বর্ণাঢ্য আয়োজনে মালয়েশিয়ায় চীনা নববর্ষ উদযাপন

1 day ago 1
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

নানান রঙের আতশবাজি ফুটিয়ে জমকালো উৎসবের মধ্যদিয়ে মালয়েশিয়ায় শুরু হয়েছে চীনা নববর্ষ। চীনকে অনুসরণ করে মালয়েশিয়ায় হয় চীনা নববর্ষ উদযাপন উৎসব। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দেশটিতে বসবাসকারী প্রায় ৭৬ লাখ চীনা মেতে উঠবেন ‘কং সি ফা চাই’ উৎসবে।

মঙ্গলবার চীনা নববর্ষে মালয়েশিয়ার মন্ত্রিপরিষদের পক্ষ থেকে, ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানানো হয়। মুসলিম মালায়ু সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়ায় চীনারা দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়। তাদের সবচেয়ে বড় উৎসব চীনা নববর্ষ বা ‘কং সি ফা চাই’। ‘কং সি’র অর্থ ‘টাকা আসুক’ ও ‘কং সি ফা চাই’র অর্থ ‘নতুন বছর আপনার জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনুক’ বা ‘শুভ নববর্ষ’। চীনে এ উৎসবকে ‘ছুন জিয়ে’ বলা হলেও ইংরেজিতে তা ‘স্প্রিং ফেস্টিভাল’ বা ‘বসন্ত উৎসব’ নামে পরিচিত।

বর্ণাঢ্য আয়োজনে মালয়েশিয়ায় চীনা নববর্ষ উদযাপন

চীনা নববর্ষে একটি প্রাণীকে ওই বছরের প্রতীক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এভাবে ১২ বছরে ১২ প্রাণী চক্র হিসেবে প্রতীক হয়ে উঠে। ২০২৫ সালকে ‘সাপ বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

এ উপলক্ষে গত এক সপ্তাহ ধরে মালয়েশিয়ার প্রতিটি প্রদেশ নতুন সাজে সেজেছে। দোকানপাট, বাজার, শপিংমল, অফিস ও আবাসিক ভবনগুলো সাজে সাজানো হয়েছে। সাজের বৈচিত্রের প্রাধান্য পেয়েছে লাল গোলাকৃতির লন্ঠন।

বর্ণাঢ্য আয়োজনে মালয়েশিয়ায় চীনা নববর্ষ উদযাপন

লাল চীনে সর্বাধিক ব্যবহৃত রঙ। এই রঙ আনন্দ, শান্তি, সুখ ইত্যাদির প্রতীক। চীনাদের উৎসবে লালের ব্যবহার বেশি। তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকেও লাল রঙ থাকে। চীনাদের বিশ্বাস লাল রঙ সৌভাগ্যের প্রতীক।

‘সাপ বর্ষ’ সুখ সমৃদ্ধি বয়ে নিয়ে আসবে এ প্রত্যাশায় মালয়েশিয়ায় চীনারা নববর্ষের রাতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে উৎসব পালন করেন। উপহার হিসেবে বড়রা ছোটদের লাল রঙের খামে দেন চীনা মুদ্রা ইউয়ান। যা অনেকটা মুসলমানদের ঈদ বকশিসের মতো।

মালয়েশিয়ায় সবচেয়ে বড় ছুটিও মেলে চীনা নববর্ষের সময়। সরকারিভাবে ২ দিন ছুটি থাকলেও চীনারা তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখেন ১ থেকে ২ সপ্তাহ।

বর্ণাঢ্য আয়োজনে মালয়েশিয়ায় চীনা নববর্ষ উদযাপন

নিজেদের বছরের সেরা উৎসব ও লম্বা ছুটি থাকায় এই উৎসবে অধিকাংশ চীনা শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে উদযাপন করেন ‘কং সি ফা চাই’।

হাত জোড় করে মাথা নুয়ে একজন আরেকজনকে বলেন, ‘কং সি ফা চাই’। একজন আরেকজনের সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করেন। বিবাহিত চীনারা ছোটদের ‘আমপাও’ বা বখশিশ দেন। সম্পর্ক বুঝে এই বখশিশ ৫-১০ রিঙ্গিত থেকে কয়েক শ বা কয়েক হাজার রিঙ্গিতও হয়। ‘আমপাও’ হিসেবে কত রিঙ্গিত দেওয়া হয়েছে তা দেওয়ার সময় বোঝা যায় না।

বখশিশ দেওয়ার জন্য আছে বছরের প্রতীক প্রাণীর ছবিওয়ালা লাল রঙের প্যাকেট। যেমন এ বছরের প্যাকেটের গায়ে আছে খরগোশের ছবি। এই প্যাকেটে বখশিশের নোট দিয়ে মুখ আটকিয়ে দেওয়া হয়। পরে প্যাকেট খুললেই জানা যায় বখশিশ হিসেবে কত রিঙ্গিত পাওয়া গেছে।

বর্ণাঢ্য আয়োজনে মালয়েশিয়ায় চীনা নববর্ষ উদযাপন

চীনা নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে কমলা। কাউকে কমলা উপহার দিলে ‘সৌভাগ্য’ আসে এমনই বিশ্বাস চীনাদের। চীনা নববর্ষ শুরুর ২-৩ সপ্তাহ আগে থেকে চীনাদের যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কমলা থাকবেই। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ক্রেতাদের তারা ১-২টি কমলা উপহার দেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের দেন ১-২ প্যাকেট কমলা। প্রতি প্যাকেটে ২০ থেকে ২৫টি কমলা থাকে।

মালয়েশিয়ায় ফলের মধ্যে সারা বছর মাল্টা দেখা গেলেও কমলা তেমন দেখা যায় না। সারা বছর যিনি একটি কমলাও খাননি, তিনি চীনা নববর্ষে সাধারণত অনেকগুলো কমলা খান। চীনা মালিকের অধীনে কাজ করা প্রবাসীদেরও প্যাকেটভরা কমলা উপহার দেওয়া হয়।

বর্ণাঢ্য আয়োজনে মালয়েশিয়ায় চীনা নববর্ষ উদযাপন

প্রতি বছরই প্যাকেটগুলো থাকে লাল রঙের। যারা মালায়ু বা তামিল মালিকের অধীনে কাজ করেন তারাও তাদের চীনা মালিকের অধীনে কাজ করা বন্ধুদের কাছ থেকে কমলা পান।

চীনা মালিকেরা সাধারণত তাদের অধীনে কাজ করা শ্রমিকদের বোনাস দেন। মালয়েশিয়ায় বছরের অন্যতম আনন্দঘন সময় উদযাপিত হয় ‘কং সি ফা চাই’ উৎসবে। চীনাদের পাশাপাশি সবাই এই উৎসবে আনন্দময় সময় কাটান। মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বাদ যান না চীনা নববর্ষের আনন্দ থেকে।

এমআরএম/এএসএম

Read Entire Article