ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
ঘানির চারপাশে ঘুরছে গরু। সেই সঙ্গে ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ। ফোটায় ফোটায় পড়ছে তেল। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সরিষার তেল তৈরির এই দৃশ্য এখন আর তেমন দেখা যায় না। হাতেগোণা কয়েকজন এই পেশা ধরে রেখেছেন এখনো। তবে তাতে এসেছে ভিন্নতা। গরু বা ঘোড়ার বদলে ঘানি ঘোরানো হচ্ছে মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা দিয়ে। এমন দৃশ্য দেখা গেছে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায়।
সেখানে ১ নম্বর নাফানগর ইউনিয়নের ছোট সুলতানপুর গ্রামে তিনজন ও ৬ নম্বর রনগাঁও ইউনিয়নের কনুয়া গ্রামে একজন কাঠের ঘানিতে সরিষা দিয়ে তেল উৎপাদন করছেন।
দুই পরিবারের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা দিয়ে ঘুরছে ঘানি। বিশেষ কায়দায় স্থাপন করা এই ঘানি দেখতে আশপাশের গ্রামের মানুষ ভিড় করছেন। অনেকে এটা দেখে নতুন করে উৎসাহিত হয়ে ঘানি তৈরি করছেন।
ঘানি দিয়ে সরিষার তেল উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কলুরা জানান, গরু দিয়ে ঘানি চালালে সঙ্গে একজন মানুষকে সারাক্ষণ সময় দিতে হয়। সময় লাগে বেশি। এছাড়া তেল উৎপাদনের সময় গরুর চোখ ঢেকে রাখার জন্য পরিবারের লোকজন এটা পছন্দ করে না। তাই পরিবর্তন এনেছেন। এতে সময় ও শ্রম দুটোই বাঁচে।
কলু, তেলী, ঘানি বা তেলের গাছ- এগুলোর সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মর তেমন পরিচয় নেই। আগে গ্রামগঞ্জে ও হাট-বাজারে মাটির হাঁড়িতে ফেরি করে বিক্রি হতো কাঠের ঘানিতে উৎপাদিত সরিষার তেল।
প্রযুক্তির বিপ্লবে প্রায় সব অঞ্চল থেকেই হারিয়ে যাচ্ছে ঘানিতে তেল তৈরির প্রক্রিয়াটি। এখন তেল তৈরি হচ্ছে লোহার ঘানিতে। আর এই সরিষার তেল বাজার দখল করে নেওয়ায় ঘানি ভাঙা সরিষার তেলের স্বাদ পাচ্ছে না মানুষ। যারা স্বাদ নিতে চান তারা ও শিশুদের শরীরে ব্যবহারের জন্য এবং সয়াবিন থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য অনেকেই ঘানির তেল খুঁজেন।
উপজেলার ১ নম্বর নাফানগর ইউনিয়নের ছোট সুলতানপুর গ্রামের বিষ্ণু পদ রায় বলেন, আমি ৩০ বছর থেকে ঘানিতে সরিষা ভেঙে তেল উৎপাদন করছি। এর আগে আমার বাবা, তার আগে দাদা ঘানিতে তেল উৎপাদন করতেন। আগে আমি গরু দিয়ে তেল উৎপাদন করতাম। বর্তমানে মোটরসাইকেল দিয়ে তেল উৎপাদন করছি। গরু দিয়ে করলে সময় বেশি লাগে। এছাড়া একজন মানুষ সব সময় লেগে থাকতে হয়। আর গরুরও কষ্ট হয়। এ কারণে মোটরসাইকেল দিয়ে ঘানিতে তেল উৎপাদন করছি।
একই গ্রামের বিজেন্দ্র নাথ বলেন, আইয়ুবের শাসন আমল থেকে আমার বাবা ঘানিতে সরিষা দিয়ে তেল উৎপাদন করেছেন। বাবা পরলোক গমন করল দুই-চার বছর পর আমি এই ব্যবসা শুরু করি।
গরু দিয়ে না করার কারণ তিনি বলেন, গরু দিয়ে ঘানি ঘুরানো আত্মীয়স্বজন পছন্দ করে না। এজন্য অটো দিয়ে ঘানিতে তেল ভাঙানো হয়।
এমদাদুল হক মিলন/জেডএইচ/এমএস