দিনভর নাটক, নতুন অভিজ্ঞতার পর বিপর্যস্ত ও বিরক্ত দলের এক হয়ে ওঠার

13 hours ago 2
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

তাসকিন আহমেদ হাসছেন। প্রশ্নটা বিব্রতকার। যে কোনো পেশাদার খেলোয়াড়ের জন্য হতাশাজনক। কিন্তু ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার’ অবস্থানে থাকায় সুদর্শন পুরুষের মুখে হাসি ছাড়া আর যে কোনো উপায় নেই!

‘‘আমার জীবনে নতুন একটা অভিজ্ঞতা হলো। ম্যাচের দিন আমরা হোটেল পরিবর্তন করলাম। মাঠে আসার দুই ঘণ্টা আগে শুনলাম বিদেশী ক্রিকেটার কেউ আসবেন না।’’ ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এ-ও সম্ভব?
দুর্বার রাজশাহী দলে খেলে দিনভর যে নাটকের সাক্ষী হতে হয় অধিনায়ককে…এরপর মাঠে নেমে পারফর্ম করে, দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জেতাতেও হয়। নিজের প্রতি বীরত্ব দেখানোর জন্যও তাকে আবার হাসতে হয়।

হাসতে হাসতেই তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সত্যি বলতে, দিনের শুরু থেকে সব খেলোয়াড়রা অনেক ড্রামা দেখেছি। পরবর্তীতে শুনেছি টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে বলা হয়েছে, টাকা দিয়ে বিদেশী ক্রিকেটারদের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু কেউ গেট-ই খুলেনি। শেষ পর্যন্ত আমরা স্থানীয় ক্রিকেটাররাই ছিলাম।’’

ম্যাচের দিন সকালে টিম হোটেল পরিবর্তন। ২০১৩ সাল থেকে পেশাদার ক্রিকেট খেলা তাসকিনের প্রথম অভিজ্ঞতা। গতকাল সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে জানতে পারেন রুম ছেড়ে দিতে হবে।অগ্যতা বেরিয়ে পরেন নতুন গন্তব্যে। সেখানে গিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া করছিলেন। তখনই খবর আসে, দলের বিদেশী ক্রিকেটাররা মাঠে যাবেন না পারিশ্রমিক পাননি বলে। নিজে সতীর্থদের বুঝিয়েও রাজী করাতে পারেননি। পরে বোর্ড থেকে ফোন করে আশ্বস্ত করায় স্থানীয় ১১ ক্রিকেটারকে নিয়ে মাঠে নামতে হয় রাজশাহীকে।

স্থানীয় শক্তিতে বলিয়ান হয়ে মাঠে সত্যি-ই দুর্বার রাজশাহী। টেবিল টপার রংপুর রাইডার্সকে ২ রানে হারিয়ে দেয়। অগোছালো দলে এই জয় স্বস্তির পরশ আসলেও কিভাবে সম্ভব হয়েছে তা জানাতে গিয়ে খোলা মনে তাসকিন বলেছেন, ‘‘টিম অ্যাফোর্ট, সবার অবদান ও দিল (হৃদয়) থেকে চেষ্টা করার রিওয়ার্ডটা শেষে পাওয়া গেছে। শুরুর দিকে আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও বিরক্ত ছিলাম। কিন্তু পরে তো দেখলেনই। জিতে গেলাম আল্লাহর রহমতে।’’

বিপিএল এমনিতেই সমালোচনায় ভরা। নবাগত দল দুর্বার রাজশাহীকে ঘিরে সমালোচনাটা আরো বেশি। অগোছালো পরিবারে নেই একটু স্বস্তি, পেশাদারিত্ব। আজ এই সমস্যা তো কাল ওই সমস্যা। নানা কারণে, নানা জটিলতায় আটকে থাকায় দলটিতে খেলার মানসিকতা ও পরিবেশ থাকে কিনা সেই প্রশ্নও করা হয়েছিল তাসকিনকে। যিনি মাত্র তিন ম্যাচ আগে এনামুল হক বিজয়ের পরিবর্তে দলটির নেতৃত্ব পেয়েছেন।

তাসকিন যা বললেন তাতে দাঁড়ায়, ক্রিকেট আয় রোজকারের তাদের একমাত্র উপায় বলে খেলাটা এখন নিজেদের জন্যই তারা খেলছেন। সামনে তা-ই করবেন।

‘‘আমি আসলে প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করার চেষ্টা করছি। উপভোগ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কেননা ক্রিকেটই আমার ব্রেড অ্যান্ড বাটার। প্যাশন। মাঠে আমরা উপভোগ করেছি সবাই। স্থানীয় ক্রিকেটারদেরও কিন্তু তেমন বড় নাম নেই দুই-তিনজন ছাড়া। বিদেশীরা তো খেলেননি। আমরা সবাই বলেছি, ‘‘লেটস ট্রাই’’। সবাই অনেক ইতিবাচক ছিল। আমি উপভোগ করেছি প্রতিটি মুহূর্ত। সাহস করে করে পরিবর্তন করেছি। যেই যখন বোলিং করেছে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছে। প্রত্যেকেই বুঝেছিল আমাদের হারানোর তেমন কিছু নেই। আমরা আমাদের সেরাটা দিয়ে দেখতে পারি শেষ পর্যন্ত কি হয়। শেষে তো আমাদের পক্ষেই ফল এসেছে।’’

ফ্রাঞ্চাইজি মালিকদের এমন অপেশারিত্বসুলভ আচরণ ক্রিকেটারদের অনুভূতিতে আঘাত আনে জানিয়ে তাসকিন বলেছেন, ‘‘সত্যি বলতে, শুধু আমি না দলের ভেতরে কেউই এরকম যখন ঘটে ভালো অনুভব করে না। বিপিএল আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা। এই টুর্নামেন্টকে ঘিরে আমাদের সবার একটা প্রত্যাশা থাকে যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে থেকে খেলব। যে পরিমাণে ক্রাউড হচ্ছে, আগের চেয়ে জমজমাট বিপিএল হচ্ছে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত আমাদের দলে বেশ কিছু সমস্যা হয়েছিল।’’

খেলাটা এখন তাসকিনদের কেবল নিজেদের জন্যই, ‘‘সবাই মিলে একটা কথাই বারবার বলছিলাম যে, যেহেতু আমাদের সবার নিজেদের প্রমাণ করার জায়গা একটা, যতই সমস্যা হোক এগুলো একটা সাইডে রেখে মাঠে উপভোগ করতে হবে। সবার ব্রেড অ্যান্ড বাটার, ক্যারিয়ার, জাতীয় দল সবকিছু, নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ এটাই। তো এই জিনিসগুলোই আমাদের দলের সবাইকে বুষ্ট আপ করেছে। অনুভূতিটা অবশ্যই নাইস না। এর মধ্য দিয়েও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’’

রাজশাহীর ‘অভাবের সংস্যারে গোবরে পদ্মফুল’ ফোটানোর চেষ্টায় রাজশাহীর অধিনায়ক, ‘‘অনেক কিছু নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। আমার মনে হয় এতো সমস্যার মধ্য দিয়ে, এতো চাপের মধ্যে থেকে খেলাটা ভবিষ্যতে উপকারে আসবে। এতো চাপের মধ্যে ভালো খেললে সামনে খেলাটা সহজ হয়ে যাবে।’’ 
তাসকিন হাসেন। হাসতেই থাকেন। হাসির আড়ালে কষ্ট লুকিয়ে রেখেছেন। ওই কষ্টও আড়াল হয়ে যায় খনিকের জন্য। জয়ের আনন্দে। কিন্তু দাগটা থেকে যায়। হাসিতেও তা মুছে না।

Read Entire Article