রমজানে মুমিন নারীর করণীয় 

4 hours ago 2
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দশক গত হয়েছে। সৌভাগ্যবান তারাই যারা সময়টুকু আল্লাহর ইবাদত, স্মরণ ও তিলাওয়াতের মাধ্যমে মূল্যবান করে তুলতে পেরেছেন। আফসোস তাদের জন্য যারা উদাসীনতায় সময়টুকু কাটিয়েছেন। কেননা রমজান মুমিনের জীবনে শ্রেষ্ঠ সময়। এই মাসকে আল্লাহ বহু পুরস্কার ও দানে ভরপুর করেছেন। তাই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে নেক কাজে অতিবাহিত করা।

ইবাদত, নৈকট্য, পুরস্কার ও প্রতিদানে আল্লাহ নারী ও পুরুষের ভেতর তারতম্য করেননি। এক পুরুষ ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে যতটা পুরস্কার ও প্রতিদান লাভ করতে পারেন, একজন নারীও ঠিক ততটুকুই পুরস্কার ও প্রতিদান লাভ করতে পারেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে ব্যক্তি নেককাজ করবে তাকে আমি নিশ্চয়ই পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কাজের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৯৭)

কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, আমাদের দেশের নারীরা রমজানে ঘরের কাজে এত বেশি ব্যস্ত থাকেন যে, তাদের অনেকেই ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হতে পারেন না। পরিবার-পরিজনের প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে অনেক সময় তাদের ফরজ নামাজ পর্যন্ত ছুটে যাওয়ার উপক্রম হয়। কোনো সন্দেহ নেই, পরিবারের জন্য নারীর শ্রম ও আত্মত্যাগের পুরস্কার আছে, তবে তা কখনোই মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগির সমতুল্য নয়। পরকালে প্রত্যেকেই তার নিজ আমলনামা হাতে নিয়ে উঠবে, সেখানে পরিবার-পরিজন কোনো উপকারে আসবে না, বরং কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতায় মানুষ পৃথিবীর যাবতীয় সম্পর্ক ভুলে যাবে। তাই পরকালীন মুক্তি অর্জনে নারী-পুরুষ সবাইকে আত্মমুখী হতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মহান আল্লাহ বলেন, যখন কিয়ামত উপস্থিত হবে, সেদিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভাই থেকে, তার মা, তার বাবা, তার স্ত্রী ও তার সন্তান থেকে। সেদিন তাদের প্রত্যেকের হবে এমন গুরুতর অবস্থা যা তাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত রাখবে।’ (সুরা আবাসা, আয়াত : ৩৩-৩৭)

সেই ভয়াবহ দিনে মানুষ দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যাবে : এক যারা নেক আমলের মাধ্যমে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছে। তারা থাকবে হাস্যোজ্জ্বল, দুই যাদের নিজস্ব ভাণ্ডার হবে শূন্য এবং পৃথিবীতে যাদের আপনজন ভাবত তারাও তাকে ছেড়ে যাবে। তাদের চেহারা হবে মলিন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অনেক মুখমণ্ডল সেদিন হবে উজ্জ্বল, সহাস্য ও প্রফুল্ল। আর অনেক মুখমণ্ডল সেদিন হবে ধূলিধূসর, সেগুলোকে আচ্ছন্ন করবে কালিমা।’ (সুরা আবাসা, আয়াত : ৩৮-৪০)

রমজানে নারীর করণীয়

স্নেহশীল ও মমতাময়ী নারীদের প্রতি অনুরোধ পরিবারের সেবা-যত্নের পাশাপাশি আপনারা নিজেদের ইবাদত ও জিকিরের প্রতি কিছুটা মনোযোগী হোন। রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত আপনার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, আপনার জন্যও উপার্জনের। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি করণীয় হলো :
কাজের রুটিন করা : রুটিন মাফিক কাজ করলে সময়ের বরকত পাওয়া যায়। রমজানে প্রতিদিনের কাজের একটি রুটিন করুন। রুটিন এমনভাবে প্রস্তুত করুন যাতে ঘরোয়া কাজের পাশাপাশি ইবাদতেরও অবকাশ মেলে। রুটিন অনুসারে কাজ শেষ করার চেষ্টা করুন। ইবাদত ও ঘরোয়া কাজের ভেতর ভারসাম্য আনুন এবং পরকালকে ইহকালের ওপর প্রাধান্য দিন। মহান আল্লাহর হুঁশিয়ারি হলো, ‘যে অবাধ্য হয়েছে এবং পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়েছে তার আশ্রয় জাহান্নাম। আর যে স্বীয় প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে জান্নাত হবে তার আবাস।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত : ৩৭-৪১) 

বাহারি আয়োজন পরিহার করুন : রমজান সংযম ও সাধনার মাস। রমজানে বাহারি খাবারের আয়োজন পরিহার করাই উত্তম। রমজানে পরিমিত এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি মনোযোগী হলে নারীদের কাজের চাপ কমে যাবে। এতে যেমন আপনার ইবাদতের সুযোগ বাড়বে, তেমনি পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষাও হবে।

ইবাদতের পরিবেশ তৈরি করুন : পবিত্র রমজানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরার মাধ্যমে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও ইবাদতের প্রতি উৎসাহিত করা আবশ্যক। যেন পুরো পরিবারে ইবাদতের একটি পরিবেশ তৈরি হয়। তাহলে নেক আমলে সবাই পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমার পরিবারবর্গকে নামাজের আদেশ দাও এবং তাতে অবিচলিত থাকো। আমি তোমার কাছে কোনো জীবনোপকরণ চাই না; আমিই তোমাকে জীবনোপকরণ দেই এবং শুভ পরিণাম মুত্তাকিদের জন্য।’ (সুরা তাহা, আয়াত : ১৩২)

কাজের সময় জিকির করুন : ঘরের কাজ উপেক্ষা করা নারীর পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তাই ঘরের কাজ করার সময়কেও মূল্যবান করে তুলতে পারেন জিকিরের মাধ্যমে। বেশির ভাগ ঘরোয়া কাজের সময় মুখে জিকির অব্যাহত রাখা সম্ভব। সর্বোত্তম জিকির কোরআন তিলাওয়াত। কাজ করার সময় কোরআনের যতটুকু মুখস্থ আছে তা তিলাওয়াত করুন। অথবা হাদিসে বর্ণিত তাসবিহগুলো পাঠ করুন। যেমন সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার ইত্যাদি।

সাওয়াবের নিয়ত করুন : রোজাদারের সাহরি ও ইফতারের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ। আপনি পরিবারের খাবার প্রস্তুত করার সময় সাওয়াবের নিয়ত করতে পারেন। এতে আপনার নেকির পাল্লা ভারি হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সে ওই রোজাদারের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। আর রোজাদারের সাওয়াবও কমানো হবে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৮০৭)। অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সব কাজের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১)

সাওয়াব যেন নষ্ট না হয় : পরচর্চা, পরনিন্দা, ঝগড়া-বিবাদ, গালমন্দ ইত্যাদি কাজ রোজার মাহাত্ম্য নষ্ট করে। নারী-পুরুষ সবার উচিত এমন কাজ পরিহার করা। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায় কথাবার্তা ও কাজ ছেড়ে দেয় না, তার পানাহার ত্যাগ আল্লাহ তাআলার কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭০৭)

পুরুষের দায়িত্ব

নেক কাজে নারী ও পুরুষ পরস্পরের সহযোগী। তাই পুরুষের দায়িত্ব হলো নারীকে নেক কাজের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। পুরুষ নারীকে ঘরের কাজে সহযোগিতা করে ইবাদতের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে এবং তাকে নেককাজের প্রতি উৎসাহিতও করতে পারে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) জুতা ঠিক করতেন, কাপড় সেলাই করতেন এবং তোমরা যেমন ঘরে কাজ করো তেমনি কাজ করতেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৫৩৮০)। অন্য হাদিসে এসেছে,  ‘রমজানের শেষ দশক এলে রাসুল (সা.) কোমর শক্ত করে বেঁধে নিতেন এবং রাত জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৪)

আসুন! নেককাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করে একটি সুন্দর পারিবারিক জীবন গঠন করি। আল্লাহ তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা।
 

Read Entire Article