১০ বছর আগের হত্যা মামলার দুই আসামি একই স্টাইলে খুন, নেপথ্যে কী?

6 hours ago 2
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

আধিপত্য বিস্তার এবং চরমপন্থি কানেকশনে ২০১৫ সালে খুন হন খুলনার দৌলতপুরের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী ও পাট শ্রমিক ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদ। এ ঘটনায় শহীদের ছোট ভাই তৌহিদুজ্জামান তৌহিদ দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গোলাম রব্বানী টিপু ও শাহীনুর রহমান মাহীনসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়।

তবে হুজি শহীদ হত্যা মামলার অন্যতম দুই প্রধান আসামি খুলনা নগরীর ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু এ বছরের ৯ জানুয়ারি কক্সবাজারে এবং মামলার অপর একজন শাহীনুর রহমান শাহীন নগরীর বাগমারা এলাকায় গত ১৫ মার্চ দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। যা এখন খুলনার টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।

এরমধ্যে গোলাম রব্বানী টিপু হত্যাকাণ্ডে হুজি শহীদের ভাতিজাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে শাহীনুর রহমান শাহীন হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত কোনো আসামি ধরা পড়েনি।

শহীদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদ হত্যাকাণ্ড

শহীদুল ইসলাম শহীদ ওরফে হুজি শহীদ ছিলেন একজন ঠিকাদার এবং তেল ব্যবসায়ী। ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর বিকেল সোয়া ৪টার দিকে দৌলতপুর রেল স্টেশনের অদূরে খান ব্রাদার্স নামক পাট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে কাজ সেরে নিজ প্রাইভেটকারে নগরীর পাবলায় নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন। প্রাইভেটকারটি নগরীর দৌলতপুরের ইসলামী ব্যাংকের কাছে পৌঁছালে দুটি মোটরসাইকেলে এসে চারজন সশস্ত্র যুবক গাড়িটির গতিরোধ করেন। গাড়ির বাম পাশের দরজায় ১১টি গুলি করেন তারা। সন্ত্রাসীরা চলে গেলে শহীদকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরদিন ৩০ অক্টোবর রাতে নিহতের ছোট ভাই তৌহিদুজ্জামান ওরফে তৌহিদ বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ হত্যা মামলায় নগরীর দেয়ানা উত্তরপাড়ার মো. গোলাম রব্বানী টিপু, একই এলাকার মো. বেনু মিয়া, অনি গাজী, মো. এনামুল কবির মাসুম, খালিশপুরের কাশিপুর এলাকার বাসিন্দা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. সুলতান মাহমুদ পিন্টু, নূরনগরের বিশ্বাসবাড়ী এলাকার মো. আমানত, দৌলতপুরের পাবলা কেশবলাল রোড এলাকার মো. মিল্টন, দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের মারুফ ওরফে গরু মারুফ, পাবলা কারিগরপাড়ার মো. আসলাম ওরফে ট্যারা আসলাম, পাবলা রিফুজিপাড়ার রিফুজি মঈন, পাবলা কারিগরপাড়ার ফারুক ওরফে কিলার ফারুক, দিঘলিয়া উপজেলার সুগন্ধি গ্রামের মুন্না, ফুলতলা উপজেলার বুড়িয়ার ডাঙ্গা গ্রামের মো. এনামুল হক, কাশিপুরের শেখ সাবু, কার্ত্তিককূল এলাকার বড় শাহীন, বয়রায় রায়েরমহল এলাকার মো. বিটু, দৌলতপুর মধ্যডাঙ্গা এলাকার মো. মনিরুল, দিঘলিয়া উপজেলার ফরমাইশ খানা গ্রামের (সাহেবপাড়া) নাসিম, পাবলা তিন দোকানের মোড়ের মো. লাভলু ও দিঘলিয়া উপজেলার চন্দনি মহল গ্রামের শাহীনুর রহমান শাহিনকে আসামি করে মামলা করা হয়। এছাড়া এজাহারে অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও পাঁচ-সাতজনকে আসামি করা হয়।

গোলাম রব্বানী টিপু ও শাহীনুর রহমান শাহীন হত্যাকাণ্ড

হুজি শহীদ ও টিপু একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তাদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। এরই জেরে টিপুর নেতৃত্বে হুজি শহীদকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। আর এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে টিপুকে হত্যা করা হয়।

অন্যদিকে টিপু খুন হওয়ার পর শাহীনুর রহমান শাহীন বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকতেন। শাহীনকে দৌলতপুর থেকে ডেকে নগরীর বাগমারা এলাকায় নিয়ে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্র আরও জানায় গোলাম রব্বানী টিপু এবং শাহীনুর রহমান শাহীন একই স্টাইলে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। টিপু এবং শাহীন চরমপন্থি নেতা ছিলেন। হুজি শহীদকে হত্যার পর তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু করেন। গোলাম রব্বানী টিপু খুলনা মহানগর সেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি এবং ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ছিলেন। তবে টিপু নিহতের পর শাহীন দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন।

হুজি শহীদ হত্যা মামলার অন্যতম দুই আসামি একই স্টাইলে নিহত হওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক হওয়ায় পুলিশ ছায়া তদন্ত শুরু করেছে।

খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সানোয়ার হোসেন মাসুম জানান, শনিবার (১৫ মার্চ) রাতে দুর্বৃত্তরা গুলি করে শাহিনকে হত্যা করেছে। তার মাথায় গুলির দুটি চিহ্ন রয়েছে। তবে কারা এবং কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা এখনও পুলিশ জানাতে পারেনি। এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে এবং আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

এফএ/জিকেএস

Read Entire Article