ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
মুড়িকাটা পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হলেও হতাশায় দিন কাটছে মানিকগঞ্জ জেলার পেঁয়াজ চাষিদের। এ বছর পেঁয়াজের দাম আশানুরূপ না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকের।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর পেঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছরও জেলার চাষিরা লাভের আশায় ঋণ করে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। উৎপাদনও ভালো হয়েছে। তবে বাজারে দাম কম থাকায় তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এখন ঋণের টাকা পরিশোধ করার দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন তারা।
কৃষকেরা বলছেন, চলতি বছরে বিঘাপ্রতি পেঁয়াজ চাষে তাদের খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। রোপণের জন্য গুটি পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে ২০-২৫ হাজার টাকা মণ দরে। এখন সেই উৎপাদিত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১১০০-১২০০ টাকা মণে। এতে উৎপাদন খরচের অর্ধেক টাকা ওঠানোই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
জেলার পেঁয়াজের হাট ঝিটকা ও বাঠইমুড়ী ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা মুড়িকাটা পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি করছেন ১১০০-১২৫০ টাকা মণ। অথচ এক সপ্তাহ আগেও এ দাম ছিল ১৬০০-১৭০০ টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে জেলায় পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে ৭ হাজার ৫৬৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হালি পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে ৪ হাজার ১৪৯ হেক্টর জমিতে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে ৩ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে। জেলার হরিরামপুর, শিবালয় ও ঘিওর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ চাষ করা হয়।
বাঠইমুড়ী গ্রামের কৃষক তুরাব আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছর ৪০ শতাংশ জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করে আমার উৎপাদন খরচ উঠে লাভ হয়েছিল প্রায় দেড় লাখ টাকা। এ বছর বেশি লাভের আশায় ৮০ শতাংশ জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করেছি। তাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। ক্ষেতের অর্ধেক পেঁয়াজ ওঠানো হয়েছে। বাকি পেঁয়াজ উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করে ১ লাখ টাকা হাতে পাবো কি না বুঝতে পারছি না। এ বছর পেঁয়াজ চাষে অনেক লোকসান হয়ে গেলো।’
উভাজানী গ্রামের কৃষক রতন জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছর পেঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর ঋণ করে ৪ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। যেভাবে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমছে, মনে হয় ২ লাখ টাকাও আসবে না। এখন ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো সেই চিন্তায় আছি। এ বছর পেঁয়াজে যে ধরাটা খেলাম, আগামী ৫ বছর এর জের টানতে হবে।’
পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা বাল্লা গ্রামের কৃষক আজমত উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম ভালো ছিল। এ আশায় এবার পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। হাটে পেঁয়াজ এনে হতাশ। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজারদর কমিয়েছে। এই পেঁয়াজ কিনে ঢাকায় নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করছেন। আমাদের মতো কৃষকদের অবস্থা ভয়াবহ খারাপ।’
পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শরিফ সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত কয়েকদিনে মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম ব্যাপকভাবে কমে গেছে। কিছুদিন আগেও ১৭০০-১৮০০ টাকা মণে যে পেঁয়াজ কিনেছিলাম; বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এখন ১১০০-১২০০ টাকা মণে নেমে এসেছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন জেলার কৃষকেরা। তবে মুড়িকাটা পেঁয়াজে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় এ জাতের পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। তাই সব পেঁয়াজ একসাথে বাজারে আসায় দাম কম পাচ্ছেন কৃষক।’
এসইউ/জিকেএস