টলিউডে ফের অচলাবস্থা!

1 day ago 4
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

ডিরেক্টরস গিল্ড ও টেকনিশিয়ান ফেডারেশনের দ্বন্দ্বে টলিউডে ফের অচলাবস্থা। বন্ধ হয়ে গেছে শুটিং। পরিচালক জয়দীপ মুখার্জি, কৌশিক গাঙ্গুলির পর এবার টেকনিশিয়ান ফেডারেশনের কোপে পরিচালক শ্রীজিৎ রায়।  

পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, শ্রীজিৎ রায় ফেডারেশনের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। আর সে কারণেই আর্ট সেটিং গিল্ডের টেকনিশিয়ানেরা পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে রাজি নন। যার ফলে, শ্রীজিৎ রায়ের নতুন টিভি সিরিয়ালের শুটিং শুরুর আগেই থমকে গিয়েছে। সৃষ্ট দ্বন্দ্বের সমাধান না হলে আগামীকাল থেকে সব সিরিয়ালের শুটিং বন্ধ হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত ২৭ জানুয়ারি শ্রীজিৎ রায়ের নতুন সিরিয়ালের সেট তৈরির কাজ শুরু হয়। কিন্তু প্রথম থেকেই সেটিং টিমের মধ্যে একটা চাপা অসন্তোষ দেখা যাচ্ছিল। তবে আচমকা সোমবার রাতে সেটের কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে এখন পর্যন্ত টেকনিশিয়ানদের কেউ কাজে যোগ দেননি। ফলে, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।

পরিচালক শ্রীজিৎ রায়ের দাবি, “টেকনিশিয়ানদের একটাই বক্তব্য— ‘ক্ষমা চাইতে হবে পরিচালককে। তবেই কাজ শুরু হবে, নতুবা কাজ বন্ধ থাকবে।’ কিন্তু আমি কী এমন করেছি, যার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে?”

অভিযোগকারীদের কাছে প্রমাণ চেয়েছেন শ্রীজিৎ রায়। এ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমি নাকি ফেডারেশন বিরোধী কথাবার্তা বলেছি। মাদার বডির বিরুদ্ধে কথা বলেছি। সেই কারণেই ওরা কাজ বন্ধ করেছে। আমি যে কথা বলেছি তার প্রমাণ চেয়েছি। গতকাল রাত পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।”

পরিচালক শ্রীজিৎ একজন প্রযোজকও। সংকটে পড়ে ফেডারেশনকে মেইল করেন তিনি। এ বিষয়ে শ্রীজিৎ বলেন, “প্রযোজক হিসেবে আমি ফেডারেশনকে মেইল করে জানিয়েছি, কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মেইলটা কর্মবিরতির বিরুদ্ধেই করা হয়েছে। তারাও আমার মেইলের উত্তর দেয়নি। আমি জানিয়েছিলাম, এর যথাযথ বিচার করুন ও আমার সঙ্গে কাজটা করুন। ২৪ ঘণ্টা হতে চলল, সেই মেইলেরও উত্তর পাইনি।”

শুটিং বন্ধ থাকলে অর্থনৈতিকভাবে লোকসানের মুখে পড়বেন প্রযোজক শ্রীজিৎ। তার ভাষায়, “সেট বানাতে ২০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছি। আমাকে দেখে বুঝতেই পারছেন আমি বিশাল মাপের মানুষ নই। ২০ লাখ টাকা চলে গেলে আমাকে পথে বসতে হবে। আমার পেটে টান পড়বে; সংসারে অসুবিধা হবে।”

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভে এসে নিজের সঙ্গে হওয়া অবিচার নিয়ে কথা বলেন শ্রীজিৎ। লাইভে ‘দাসানি ১’-এ সমবেত হওয়ার ডাক দেন পরিচালক। খবর পেয়েই স্টুডিও পাড়ায় ছুটে যান ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সুব্রত সেন, সম্পাদক সুদেষ্ণা রায়। সংগঠনের কার্যকরী কমিটির সদস্য রাজ চক্রবর্তী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য ও পরমব্রত চ্যাটার্জি প্রমুখ। সকলের মুখে একটাই প্রশ্ন— দোষ কোথায়? কী কারণে হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত? এই ঘটনা তো আগামীতে যে কারো সঙ্গে ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

ডিরেক্টরস গিল্ডের সম্পাদক সুদেষ্ণা রায় বলেন, “প্রথমে কৌশিকের ওপর কোপ, পরে জয়দীপের ওপরে। এভাবে পরিচালকদের কাজ বিনা নোটিশে বন্ধ করে দেওয়ার কোনো মানে নেই। শ্রীজিতের অপরাধটা কী সেটা আমরা আগে জানতে চাই। যদি সত্যিই অপরাধ থাকে তাহলে আমরা প্রত্যেকে ক্ষমা চাইব। কথা বলে মিটমাট করতে চাই। তাই কালকের দিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করব, যদি কিছু সুরাহা হয়।”

সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়ে সংগঠনটির কার্যকরী কমিটির সদস্য অনির্বাণ ভট্টাচার্য বলেন, “এইভাবে হুটহাট কাজ বন্ধ হলে টেকনিশিয়ানদেরও ক্ষতি। তাদের পেট চলে কাজ করে। আমরা অভিযোগ করে অশান্তি করতে চাই না। আলোচনা করে একটা বোঝাপড়ায় আসতে চাই।”

কথার শুরুতে প্রশ্ন ছুড়ে দেন অভিনেতা-নির্মাতা পরমব্রত চ্যাটার্জি। তিনি বলেন, “একজন পরিচালক, প্রযোজক অনেক কষ্টে একটা বিনিয়োগ নিয়ে আসেন। ইন্ডাস্ট্রিতে একটা কাজ শুরু হয়। তাদের সঙ্গে যে এই বৈমাত্রেয় আচরণ, অপমানজনক আচরণের জবাব কে দেবে? এটা আমার প্রশ্ন।”

“শ্রীজিৎ রায় টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে বড় নাম। কোনোটার পরিচালক, কোনোটার প্রযোজক শ্রীজিৎ নিজে। এসব কাজ ঘিরে তিনশ-চারশ লোকের রুজি রোজগার হয়। আজকে সে নতুন একটা সিরিয়াল শুরু করতে যাচ্ছে। তার সেট তৈরি হচ্ছে। একটি গিল্ডের লোকজনদের আসতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে, তারা আসছেন না। প্রতিদিনের সেট ভাড়া, ফ্লোর ভাড়া নষ্ট হচ্ছে। এখানে ভেবে দেখা দরকার, এসবে লাভ বা ক্ষতিটা কার?” বলেন পরমব্রত।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশনা উল্লেখ করে সংগঠনটির কার্যকরী কমিটির সদস্য পরিচালক রাজ চক্রবর্তী বলেন, “আগেও মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘অসুবিধা হলে আলোচনা করা উচিত। কাউকে নিষিদ্ধ, ব্ল্যাক লিস্টেড করা যাবে না।”

Read Entire Article