ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছে। জুলাইয়ের ১৬ তারিখের পর থেকে যখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ফেইসবুকে ওপেন পোস্ট দিয়ে পদত্যাগ করে আন্দোলনে জয়েন করা শুরু করল। তখন আপনারা হাজার হাজার লাইক কমেন্ট করলেন। আর মনে মনে ভাবলেন, ছেলে/মেয়েগুলো কতই না সাহসী, যেই কাজ করছে। যদি আন্দোলন থেমে যায়, তাহলে কি হবে ওদের!
আপনারা এতই বাহবা দিচ্ছিলেন যে, আমার ছাত্রলীগে কোনো পোস্ট-পদবি না থাকায় আপসোস হচ্ছিল। থাকলে তো ফেইসবুকে পদত্যাগ করতে পারতাম। তখন কেন এত বাহবা দিলেন? তখন যারা পদত্যাগ করেছেন, তাদের বললেন না কেন পদত্যাগ করেছো, তো কি হয়েছে? তুমি ছাত্রলীগ করতে, তুমি আন্দোলনে আসতে পারবে না। আন্দোলনে আসলে তোমাকে প্রতিহত করা হবে।
আপনারা সারজিস আলমের মতো পোস্টড ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আন্দোলনে আসলেন। তখন তো ভাবলেন না, এ তো দোসর, এজেন্ডা বাস্তবায়নকারীও হতে পারে। সে যেখানে, আমরা সেখানে যাব না।
ময়মনসিংহে ছাত্রলীগের মিছিলের ছবি আছে, শহীদ সাগর বা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছাত্রলীগের মিছিলের ছবি আছে। আরো এমন শত শহীদের কবরের পাশে গিয়ে ছবি তুললেন আবার দাবি করলেন, জুলাই বিপ্লবের সকল শহীদদেরই নিজেদের শহীদ বলে মনে করি।
এক কাজ করেন— এখন দাবী করেন ছাত্রলীগের সঙ্গে যে শহীদদের ছবি পাওয়া যাবে, তাদের যেন গ্যাজেটেড শহীদ লিস্ট থেকে বাদ দেওয়া হয়। কারণ ওয়ান্স এ ছাত্রলীগ অলয়েজ এ ছাত্রলীগ, শহীদ হওয়ার পরও সে ছাত্রলীগ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আমি যদি আজ মারা যেতাম— তাহলে হয়ে যেতাম আপনাদের শহীদ। আর এখন গাজী হিসেবে বেঁচে আছি বলে আপনাদের দৃষ্টিতে হয়ে আছি দোসর, এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী, দালাল, চাটুকার ইত্যাদি হিসেবে।
সাদিক কাইয়ুম পোস্টেড অ্যাক্টিভ ছাত্রলীগ থেকে বেরিয়ে হয়ে যেতে পারে আপনাদের ইমাম। আর আমার না আছে পোস্ট পদবি, না আছে পদবির জন্য একটা সিভি। তবুও ছাত্রলীগই থেকে গেলাম!
আমার চোখে দেখা অ্যাক্টিভ ছাত্রলীগ হয়ে কোনো আন্দোলন না করে, ইভেন আন্দোলনের পক্ষে পোস্ট না দিয়ে, ৫ আগস্টে হাসিনা পালানোর পর পতাকা বেঁধে লাঠি নিয়ে বেরিয়ে, স্বাধীন লিখে হয়ে গেল আপনাদের দলের বিরাট নেতা, বিরাট দায়িত্বশীল।
সমস্যা কোথায়? হ্যাঁ, সমস্যা আছে। সেটা হলো আমরা আপনার দলে না যোগ দিয়ে, নিজেরাই যেই স্বপ্ন নিয়ে আন্দোলন করছিলাম, সেই স্বপ্নের একটি দল গঠন করতে চাচ্ছি।
মনে রাখবেন, যে ছেলে-মেয়ে ওইদিন ছাত্রলীগের আন্ডারে থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল, মৃত্যুটা সামনে দেখেই যোগ দিয়েছিল। কারণ আপনারা হয়তো বেঁচে যেতে পারতেন, তারা আপনাদের ততটা চেনে না। কিন্তু ছাত্রলীগের আন্ডারে যারা হলে ছিল, ছাত্রলীগ তাদের ‘কোর্ট মার্শাল’ করতো।
তাদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস হতো না শুধু, বেঁচে থাকাও দুষ্কর হতো। যারা মৃত্যু দেখে এসেছে, তাদের কিসের ভয় দেখান? ট্যাগিং রাজনীতি একদল তো করেছিল, টিকতে কী পেরেছে? এ রাজনীতি যদি আপনারা কন্টিনিউ করেন, আপনারাও টিকতে পারবেন না।
আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি, সেই দিকে আমরা এগিয়েই যাব। কোন ভয়ভীতি আর চক্রান্ত কাজে আসবে না। কারণ আমরা ৫ আগস্টের লং মার্চে মৃত্যুকে দেখে আসা লোক। আর এই ট্যাগিংয়ের ফলে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশীরা আবার খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে গেলে, তার দায় কিন্তু আপনাদের নিতেই হবে।
ছাত্রলীগ ট্যাগিং হাতিয়ার দিয়ে ভিন্নমত দমন করে, নিজেরাই দমন হয়ে গেছে। সেই হাতিয়ার ছাত্রলীগ থেকে নিয়ে, যদি এভাবে ব্যবহার করতে থাকেন— আপনারাও কোন এক দিন দমন হয়ে যাবেন। প্রকৃতি কাউকে ছাড় দেয় না।
তবে সবশেষে আপনাদের আহ্বান জানাই, চলুন যেই আশা নিয়ে ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থান’ আমাদের প্রায় ২ হাজার ভাই-বোন জীবন দিয়েছে—সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা লীগের কালচার- এই ট্যাগিং রাজনীতি থেকে সরে আসি এবং গণঅভ্যুত্থানের প্রতিটা শক্তি আবার সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। একে অপরের যৌক্তিক সমালোচনা করি। একটি ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ গড়ি।
(লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেন্দ্রীয় কার্যনিবার্হী সদস্য, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ)