ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান। অবসর নেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে। তিনি দুই দফায় গুম হন। প্রথমবার ২০১১ সালে, দ্বিতীয়বার ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট। শেষ দফায় এক বছর ছয় মাস ১৪ দিন গুম ছিলেন। তিনি সেনাবাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বিজিবিতে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাহসিকতার জন্য তিনি বীরপ্রতীক, বিপিএম ও বাংলাদেশ রাইফেল- এ তিনটি খেতাব লাভ করেন।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গুম কমিশনে আবেদন করেছেন হাসিনুর রহমান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও অভিযোগ দায়ের করেছেন। এছাড়া গুমের জন্য তিনি মামলা রুজু করারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সম্প্রতি জজ মিয়া ইস্যু, জঙ্গি অভিযান, আয়নাঘর ও কারাগারে থাকা এবং র্যাবে কাজ করার অভিজ্ঞতাসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক তৌহিদুজ্জামান তন্ময়। আজ থাকছে দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব।
জাগো নিউজ: আপনি বলছেন জজ মিয়ার ঘটনা সত্য, কীভাবে?
হাসিনুর রহমান: আমি হলফ করে বলছি- জজ মিয়া, মুকুল, বকুল, তানভীর ইসলাম জয়সহ আরও দুজন ছিল যারা পরিকল্পনা করেছিল। গ্রেনেড ফোটেনি। না ফোটার কারণ আমাদের দেশের সন্ত্রাসী কিংবা আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীরা গ্রেনেড ছুড়ে অভ্যস্ত না। তারা পটকা-ককটেল ফুটিয়ে অভ্যস্ত। কোনো গ্রেনেডের রিং খুলে আবার কোনোটির রিং না খুলেই ছুড়ে মেরেছিল। গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে আমরা মিলিটারি অফিসারদেরই প্রচুর ট্রেনিং নিতে হয়।
গ্রেনেড মারার অ্যাঙ্গেল আছে, চার সেকেন্ড পর ছুড়ে মারতে হয়, টাইমিং আছে। এগুলো জজ মিয়ারা জানতেন না। তারা মনে করেছিলেন বোমের মতো মেরে দিলেই ফুটে যাবে। এজন্য টার্গেট মিস হয়েছে। তানভীর ইসলাম জয় আমাদের কাছে স্বীকার করেছে।
গ্রেনেড মারার অ্যাঙ্গেল আছে, চার সেকেন্ড পর ছুড়ে মারতে হয়, টাইমিং আছে। এগুলো জজ মিয়ারা জানতেন না। তারা মনে করেছিলেন বোমের মতো মেরে দিলেই ফুটে যাবে। এজন্য টার্গেট মিস হয়েছে। তানভীর ইসলাম জয় আমাদের কাছে স্বীকার করেছে
জাগো নিউজ: বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে জজ মিয়াও বোম ছুড়েছিল?
হাসিনুর রহমান: আমাকে কারাগারে পাঠানোর পরও তারা শান্তি পায়নি। সেখানে কনডেম সেলে রাখা হয়। ওখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমান, সোহেল ছিল। আমি যখন র্যাবে ছিলাম তখন তারা ধরা পড়েছিল। ষড়যন্ত্রকারীরা মনে করেছিল, আমাকে সন্ত্রাসী দিয়ে নির্যাতন করবে। কিন্তু কারাগারে উল্টো সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়। আরমান কারাগারে আমাকে জানায়- ‘জজ মিয়ার ঘটনা আসলে নাটক না, সত্য।’
আরও পড়ুন
- আয়নাঘরের দরজাগুলো খুললে প্রতিটি মানুষ ভয়ে কাঁপতো
- গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
- সাবেক সেনাপ্রধানসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুম কমিশনে অভিযোগ
- হাসিনার আমলে গুম ২০০ লোকের খোঁজ মেলেনি: তদন্ত কমিশন
- গর্ভবতী-সন্তানসহ নারীরাও গুমের শিকার হয়েছিলেন
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে জজ মিয়াও গ্রেনেড ছুড়েছিলেন। তানভীর ইসলাম জয়, মামুন, বকুল ছাড়াও মুফতি হান্নান গ্রেনেড ছুড়েছিলেন। মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এসপি রুহুল আমিন কারাগারে আমাকে বলেছিলেন আরমানকে বন্ধু বানিয়ে জজ মিয়ার ঘটনায় জিজ্ঞাসা করেন অনেক কিছু জানতে পারবেন। তখনই জানতে পারি জজ মিয়ার বিষয়টি। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব দেখে তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা শেখ মামুন খালেদ (সাবেক ডিজিএফআই প্রধান) ও তারেক সিদ্দিকী (শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা) কারাগারে আমাকে জঙ্গি সেলে পাঠান।
আমি র্যাবে থাকতে জেএমবির অনেক অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। শায়েখ আব্দুর রহমানের ছেলে নাবিল জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আমার হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। এই মেসেজটা কারাগারে কোনোভাবে পৌঁছে দেওয়া হয় যে, লে. কর্নেল হাসিনুর রহমান তোমাকে গুলি করেছিল। নাবিল প্রকাশ্যে আমাকে হুমকি দেয়, ‘আপনাকে আমি হত্যা করবো।’
তবে নাবিলের নেতা যারা ছিলেন যেমন- ইঞ্জিনিয়ার সালাউদ্দিন, মোহাম্মদ তাদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। কখনও তাদের সঙ্গে আমি খারাপ ব্যবহার করিনি। এই নাবিলকে তার নেতারা বলে দেয় আমার গায়ে যেন হাত দেওয়া না হয়। বরং সেবায় একজন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। তৎকালীন সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া ডিভিশন সুবিধা দিলেও শেখ মামুন খালেদ ও তারেক সিদ্দিকীর কথায় ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হয়নি। সন্ত্রাসী-জঙ্গি দিয়ে যখন আমাকে হত্যা করা গেলো না তখন কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে নির্বাচন হয়ে গেলে ইকবাল করিম ভূঁইয়া আমাকে আনলেন। বাসায় চলে এলাম। চুপচাপ থাকতাম।
আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা চায় না আমরা বেকারমুক্ত হই। বেকার আছে বলেই স্লোগান দেয়, বেকার না থাকলে স্লোগান দেওয়ার লোক কোথায়। বৈষম্য কমাতে হবে। বৈষম্য কমে গেলে চাঁদাবাজি করবে না, যুবকরা কাজ করে খাবে।
জাগো নিউজ: রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে কিছু বলার আছে আপনার?
হাসিনুর রহমান: রাজনৈতিক দল এখনই ভারতকে তোষামোদি শুরু করে দিয়েছে। ভারত ছাড়া আমরা কেন চলতে পারবো না? আমাদের যা আছে তাই খাবো। স্বাধীনতার আগে যেভাবে ছিলাম সেভাবেই থাকবো। যদি টাকা পাচার বন্ধ হয় আমার দেশে বাইরে থেকে চাকরি করতে আসবে। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা চায় না আমরা বেকারমুক্ত হই। বেকার আছে বলেই স্লোগান দেয়, বেকার না থাকলে স্লোগান দেওয়ার লোক কোথায়। বৈষম্য কমাতে হবে। বৈষম্য কমে গেলে চাঁদাবাজি করবে না, যুবকরা কাজ করে খাবে।
জাগো নিউজ: বিএনপিতে যোগ দিলেন, নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে কি?
হাসিনুর রহমান: আমি রাজনীতিবিদ না, সামরিক ব্যক্তি। সততার ওপরে থাকি, সত্য কথা বলতে বিশ্বাস করি। আমি বিএনপিতে ঢুকেছি কারণ বংশ পরিচয়ে আমরা বিএনপি। আমার চাচা ছিলেন এমপি। আমি সেনাবাহিনীতে ঢুকেছিলাম জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেম ও ভালোবাসা দেখে। বীর প্রতীক, বিপিএম ও রাইফেল তিনটি প্রতীকই খালেদা জিয়া আমাকে পরিয়ে দিয়েছেন। বিএনপির সঙ্গে যোদ দিলেও আমি কখনও সক্রিয় রাজনীতি কিংবা নির্বাচনে বিশ্বাসী না। এসব না করেও দেশকে সাপোর্ট করা যায়।
র্যাব হলো সেবক। আতঙ্ক শুধু সন্ত্রাসীর কাছে। সেই জায়গা থেকে সরে এসেছে র্যাব। র্যাব মানুষ মারবে কেন? কোন ক্ষমতাবলে? মানুষ মারার ক্ষমতা দেয়নি কেউ।
জাগো নিউজ: বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কীভাবে উন্নত করা যায়?
হাসিনুর রহমান: ঢাকা শহরে ৫০টি থানা এলাকায় ১০০ তরুণ-যুবককে ঘুস ছাড়া নেওয়া হয় এবং তারা ওই থানা এলাকার বাসিন্দা। ওই থানা এলাকায় ১০০ ছেলের জন্য কোনো গ্যাঞ্জাম আর হবে না। ঢাকার পাশাপাশি একইভাবে সারাদেশেও এই মডেল সৃষ্টি করতে হবে। সরকার সমস্যার সমাধান করতে চায় না। একটা গোপালগঞ্জের ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে এলে তার বেতনে চলবে না। গোপালগঞ্জের ছেলেকে গোপালগঞ্জেই রাখেন। কারণ তার স্কুল-কলেজ শিক্ষক, স্ত্রীর শিক্ষক এমনকি তার সন্তানের শিক্ষকও ওখানেই থাকেন। দিন শেষে ওখানে নিরীহ লোক কেউ অত্যাচারিত হবে না। কোনো বাবা চায় না তার বাবা একজন ঘুসখোর হোক। পুলিশ জনগণের সেবক হবেন, আপনার দ্বারা যেন কেউ অত্যাচারিত না হয়। কিন্তু আমরা করছি উল্টো। এখান থেকে ওখানে বদলি।
জাগো নিউজ: র্যাব বিলুপ্তির কথা উঠছে, আপনি কী মনে করছেন?
হাসিনুর রহমান: র্যাব হলো সেবক। আতঙ্ক শুধু সন্ত্রাসীর কাছে। সেই জায়গা থেকে সরে এসেছে র্যাব। র্যাব মানুষ মারবে কেন? কোন ক্ষমতাবলে? মানুষ মারার ক্ষমতা দেয়নি কেউ। যথেষ্ট আইন আছে। একটা লোককে আটকিয়ে রাখতে চাচ্ছেন সমস্যা নেই, অন্য একটা ধারা দিয়ে আটকিয়ে রাখেন। যদি ওই লোকটা অনেক খারাপ হয়। র্যাবের দরকার হয়েছে কারণ আমাদের রাজনীতিবিদরা অসৎ। এমন কোনো সন্ত্রাসী পাবেন না যে কোনো না কোনো রাজনীতিবিদের পৃষ্ঠপোষকতা নেই। রাজনীতিবিদ সৎ হলে দেশে সন্ত্রাসী থাকবে না, র্যাবেরও দরকার হবে না।
টিটি/এএসএ/এমএস