ছুটির দিনে জমজমাট বাণিজ্যমেলা, ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল

2 days ago 2
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

রাজধানীর পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে চলছে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। উদ্বোধনের পর থেকে মেলায় বাড়ছে ভিড়। শেষ সপ্তাহে আজ শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়াতে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড়ে মেলা প্রাঙ্গণে তিল ধরার ঠাঁই নেই। শেষ দিকে এসে বিক্রি বাড়ায় খুশি ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিন মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, কাঞ্চন ব্রিজ সংলগ্ন রাস্তার দুই পাশে যানবাহনের জটলা লেগে আছে। মেলার প্রবেশমুখের রাস্তার দুই পাশে মানুষের ঢল। কেউ টিকিট কাটছেন, কেউ মেলায় প্রবেশের জন্য টিকিট নিয়ে সিরিয়ালে অপেক্ষা করছেন।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সকাল থেকেই এখানে মানুষের ভিড়। শুরুতে মানুষ কম আসলেও এখন শেষ দিকে মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। প্রথমদিকে কেবল দর্শনার্থী আসলেও এখন ক্রেতারা আসছেন।

এদিকে সাপ্তাহিক বন্ধ হওয়ায় চাকরিজীবী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী, পেশাজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মেলায় এসেছেন।

ছুটির দিনে জমজমাট বাণিজ্যমেলা, ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল

মেলায় আগত হাশেম খান নামের এক ব্যক্তি জাগো নিউজকে বলেন, মেলায় আসা-যাওয়ার জন্য যেন যুদ্ধ করতে হয়। প্রথমে বিআরটিসি বাসের টিকিট সংগ্রহ করা যা ছুটির দিনে যেন যুদ্ধ জয় করার মতো। তারপর মেলার টিকিট কেনা, ভিড় ঠেলে প্রবেশ করা যেন আরেক যুদ্ধ। সবশেষে যখন মেলায় প্রবেশ করি তখন সব ক্লান্তি নিমিষেই উধাও হয়ে যায়।

পরিবারে সঙ্গে কেনাকাটা করতে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে এসেছেন ফাইজা। তিনি বলেন, আমি এবার এই নিয়ে ৪ বার এসেছি। প্রথমে যখন এসেছিলাম এত মানুষ ছিল না। কিন্তু এখন মেলায় হাঁটা যাচ্ছে না মানুষের ভিড়ে।

ক্রেতাদের পাশাপাশি বিক্রেতারাও আনন্দিত। মেলার শেষ সপ্তাহে তারা নানা রকম অফার দিচ্ছেন ক্রেতাদের আকর্ষণের জন্য।

জারিন ফ্যাশনের বিক্রয় প্রতিনিধি আল-আমিন জাগো নিউজকে বলেন, মেলা শেষ হতে আর কয়েকদিন বাকি। আমাদের বিক্রি বেশ ভালোই হচ্ছে। আমরা আশা করছি যেসব পণ্য নিয়ে এসেছি সব বিক্রি করে যেতে পারবো।

ছুটির দিনে জমজমাট বাণিজ্যমেলা, ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল

রাইট চয়েজ নামের একটি পোশাক স্টলের সেলসম্যান মামুন জাগো নিউজকে বলেন, মেলার শেষ দিকে এসে আমরা অনেক খুশি। প্রচুর মানুষ আসছেন, পাশাপাশি বিক্রিও ভালো হচ্ছে।

মেলায় কেনাকাটা করা ছাড়াও অনেকে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব মিলে খাওয়া-দাওয়া করছেন। টেস্টি ট্রিট প্রিমিয়াম প্যাভিলিয়নে গিয়ে দেখা যায় মানুষের উপচে পড়া ভিড়।

টেস্টি ট্রিট প্রিমিয়াম প্যাভিলিয়নের রিজিওনাল ম্যানেজার শরিফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আজ আমাদের দম ফেলার সময় নেই। মেলা শেষের দিকে, তাই প্রচুর মানুষ এসেছেন। পাশাপাশি আজ বন্ধের দিন হওয়ায় প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। আমরা খুব খুশি।

ছুটির দিনে জমজমাট বাণিজ্যমেলা, ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল

দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি বিদেশি স্টলগুলোতে ভিড় ছিল বেশি। এবারের মেলায় বিদেশি স্টল রয়েছে ১১টি। এর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, জাপান, মালয়শিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বাহারি সব পণ্য। এছাড়া শীত থাকলেও মেলায় আইসক্রিম স্টলগুলোতে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়।

পিকে সুজ পাকিস্তানের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইলিয়াস জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের জুতার প্রতি ক্রেতাদের আলাদা আকর্ষণ আছে। বিশেষ করে কোলাপুরি, স্যান্ডেল, জুতার সেল সবচেয়ে বেশি।

মেলায় নগদ টাকার সংকট যাতে না হয় এজন্য ক্রেতাদের সুবিধার্থে সরকারি-বেসরকারি অনেকগুলো ব্যাংকের অস্থায়ী এটিএম বুথ বসানো হয়েছে। শুক্রবার ক্রেতা বেশি হওয়ায় এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার জন্য কার্ডধারীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।

ছুটির দিনে জমজমাট বাণিজ্যমেলা, ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল

মেলায় হোমটেক্সের প্যাভিলিয়নে বিছানার চাদরে ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ছাড় চলছে। অলটাইম ব্রেড ও কুকিজসহ বিভিন্ন বেকারি পণ্যে কম্বো অফার চলছে যেখানে রেগুলার প্রাইস থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ছাড়ে পাওয়া যাচ্ছে।

তবে বাণিজ্য মেলার মান নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে অভিযোগ। জামিলুর রহমান নামে একজন ক্রেতা জাগো নিউজকে জানান, মেলার কিছু কিছু জায়গায় গেলে মনে হচ্ছে যেন মনে হচ্ছে গুলিস্তান, নিউমার্কেটের ফুটপাথ দিয়ে হাঁটছি। একদাম ১৩০, দেখে লন, বাইছা লন ইত্যাদি শ্লোগানে মনে হচ্ছে না যে আন্তর্জাতিক কোনো মেলায় এসেছি। এছাড়া এবার বিদেশি স্টলও কম। তাই না বলে পারছি না যে এবার মেলায় এসে আমি অনেকটা হতাশ।

মেলায় বড় বড় ব্র্যান্ডের পাশাপাশি রয়েছে কমদামি বিভিন্ন পণ্যের কিছু স্টল। মেলার মূল প্রাঙ্গণের বাইরে রয়েছে নানা পণ্য নিয়ে বসে থাকা হকার। বিভিন্ন ধরনের খেলনা, বেলুন, আচার, পিঠা, ঝালমুড়ি, চিংড়ি ভাজাসহ নানা ধরনের খাবার বিক্রি হচ্ছে মেলার প্রবেশ পথেই।

ছুটির দিনে জমজমাট বাণিজ্যমেলা, ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল

এবারের মেলায় স্টল, প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়াম প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৩৬১টি। মেলায় কেনাকাটার পাশাপাশি রয়েছে বিনোদনের নানা আয়োজন। ছোটদের জন্য রয়েছে পার্ক, মেলার মূল ফটকের বাম দিকে রয়েছে উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

প্রথমবারের মতো মেলার প্রবেশ টিকিট অনলাইনে ক্রয় করা যাচ্ছে। ২৯তম বাণিজ্য মেলার প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা, ১২ বছরের নিচে ২৫ টাকা। ঢাকার ফার্মগেট খেজুরবাগান এবং কুড়িল থেকে বিআরটিসির শাটল বাস সার্ভিসের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো মেলায় যুক্ত করা হয়েছে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস উবার।

এসআরএস/এমআইএইচএস/এমএস

Read Entire Article