ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
প্রায় ৬১.৩ শতাংশের মুসলিম অধ্যুষিত মালয়েশিয়ার ধর্ম ও সংস্কৃতি নানা বৈচিত্র্যময়। ধর্ম, সংস্কৃতি ও জাতিগত বৈচিত্র্যের মধ্যে মালয়েশিয়ানদের ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন অত্যন্ত দৃঢ়। রমজানে এই বন্ধন আরও স্পষ্ট হয় তাদের। মালয়েশিয়ান ভাষায় ‘পুয়াসা’ মানে রোজা। রমজানের আগমনি বার্তা সবার কানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পালন করা হয় ‘শাহরুন মোবারাকুন’। সাইরেনের শব্দ ও ‘শাহরুন মোবারাকুন’ বলে অভিবাদন জানিয়ে এবং উপহার বিনিময় করে শুরুতেই ভ্রাতৃত্ব বন্ধনকে মজবুত করে নেয় মালয়েশিয়ানরা।
সরকার এবং ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীতে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয় রমজানে। ক্রেতাদের জন্য আকর্ষণীয় ছাড় ঘোষণা করে শপিংমলগুলো। রোজার দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়ে যায় কেনাকাটার ধুম।
বছরজুড়ে নানা খাবারের আয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে ভোজনরসিক মালয়েশিয়ানদের রমজানেও থাকে চমক। চাই বাহারি ইফতার। তাই মালয়েশিয়াজুড়ে চলে তাদের চষে বেড়ানো। বাহারি স্বাদের ইফতারে এবারও নগরবাসীকে টানছে মারদেকায়। মাসজুড়ে বসে রামাদান মেলা।
ধনী-গরিব সবাই এক সঙ্গে বসে ইফতার করছেন মারদেকা মাঠে। ছবি/সংগৃহীত
সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজানকে ঘিরে প্রতি বছর থাকে মারদেকা মাঠে বিশেষ আয়োজন। আর এ ইফতারির স্বাদে মন ছুটে মারদেকায়। শুধু মারদেকাই নয় রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে শুরু করে সব প্রদেশেই মাহে রমজানে থাকে বিশেষ আয়োজন এবং সরকারি ও বেসরকারিভাবে আয়োজন করা হয় ফ্রি ইফতারের ব্যবস্থা। ফ্রি ইফতার ধনী-গরিব সবাই এক সঙ্গে বসে ইফতার করেন। রমজান আসলেই মারদেকায় প্রতি শনি ও রোববার এ মাঠে হাজার হাজার মানুষ এক সঙ্গে বসে ইফতার করেন। এ যেন আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার বড় আয়োজন।
২২ মার্চ শনিবার, প্রবাসী বাংলাদেশি দেলোয়ার হোসেন খান, মোরশেদ আলম সুমন, শেখ রাসেল, মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ, রাশেদুল ইসলাম, সাগর, রেজওয়ান, সোহাগ, ইমরান, নায়েম ১১ বন্ধু সিদ্ধান্ত নেন মারদেকা মাঠে ইফতার করবেন। তাদের সঙ্গে সাড়া দেন আরও ককেজন বন্ধু। সবাই এক সাথে স্থানীয়দের সঙ্গে শামিল হন মারদেকা মাঠের ইফতারে।
একসাথে ইফতার করার অনুভূতি জানতে কথা হয় প্রবাসীদের সঙ্গে। তারা একবাক্যে বলে ওঠেন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে মিলিত হয়েছি। তবে ইফতার সামনে নিয়ে বসতেই দেশে থাকা বাবা-মা, ভাই-বোনসহ পরিবারের সবার কথা মনে পড়ে যায়।
মারদেকা মাঠে, স্থানীয়দের সাথে ইফতার করছেন একঝাঁক তরুণ প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ছবি/সংগৃহীত
প্রবাসী সুমন বলেন, প্রবাসে হাজার কিছু দিয়ে ইফতার করলেও মন পড়ে থাকে দেশে। এ সময় পরিবারের সবাই কী দিয়ে ইফতার করছেন তা জানি না তবে দেশে থাকতে ঠিক এ সময় আব্বা বাইরে থেকে কত কিছু নিয়ে আসতেন। মা অনেক যত্ন করে ইফতার বানাতেন। এখন প্রবাসে ইফতার নিয়ে বসে খুঁজে বেড়াই তাদের। মা-বাবা, ভাই-বোনকে আমি অনেক মিছ করছি।
আরও পড়ুন
স্থানীয়রা ইফতার করেন বিভিন্ন প্রকারের হাতে বানানো পিঠা, হালুয়া জাতীয় নাশতা, সাদা ভাত, বিরিয়ানি, ফলমূলসহ মালয়েশিয়ান খাবার দিয়ে। সঙ্গে থাকে আম, তরমুজ, বাঙ্গি, কলা, পেঁপে, আপেল, আঙুর, কমলাসহ নানা রকম মালয়েশিয়ান ফল। এ মাসে বেশ অতিথি পরায়ণ হয়ে ওঠে মালয়েশিয়ানরা।
মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা রমজান পালন করেন অনেকটা দেশীয় আমেজে। মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হওয়ায় রমজানে শ্রমিকদের নামাজ পড়ার ও রোজা রাখার সুযোগ করে দেওয়া হয়। মসজিদগুলোতে বিনামূল্যে ইফতারির সুযোগ থাকে। মসজিদে মসজিদে তারাবির নামাজ পড়া হয়।
মারদেকা মাঠে, স্থানীয়দের সাথে ইফতার করছেন একঝাঁক তরুণ প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ছবি/সংগৃহীত
মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা রমজান মাসে ইফতার করেন দেশীয় খাবার দিয়েই। বাংলাদেশি মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টগুলোতে দেশীয় ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে ইফতারি বানানো হয়। ইফতারিতে খেজুর, জিলাপি, শরবত, জুস, হালিম, ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ, লাচ্চিসহ নানা প্রকারের খাবার রাখা হয়।
বাংলাদেশিরা যেখানে থাকেন সেখানেই একসঙ্গে ইফতার করেন। তাই বাংলাদেশিদের আয়োজনটা বড় হয়। মালয়েশিয়ানরা অভিভূত হয় বাঙালিদের ইফতারির বিশাল আয়োজন দেখে।
রমজান মাসে প্রতিদিন বিকেলে মালয়েশিয়ার মারদেকাসহ প্রায় সব জায়গায় বাজার রমাদান নামে ইফতারি বেচাকেনার মেলা বসে। বাজার রমাদানে বিভিন্ন প্রকারের মালয়েশিয়ান খাবারের সমারোহ ঘটে। তবে এসব খাবার প্রবাসী বাঙালিদের খুব একটা টানে না। ইফতারির আসল আইটেমগুলো তারা বাসায় নিজেরা তৈরি করেন বা বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে আনেন।
মালয়েশিয়ানদের ইফতারিতে ‘বুবুর লেম্বাক’ খাবার। ছবি/সংগৃহী।
রমজানে মুসলমানদের দিনে প্রকাশ্যে খাওয়া মালয়েশিয়ার আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রতি বছর এ অপরাধে আটক হন অনেকে। এছাড়া পুরো রমজানে সরকারি নজরদারিতে জিনিসপত্রের দাম অন্যান্য সময়ের থেকে কম রাখা হয়। এ মাসে মসজিদগুলোতে প্রতি ওয়াক্ত নামাজে মুসল্লির সংখ্যা বেড়ে যায়। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও নামাজ আদায় করতে মসজিদে যায়। নামাজের পরে কোরআন তেলাওয়াত করতে পছন্দ করেন মালয়েশিয়ানরা। মসজিদে মসজিদে ইফতারিতে বিনামূল্যে শরবত ও বুবুর বা নরম খিচুড়ির ব্যবস্থা থাকে।
দেশীয় খাবার ছাড়া ভিনদেশি খাবারে ইফতার জমেনা বাংলাদেশিদের। সুদূর প্রবাসে থেকেও তাই তৃপ্তি মেটাতে ইফতারে বাঙালি খাবার-ই তাদের প্রথম পছন্দ।
এমআরএম/এমএস