ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
• আলাদা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নেই
• ২৩ বিচারকের বিপরীতে এজলাস মাত্র ১৫টি
• এজলাস ভাগাভাগি করে চলে বিচারকাজ
শরীয়তপুরে এজলাস সংকটে ব্যাহত হচ্ছে আদালতের বিচারিক কার্যক্রম। ২৩ বিচারকের বিপরীতে এজলাস রয়েছে মাত্র ১৫টি। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নিজস্ব ভবন না থাকায় জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ধার করাসহ ছয়টি আলাদা ভবনে ভাগাভাগি করে চলছে বিচারকাজ। এজলাস আর অফিস কক্ষ সংকটে দিনদিন প্রকট হয়ে উঠছে মামলাজট। এ নিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিচারপ্রার্থী ও বিচার সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট ও আদালত সূত্র জানায়, ১৯৯৪ সালে ৩ একর জায়গার ওপর নির্মাণ করা হয় চার তলাবিশিষ্ট জেলা জজ আদালত ভবন। বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার আগে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ফৌজদারি বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ আলাদা হওয়ার পরে ফৌজদারি বিচার কাজ পরিচালনার জন্য আলাদা বিচারক এবং আলাদা এজলাসের প্রয়োজন হয়। তবে আলাদা জুডিসিয়াল ভবন তৈরি না হওয়ায় তখন থেকে শুরু হয় ফৌজদারি বিচার কার্যক্রমে নানাবিধ সমস্যা।
জেলায় নতুন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ পেলেও দেখা দেয় এজলাস সংকট। ভবন সংকটে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বাইরে তিনটি টিনশেড ভবন ও ডিসি অফিসের দুটি কক্ষকে এজলাস বানিয়ে নিরাপত্তাহীনভাবে চলছে নারী-শিশুসহ গুরুত্বপূর্ণ আদালতের বিচারিক কাজ। আর এজলাস কম হওয়ায় একই এজলাসে দুই থেকে তিনজন বিচারক ধারাবাহিকভাবে কাজ করেন। এতে সময়ের অভাবে বিচারকের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এজলাস সংকটে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে মামলাজট। ভবন ও অফিস কক্ষ পর্যাপ্ত না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন আইনজীবী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
- আরও পড়ুন:
গণহত্যার বিচারে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করা আবেদন খারিজ
সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা, বিধান চ্যালেঞ্জ করে রিট
সরেজমিন সিনিয়র সহকারী জজ আদালত নড়িয়া ও নাজির শাখায় দেখা যায়, মামলার নথিপত্রের স্তূপ। জায়গা সংকটে কিছু নথির জায়গা হয়েছে টেবিলের নিচে ফ্লোরে। একটি কক্ষেই চলছে সেরেস্তা, কম্পিউটার অপারেটরসহ সবার কার্যক্রম। আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীদের গাদাগাদি আর হট্টগোলের মধ্যে চলছে বিচারিক কাজ। ছোট একটি কক্ষ ভাগাভাগি করে ১৮ জন কাজ করছেন নাজির শাখায়। ফাটল দেখা দিয়েছে আদালতে ভবনের একটি কক্ষে।
তুলাসার থেকে আসা বিচারপ্রার্থী হান্নান বেপারী জাগো নিউজকে (৫০) বলেন, ‘দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে একটি মামলা নিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। এজলাস সংকটের কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। সকালে কোর্টে এলে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এজলাস যদি বাড়ানো হতো আমাদের এই ভোগান্তি আর থাকতো না।’
আরেক বিচারপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিচারকের চাইতে এজলাস কম। এজন্য বিচারকরা চাইলেই দ্রুত বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারেন না। এজন্য মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয় না। একটা মামলা শেষ হতে কয়েক বছর চলে যায়।’
কক্ষ সংকটের কারণে আইনজীবী ও তার সহকারীদের বেড়েছে ভোগান্তি। ভিড় আর হট্টগোলের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝামেলা পোহাতে হয় নারী আইনজীবীদের। আইনজীবী সাফাত মিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘পর্যাপ্ত কক্ষ আর জায়গা না থাকায় গাদাগাদি করে কক্ষের ভেতরে ও বাইরে পুরুষ মুহুরি- আসামিরা দাঁড়িয়ে থাকেন। আমরা চাইলেই তখন তাদের ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতে পারি না। আমরা চাই আদালতের জন্য নতুন একটি ভবন তৈরি করা হোক।’
আইনজীবী তৌহিদ কোতোয়াল বলেন, ‘নাজির শাখায় জায়গা নেই। জারিকারকদের বসার ব্যবস্থা নেই। আমরা আইনজীবীরা সেখানে গেলে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এজলাস কম থাকায় একাধিক বিচারক এজলাস ভাগাভাগি করে বিচারকাজ পরিচালনা করেন। এতে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি হচ্ছে।’
কথা হয় নাজির শাখার জারিকারক নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের জারিকারকদের বসার জন্য মাত্র দুটো বেঞ্চ। আমরা এখানে কাজ করি ১৮ জন। লেখালেখি বাদে যদি আমরা গাদাগাদি করেও বসি, মাত্র আটজন বসতে পারি। বাকিরা বাইরে অপেক্ষা করে। আইনজীবীদের কেউ এলে তাদের বসতেও দিতে পারি না। আমাদের আলাদা কক্ষ খুবই দরকার।’
এদিকে জরাজীর্ণ ভবনে বিচারপ্রার্থীদের সেবা দেওয়ার জন্য নেই পর্যাপ্ত কক্ষ। বিচারকরাও চাহিদামতো পাচ্ছেন না এজলাস। এজন্য দ্রুত ভবন নির্মাণের দাবি জেলা আইনজীবী সমিতির।
শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি হানিফ মিয়া বলেন, ‘দেশের ৬৩ জেলায় জুডিসিয়াল ভবন থাকলেও আমাদের নেই। এজন্য বিচারকরা চাহিদামতো এজলাস পান না। ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ভবনে বিচারিক কাজ চলছে। আমরা চাই দ্রুত একটি জুডিসিয়াল ভবন নির্মাণ করা হোক।’
পুরোনো জজ আদালত ভবনেরও দৈন্যদশা। বিচারকদের ভাগাভাগি করতে হচ্ছে এজলাস। এতে বিলম্ব হচ্ছে বিচারিক কার্যক্রম। ভবন নির্মাণ হলে এই সংকট কেটে যাওয়ায় কথা জানান জেলা জজ আদালতের নাজির।
শরীয়তপুর জেলা জজ আদালতের নাজির নাসির উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের মূল প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে আটজন বিচারককে এজলাস ও তাদের চেম্বার ভাগাভাগি করে বিচারকাজ পরিচালনা করতে হচ্ছে। এজন্য সাক্ষ্য গ্রহণ ও সেবা প্রার্থীদের সঠিক সময়ে সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। আমরা চাই দ্রুত একটি জুডিসিয়াল ভবন নির্মাণ করা হোক।
জানতে চাইলে শরীয়তপুর গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২০২৬ সালে নতুন আদালত ভবনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ডিজিটাল সার্ভে ও সয়েল টেস্টও সম্পন্ন হয়েছে। এখন প্রকল্প অনুমোদন হলে নতুন ভবনের কাজ শুরু করা হবে। নতুন ভবন তৈরি হলে স্টাফরা সেখানে স্থানান্তর হবেন। তখন আর সংকট থাকবে না।’
এসআর/জেআইএম