কত নম্বরে ব্যাটিং উপভোগ করতেন মাহমুদউল্লাহ, জানালেন আশরাফুল

5 hours ago 2
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

বেশি সময় মিডল ও লেট অর্ডারে ব্যাট করায় সবাই তাকে লেট মিডল অর্ডার ব্যাটার হিসেবেই চেনে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে এমনভাবে চেনার কারণও আছে। ২৩৯টি ওয়ানডে ম্যাচের ১৪৮ টিতে ৬ (৭৫ টি) ও ৭ নম্বরে (৭৩টি) ব্যাট করেছেন তিনি। এছাড়া ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সর্বাধিক (২২০১) ও দ্বিতীয় সর্বাধিক (১৬৬৩) রানও এই দুই পজিশনেই।

শুনে অবাক হবেন, সংখ্যায় কম হলেও পজিশনকে মানদণ্ড ধরলে মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সেরা ও সফল ব্যাটিং পজিশন হলো চার নম্বর। এ পজিশনে মাত্র ২০ ম্যাচে অংশ নিয়ে তিনি করেছেন ৭৭০ রান। গড়ও (৫১.৩৩) সবচেয়ে ভালো। এসব ম্যাচে দুটি সেঞ্চুরি ও ৬টি হাফসেঞ্চুরিও আছে তার।

এক সময়ের সহযোদ্ধা মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, ৭ ও ৮ নম্বরে খেলতেই পছন্দ করতেন মাহমুদউল্লাহ। নীচের দিকে খেলা উপভোগও করতেন তিনি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বিকেএসপিতে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ শেষ করে ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাবের হেড কোচ আশরাফুল বলেন, ‘ব্যাটসম্যান হিসেবে শেষের দিকে ব্যাটিং সে (মাহমুদউল্লাহ) উপভোগ করতো। ওই জায়গায় খেলতেই পছন্দ করতো বেশি। সে খুব ঠান্ডা মাথায় থাকতো। একদম শীতল মস্তিষ্কে সব নিয়ন্ত্রণ করেছে। ব্যাটিংয়ের মতোই ধীরস্থির ছিল তার চলাফেরা। কঠিন জায়গায় অনেক সফল পারফরমার রিয়াদ।’

মাহমুদউল্লাহকে আশরাফুলের প্রথম মনে ধরে বর্তমান শতাব্দীর প্রথম দিকে। তখনও টেস্ট-ওয়ানডে কোনোটাতেই অভিষেক হয়নি ডানহাতি অলরাউন্ডারের।

স্মৃতিচারণ করে আশরাফুল বলেন, ‘২০০৪ সালের দিকে ঢাকা স্টেডিয়ামে দেশি ও বিদেশি ক্রিকেটার নিয়ে কর্পোরেট লিগ হয়েছিল। সেই আসরের ফাইনালে তরুণ রিয়াদ খুব ভালো খেলেছিল। আমাদের বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক রাজ ভাইয়ের সঙ্গে রিয়াদের একটি ভালো জুটিও আছে। সেটা আমার খুব মনে আছে। এরপর ২০০৭ সালে কলম্বোয় আমার অধিনায়কত্বেই রিয়াদের ওয়ানডে অভিষেক হয় শ্রীলঙ্কর বিপক্ষে।’

মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ারকে অসাধারণ আখ্যা দিয়ে আশরাফুল বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষে অসাধারণ ক্যারিয়ার রিয়াদের। ৭-৮ নম্বরে ব্যাটিং করে একাধিক সেঞ্চুরিও আছে। টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে সম্ভবত ৮ নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি আছে তার। বেশির ভাগ ভালো ইনিংস পরে (লোয়ারঅর্ডার) নেমেই।’

আইসিসি ইভেন্টে মাহমুদউল্লাহর সাফল্য উল্লেখ করে আশরাফুল বলেন, ‘সে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ সেঞ্চুরিয়ান ২০১৫ সালে। তখন ৪ নম্বরে খেলেছে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করলো। এরপর ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো শতক। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আবারও সেঞ্চুরি। সব মিলে আইসিসি ইভেন্টে ৪টি সেঞ্চুরির আছে রিয়াদের। বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটারের আইসিসি ইভেন্টে এত শতক নেই। ইতিহাস সাক্ষী, রিয়াদ আইসিসি ইভেন্টে অনেক ভালো করেছে।’

মাহমুদউল্লাহর অবসরটা সঠিক সময় হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আশরাফুল বলেন, ‘ফিনিশিংটা ঠিক আছে। সঠিক সময়েই নেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপের সময় নিলে আরও ভালো হতো। যদিও তারপর আরও এক বছর খেলেছে রিয়াদ। ওই সময়ে তার টানা ৪ ফিফটি ছিল। সেটা তার ক্যারিয়ারকে করেছে সমৃদ্ধ।’

আশরাফুলের অনুভব, মাহমুদউল্লাহ টেস্ট ক্রিকেটও ছেড়েছে বাঘের মতো। শেষ ইনিংসে হার না মানা দেড়শো রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন।

সহযোগী ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ সম্পর্কে আশরাফুলের শেষ কথা, ‘আসলে ৬ থেকে ৮ নম্বর পজিশন রিয়াদই একমাত্র অ্যাডজাস্ট করে ফেলেছিল। আমাদের দেশের আর কোনো ব্যাটার ওই পজিশনে ভালো খেলেনি। রিয়াদের মতো ওত ভালো রেকর্ডও নেই কারো।’

২০১১ সালে চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামে ইংলিশদের বিপক্ষে বিশ্বকাপের একটা ম্যাচ জিতেছিলাম রান তাড়া করে (টার্গেট ছিল ২২৬)। আমার খুব মনে পড়ে ওই খেলাটির কথা। সেখানে পেসার শফিউল ইসলাম একটা বড় (২৪ বলে ২৪*) পার্ট ছিল। কিন্তু পার্টনার ছিলেন ৭ নম্বরে উইকেটে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ (৪২ বলে ২১*)।’

‘ওই ম্যাচে ১৬৯ রানে ৮ উইকেট পতনের পর বাংলাদেশের দরকার ছিল ৫৭ রানের। ওই ম্যাচ আর কোনো উইকেট না হারিয়ে জিতে যায় বাংলাদেশ। রিয়াদ আর শফিউল জুটি নবম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থেকে ওই রান তুলে দল জিতিয়ে দেন। বাংলাদেশের একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে থেকে ম্যাচ জিতিয়ে বিজয়ীর বেশে সাজঘরে ফেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন রিয়াদ’- যোগ করেন আশরাফুল।

এআরবি/এমএইচ/জিকেএস

Read Entire Article