ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
জামালপুর পৌরসভার ‘হ্যালো মেয়র’ ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স এখন সিদ্দিক অ্যাম্বুলেন্স নামে ভাড়ায় পরিচালিত হচ্ছে। পৌরসভাকে দান করা ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের অ্যাম্বুলেন্সটি একজন ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে কীভাবে ভাড়ায় পরিচালিত করছে, সে সম্পর্কে কিছুই জানে না পৌর কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় জামালপুর পৌরসভার কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় ও জেলার সচেতন ব্যক্তিরা।
২০২১ সালের ১৯ জুলাই পৌর নাগরিকদের সুবিধার্থে জরুরি ‘হ্যালো মেয়র’ ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করে জামালপুর পৌরসভা। এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের সাবেক সাংসদ মির্জা আজম। জামালপুর পৌরসভার তৎকালীন মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু ব্যক্তিগত অর্থায়নে চালু করেন ‘হ্যালো মেয়র’ অ্যাম্বুলেন্স সেবা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘হ্যালো মেয়র’ ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স চালু হলেও গাড়িটির কোনো কাগজপত্র ছিল না। ৫ আগস্টের পরে একটি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে শহরের বাইপাস মোড়ের একটি গ্যারেজে ঠিক করা হয় অ্যাম্বুলেন্সটি। এর বিল প্রদান করেন সাবেক মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানুর চাচাতো ভাই মো. সিদ্দিকুর রহমান।
সম্প্রতি গাড়িটির কাগজপত্র ঠিক করেন মো. সিদ্দিকুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। গাড়িটির লাইসেন্স নম্বর হয় ঢাকা মেট্রো ছ- ৭১৫১০২। আর গাড়িটির নাম দেওয়া হয় সিদ্দিক অ্যাম্বুলেন্স। গত ১৭ জানুয়ারি থেকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সামনে থেকে ভাড়ায় চলছে গাড়িটি।
শহরের বাইপাস এলাকার মিলন মটরস ওয়ার্কশপের স্বত্বাধিকারী মো. মিলন বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার পর থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি আমার গ্যারেজেই ছিল। কেউ খোঁজ নেয়নি। তাই কোনো কাজ করিনি। একদিন পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কয়েকজন এসে অ্যাম্বুলেন্সটি দেখে যান। এ সময় তারা অ্যাম্বুলেন্সটি অন্য কাউকে দিতে নিষেধ করেন।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘সম্প্রতি গাড়িটি ঠিক করার জন্য সাবেক মেয়র ছানুর গাড়ি তত্ত্বাবধানকারী আশরাফ ভাই ৫০ হাজার টাকা দেন। পরে আমি গাড়ির কাজ শুরু করি। মোট ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বিল হয়। ঠিক করার পরে আশরাফ ভাইয়ের লোক গাড়িটি নিতে আসে। কিন্তু, দিইনি। পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজ সাহেবকে ফোন দিলে তিনি সাবেক মেয়র ছানুর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলেছিলেন। তবে, কিছুই জানাননি। পরে আশরাফ ভাইয়ের লোক এসে গাড়িটি নিয়ে যায়।’’
এ বিষয়ে জানতে আশরাফের মুঠোফোন নম্বরে কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অ্যাম্বুলেন্সের মালিক মো. সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অ্যাম্বুলেন্সের সুপারভাইজার মো. ফারুক বলেন, ‘সম্প্রতি গাড়িটি বাইপাস এলাকার মিলনের গ্যারেজ থেকে আনি। গাড়িটি সিদ্দিক ভাই কিনেছেন। তবে, কার কাছ থেকে; কত টাকায় কিনেছেন সেই সম্পর্কে ধারণা নেই।’’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামালপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘সেই সময়ের মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু জামালপুর পৌরসভাকে অ্যাম্বুলেন্সটি লিখিতভাবে প্রদান করেনি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরে নান্দিনাতে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্সটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি শহরের বাইপাস মোড় এলাকার একটি গ্যারেজে রয়েছে। সেখানে অ্যাম্বুলেন্সটি ঠিক করার কাজ চলছে। অ্যাম্বুলেন্সটি এখনো আমাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।’
‘অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যক্তিগতভাবে ভাড়ায় চলছে’ জানালে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’’
জামালপুর পৌরসভার পৌর প্রশাসক মৌসুমী খানম বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা ছিল না। আপনার মাধ্যমে জানলাম। পৌরসভায় গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’’