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের ব্যবসা কোনো অংশেই খারাপ নয়। প্রতিনিয়ত আমাদের অর্ডারের সংখ্যা বাড়ছে। আগে পণ্য ডেলিভারি নিয়ে কিছুটা অসুবিধা ছিল। পরবর্তীসময়ে নতুন কিছু উদ্যোগ নেওয়ায় আমাদের সেবার মান অনেক বেড়েছে এবং গ্রাহকদের আস্থাও বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অন্য অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোর চেয়ে ‘অথবা ডটকম’ একটু আলাদা। আমাদের কয়েক ধরনের ডেলিভারি সিস্টেম আছে। নিজস্ব ছোট একটা ডেলিভারি টিম আছে। এছাড়া আমরা তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমেও পণ্য ডেলিভারি দিই।’
‘পাশাপাশি আমাদের অজস্র শোরুম যেমন- বেস্ট বাই, ডেইলি শপিং ইত্যাদি জায়গায় যদি পণ্য থাকে আমরা সরাসরি সেখান থেকে ডেলিভারি দিই। যদি বড় পণ্য হয় যেমন টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি তাহলে আমরা কাছাকাছি কোনো ডিস্ট্রিবিউটর বা ওয়্যারহাউজ থেকে সরাসরি ক্রেতার কাছে পাঠিয়ে দিই।’
তানবির হোসেন বলেন, ‘আসলে অনলাইন ক্রেতাদের পছন্দ আর সরাসরি ক্রেতাদের পছন্দ কিন্তু এক নয়। দেখা যায় যে কোনো পণ্য ফিজিক্যাল শপে বেস্ট সেলার, কিন্তু অনলাইনে সেটি কেউ কিনছেন না। অনলাইনে আবার অন্য কোনো পণ্য বেস্ট সেলার হতে পারে। আমরা নতুন নতুন প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে এটি আরও বেশি ইন্টারলিংক করার চেষ্টা করছি। অথবা ডটকম ক্রেতাদের সঙ্গে কমিটমেন্ট রক্ষার চেষ্টা করছে। ফলে ক্রেতাদের আস্থাও দিন দিন বাড়ছে।’
‘ই-কমার্স এখনো বাংলাদেশে নতুন। তবে নিকট ভবিষ্যতে এ খাতের অনেক প্রসার ঘটবে। ব্যবসার পরিধি বাড়বে। আজকের নতুন প্রজন্ম আগামী দিনে আরও বেশি অনলাইনে কেনাকাটায় অভ্যস্ত হবে’- এমটিই আশা ‘অথবা ডটকম’র এ কর্মকর্তার।
এসআরএস/এমকেআর/এএসএম