‘গরিবের ডাক্তার’ হওয়ার স্বপ্ন মেডিকেল জয়ী খালেদ-ইরিনের

2 days ago 2
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

‘কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নই মূলত গ্রাম। এরমাঝে আমাদের গ্রাম জালালাবাদের ফরাজীপাড়া এবং আশপাশের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ হতদরিদ্র। এখানে একটা ভালো ক্লিনিকও নেই। হাতেগোনা যে কয়েকটি হাসপাতাল বা ক্লিনিক রয়েছে সেটাও ঈদগাঁও বাজার এলাকায়। অসুখের সময় হতদরিদ্র মানুষগুলোর এতদূরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। ছেলেবেলা থেকে দেখে এসেছি, মোটা অংকের ডাক্তার ফি ও অধিক চিকিৎসা ব্যয়ে দরিদ্র মানুষগুলো ঠিকমতো ওষুধও কিনে খেতে পারেন না। বাবাকে দেখেছি, নীরবে মানুষের সহায় হতে। তাই আমারও ইচ্ছা আল্লাহ সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুললে আমি এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে সপ্তাহের বিশেষ দিনে বিনা মূলে চিকিৎসা-সেবা দেবো। এক কথায় আমি ‘গরিবের ডাক্তার’ হিসেবে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই।’

সদ্য ঘোষিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধা তালিকায় ৭৮তম স্থান নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) পড়ার সুযোগ পাওয়া ঈদগাঁওর জালালাবাদের পূর্ব ফরাজীপাড়ার খালেদ বিন রশিদ প্রতিক্রিয়া ও তার ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাগুলো এভাবেই ব্যক্ত করলেন।

খালেদ ঈদগাঁওর পূর্ব ফরাজীপাড়ার ব্যবসায়ী রশিদ আহামদ ও জান্নাতুল মোস্তফা ঝিনুকের একমাত্র ছেলে। তিনি ঈদগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর কক্সবাজার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। প্রতিটি ক্লাসে প্রথম হওয়ার পাশাপাশি ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় সমগ্র ঢাকা বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন খালেদ। পিএসসি ও জেএসসিতে টেলেন্টপুলে মেধাবৃত্তিও অর্জন করেন তিনি।

খালেদের চাচা তরুণ পর্যটন উদ্যোক্তা ও সি-বিচ রিসোর্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আমানুল হক আমান জানান, খালেদ পড়ালেখার পাশাপাশি প্রাইমারি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে স্কুল, থানা, জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকেও পুরস্কারপ্রাপ্ত। তার এ সাফল্য নতুন প্রজম্মের জন্য অনুপ্রেরণার। এলাকার মানুষের সেবায় তার বাবা রশিদ আহমদ ঈদগাঁও বাজারে তাদের একটি ভবনে মা-মনি হাসপাতাল নামে একটি চিকিৎসা সেবালয় পরিচালনায় সম্পৃক্ত। তার একমাত্র বোনও স্নাতক পাস।

জালালাবাদ ইউপির ৫নং ওয়ার্ড সদস্য ও খালেদের প্রতিবেশী নুরুল আলম বলেন, পুরো এলাকার মুখ উজ্জল করেছে খালেদ। আল্লাহপাক তাকে জাতীয় মানের চিকিৎসক হয়ে দেশের চিকিৎসা সেবার মান সম্প্রসারণে অবদান রাখার সুযোগ দিন।

অপরদিকে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হয়ে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৬৯তম স্থান অর্জন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন চকরিয়ার অজপাড়া গা সাহারবিলের তানহা তাজরিয়া ইরিন। তিনি চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রয়াত মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও গৃহিণী এশরাক জাহান জেসমিনের মেয়ে।

ইরিন চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পিএসসি ও ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বোর্ডে চতুর্থ স্থান এবং ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বোর্ডে ১৫তম স্থান অর্জন করে উত্তীর্ণ হন। এছাড়াও জেএসসি ও প্রাথমিক সমাপনীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেন ইরিন।

ইরিনের মা এশরাক জাহান জেসমিন বলেন, ২০১৬ সালে ইরিন যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে তখনই তাদের বাবা (প্রফেসর সাইফুদ্দিন) অকস্মাৎ স্ট্রোক করে মারা যান। তার ইচ্ছা ছিল সন্তানদের দেশের কল্যাণে বড় করবেন। আমাদের স্বজন, স্বামীর সহকর্মীদের আন্তরিক সহযোগিতায় প্রতিকূল নানা বিষয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে সন্তানদের বাবার চাওয়া মতো মানুষ করার চেষ্টা করছি। বড় মেয়ে চিকিৎসক হয়ে বের হওয়ার পথে। বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। মেজ মেয়েটা মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। ছোট ছেলেটাও এসএসসি দেবে আগামীবার।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে তানহা তাজরিয়া ইরিন বলেন, আমার বাবা ও দাদা সমাজকে আলোকিত করতে অনেক অবদান রেখে গেছেন। তাদের মেয়ে ও নাতনি হিসেবে এলাকায় সবার স্নেহ এখনো পাচ্ছি। তাদের সেই ধারা অব্যাহত রাখতে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হয়ে এলাকার অবহেলিত মানুষের সেবা দেওয়ার ইচ্ছা আমার। মানবিক ডাক্তার হয়ে বাবা-দাদা ও মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই।

সায়ীদ আলমগীর/এফএ/জিকেএস

Read Entire Article