পেঁয়াজ বীজে লাখোপতি দিনাজপুরের ৫০ চাষি

3 hours ago 2
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

দিনাজপুরের বীরগঞ্জে প্রায় ৫০ জন চাষি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে তারা প্রত্যেকে লাখোপতি হয়ে গেছেন। তবে সফলতা পেলেও উৎপাদিত বীজ বিক্রি নিয়ে প্রতি বছরই পড়তে হয় সিন্ডিকেটের পাল্লায়। এতে কম দামে বীজ বিক্রি করতে বাধ্য হন তারা।

শুধু বীরগঞ্জেই ৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হচ্ছে। অথচ দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে জেলায় কত হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হয় তার কোনো তথ্য নেই।

পেঁয়াজের সাদা কদম শুকিয়ে বের হয় কালো বীজ, যার বাজারদর আকাশ ছোঁয়া। তাই এ বীজকে বলা হয় কালো সোনা। দিন দিন এই কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজের আবাদ বাড়ছে বীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বৈরবাড়ী পাঠানপাড়া গ্রামে। এ গ্রামসহ আশেপাশের এলাকায় প্রায় ৫০ জন কৃষক পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করছেন।

বৈরবাড়ী পাঠানপাড়ার শহিদুল ইসলাম ও তার ভাই নুরুল ইসলামের পেঁয়াজ বীজ ক্ষেতে দেখা যায়, ২৫-৩০ জন নারী-পুরুষ ফুল নেড়ে নেড়ে পরাগায়নে ব্যস্ত। সেখানে কথা হয় সফল ভাবে বীজ উৎপাদনকারী দুই ভাইয়ের সঙ্গে।

বড় ভাই শহিদুল ইসলাম জানান, গত ১৫ বছর ধরে তিনি পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করে আসছেন। লাভবান হওয়ায় প্রতি বছর কিছু কিছু জমিতে উৎপাদন বাড়ান। তিনি এবার ৩ একর জমিতে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করছেন। এ ছাড়া এমদাদুল, বাতেন, মাসুম এরকম ৫০ জন কৃষক জমিতে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করছেন।

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর ফরিদপুর থেকে বীজ উৎপাদনের জন্য চারা পেঁয়াজ (বাল্প) প্রতি কেজি ১৭৫ টাকা হিসেবে ৮০ মণ কিনে নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে ৩ একর জমিতে রোপণ করি। সেই থেকে জমিতে পরিচর্যা চলছে। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়, তাহলে আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে বীজ ঘরে তুলবেন। সে পর্যন্ত খরচ হবে প্রায় ১১ লাখ টাকা।’

শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি একরে বীজ উৎপাদন হবে ৪৬৯ কেজি। যা ২ হাজার টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হবে ৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। সেই হিসেবে ৩ একর জমিতে প্রায় ১ হাজার ৪০৭ কেজি বীজ উৎপাদন করতে পারবো। যা বিক্রি হবে ২৮ লাখ ১৪ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে লাভ প্রায় ১৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা।’

আরও পড়ুন

তিনি আরও বলেন, ‘যদি বীজগুলো সরকারিভাবে বিএডিসি কিনতো, তাহলে আমরা ন্যায্যমূল্য পেতাম। আরও বেশি লাভবান হওয়া যেত। এতে দিনাজপুরের কৃষকেরা আরও বেশি করে বীজ উৎপাদন করতেন।’

আরেক ভাই নুরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছর বীজ উৎপাদন করে সিন্ডিকেটের পাল্লায় পড়তে হয়। ফরিদপুর, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ জেলার পাইকাররা এসে হোটেলে বসে দাম নির্ধারণ করেন। এতে আমরা বাধ্য হয়ে তাদের কাছে উৎপাদিত বীজ বিক্রি করি। তারা আমাদের কাছ থেকে বীজ কিনে ফরিদপুরে বিএডিসির কাছে বিক্রি করেন। বীজ নেওয়ার সময় কম দামে নেন। চারা পেঁয়াজ দেওয়ার সময় দাম বেশি নেন। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। কৃষি বিভাগ কোনো খবর নেয় না। দিনাজপুর বিএডিসি যদি আমাদের কাছ থেকে সরাসরি কিনতো, তাহলে আমরা আরও লাভবান হতে পারতাম।’

নারী শ্রমিক সুমিত্রা রায় জানান, তারা নভেম্বর মাস থেকে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের ক্ষেতে কাজ করছেন। তারা চার-পাঁচ মাস প্রতিদিন কাজ পান। সে কারণে তারা চান পেঁয়াজ বীজ উৎপান বাড়ুক।

মমতা রানী বলেন, ‘এখন অফ সিজন। এলাকায় পেঁয়াজ উৎপাদন হওয়ায় প্রতিদিন কাজ করতে পারছি। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় সহায়ক। এই এলাকায় ৫০ জন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনকারীর ক্ষেতে প্রায় ১ হাজার নারী শ্রমিক কমবেশি ৪ মাস কাজ করেন। পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হওয়ায় এলাকায় বেকার নারী নেই বললেই চলে।’

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে বীরগঞ্জে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ হেক্টর জমিতে। অর্জন হয়েছে ১৫১ হেক্টর জমিতে। বীজের আবাদ হয়েছে ৮ হেক্টরের বেশি জমিতে।

বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ী, শিবরামপুর ও পাল্টাপুর ইউনিয়নের উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজ গুণ ও মানে অন্যতম। বীরগঞ্জ উপজেলায় পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে কৃষক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।’

জেলার লক্ষ্যমাত্রা জানতে চাইলে অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামান বলেন, ‘জেলায় পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের কোনো লক্ষ্যমাত্রা নেই। এই জেলায় তেমন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হয় না। তবে বীরগঞ্জের কথা আমরা শুনেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে তদারকি করবো। কৃষকের সমস্যাগুলো সমাধানের ব্যবস্থা করবো।’

এমদাদুল হক মিলন/এসইউ/এমএস

Read Entire Article