বিমা খাতে গভর্নেন্সের ‘জি’-ও নেই: এনবিআর চেয়ারম্যান

8 hours ago 5
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

বিমা খাতে সুনামের অভাব আছে জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, এ খাতে গভর্নেন্সের (সুশাসন) ‘জি’-ও নেই।

সোমবার (১৭ মার্চ) আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে প্রাক বাজেট আলোচনায় এ কথা বলেন মো. আবদুর রহমান খান।

এনবিআর চেয়ারম্যান বিমা খাতে অব্যবস্থাপনার উদাহরণ দিয়ে বলেন, অনেক বছর আগে আমার কাছে একজন সাংবাদিক আসলেন। তিনি জানালেন একজন বিমা কোম্পানির কর্মকর্তা বাসায় থাকতে পারছেন না। গ্রাহকের পলিসি ম্যাচুরড হওয়ার পর কোম্পানি টাকা দিচ্ছে না। এই হলো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অবস্থা। এটাই সত্য। উন্নয়ন সহযোগীরা দেশের বিমাকে প্রমোট করতে বলছে। কিন্তু এসব কারণে এটা আগায় না। 

এ সময় বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি সাঈদ আহমেদ।

সংগঠনটি করপোরেট কর হ্রাস করা, স্বাস্থ্যবিমার ওপর ট্যাক্স কর্তন রহিত করা এবং অনলাইনভিত্তিক বিমা প্রিমিয়ামের ওপর ভ্যাট ও করপোরেট কর বাতিলের প্রস্তাব জানিয়েছে।

উন্নত দেশের মতো বিমা কোম্পানিগুলোর হেলথ কার্ডের প্রচলন করতে না পারার সমালোচনা করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, হেলথ ইন্স্যুরেন্স ভালোভাবে দিতে পারলে বাংলাদেশের মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়বে।

এ সময় বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডে, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনগুলো পুঁজিবাজারে কর অব্যাহতিরও প্রস্তাব দেয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সারাজীবন কর অব্যাহতি দিলাম, রেজাল্ট তো আসে না। আগেই কেন অব্যাহতির কথা আসে? সবার আগে কেন ট্যাক্স হলিডে লাগবে? কর অব্যাহতির সংস্কৃতিতে আর থাকতে চাই না। আমাদের বদনাম হয়ে গেছে যে, রাজস্ব যা আদায় করি, তার সমপরিমাণ অব্যাহতি দেই।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে যত সুবিধা দেওয়া হয়েছে, মার্কেটে তার বেনিফিট পাওয়া যায়নি। গত ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে যারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন তাদের ৭ থেকে ১৫ শতাংশ ক্যাপিটাল হারিয়েছেন। আমরা অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বের হচ্ছি। আমরা পণ করেছি অব্যাহতি আর দিব না। অব্যাহতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি।

স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ লেনদেন থেকে কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি কর্তৃক মূলধনী মুনাফার ওপর সম্পূর্ণ কর অব্যাহতি চেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি।

এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের কাছ থেকে উৎসে কর সংগ্রহের হার কমানো, উৎসে লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর কমানো এবং চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করা এবং তালিকাভুক্ত বন্ড থেকে অর্জিত আয় বা সুদের ওপর কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ তাদের বাজেট প্রস্তাবনায় লভ্যাংশ করের ওপর দ্বৈত করের বিধান প্রত্যাহার করে লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত করা, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রদেয় করহারের ব্যবধান কোন ধরনের শর্ত ছাড়া ১০ শতাংশ করা, নির্ধারিত বার্ষিক মোট নগদ ব্যয় ও বিনিয়োগের সীমা ৩৬ লাখ টাকার জায়গায় মোট ব্যবসায়িক টার্নওভারের ১০ শতাংশ করা, এসএমই ও এটিবি-এ তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহকে তালিকাভুক্তির প্রথম তিন বছরের জন্য কর অব্যাহতি দেওয়া এবং করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে।

এছাড়া ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ মূলধনী আয়ের ওপর করহার ১৫ শতাংশের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।

এর পাশাপাশি অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) ভ্যাট সফটওয়্যারের বাস্তবায়ন, ঝণ অ্যাকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ড অ্যাকাউন্টের ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার, মূসক নিরীক্ষা কার্যক্রম সমাপ্তির সময় সুনির্দিষ্ট করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

তাদের অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অনিবাসীকে ঋণের সুদ পরিশোধের সময় উৎসে আয়কর কর্তনের ক্ষেত্রে আগের মতো ন্যায় অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানো, ব্যাংকের কর্পোরেট আয়করের হার ৩০ শতাংশ কমানো এবং সব তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য অভিন্ন কর্পোরেট করের হার প্রণয়ন করা, ব্যাংকে মেয়াদী আমানতের হিসাব খোলা ও বহাল রাখা, ঋণ বিতরন ও ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করার ক্ষেত্রে পিএসআর দাখিলের বাধ্যবাধকতার বিধান প্রত্যাহার করে আগের মতো ই-টিন দাখিলের বিধান পুনর্বহাল করা, ব্যাংকগুলোকে দ্বৈত কর (ডাবল ট্যাক্সেশন) চুক্তিতে বর্ণিত করহার প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পারকুইজিট বাবদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অনুমোদিত সীমা প্রত্যাহার অথবা বাড়ানো ইত্যাদি।

আলোচনা সভায় মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট করহার ২৫ শতাংশ করা, স্টক লভ্যাংশের ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহার করা, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ভ্যাটের হার কমিয়ে ১০ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন।

আলোচনায় এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

এসএম/এএমএ

Read Entire Article