ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম উদীয়মান অর্থনীতির দেশ মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে দীর্ঘদিনের গভীর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে মালয়েশিয়াই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭২ সালে দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পর থেকে দেশ দুটির পারস্পরিক সহযোগিতার হাত ধীরে ধীরে আরও সুদৃঢ় হয়েছে। উভয় দেশ কমনওয়েলথ অব নেশনস, অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি), উন্নয়নশীল ৮টি দেশ, জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনের সদস্য।
অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম দেশ মালয়েশিয়া। বিশ্বের একটি বড় বাণিজ্য দেশ হওয়ায় মালয়েশিয়া আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত হয়। বিনিয়োগবান্ধব দেশটির প্রযুক্তিখাতে যুক্তরাষ্ট্র-চীনসহ বিভিন্ন দেশের কোম্পানিগুলোর রয়েছে বিপুল বিনিয়োগ। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশটির সেমিকন্ডাক্টর খাতে অন্তত ২১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন, এনভিডিয়া, গুগল ও মাইক্রোসফট। অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এসেছে ডেটা সেন্টারে। এর পাশাপাশি সিঙ্গাপুর-চীনের বিপুল বিনিয়োগ আছে দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ হারে করারোপ করবেন। এই করের বোঝা থেকে মুক্ত হতে চীন মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগ বহুগুণে বাড়ানোর চিন্তা করছে। গত কয়েক দশকে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধের সবচেয়ে সুবিধাভোগী দেশগুলোর একটি হলো মালয়েশিয়া।
উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি। এ ছাড়া এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। পাশাপাশি সম্প্রতি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার বাংলাদেশেরও লক্ষ্য উন্নত রাষ্ট্রের তালিকায় নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়া। উভয় দেশ তাই নিজেদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রগুলো ক্রমশ সম্প্রসারিত করছে।
গত অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরে আসা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পুরোনো বন্ধু আনোয়ার ইব্রাহিমকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রাজনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ—এই তিন মূল ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আসিয়ানে বাংলাদেশের ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ হওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে উত্থাপন করা হয়। কেননা এ বছর মালয়েশিয়া আসিয়ানের সভাপতির দায়িত্বভার নিতে যাচ্ছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ‘কমপ্রিহেনসিভ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ’ এবং বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার কোম্পানি ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর সমস্যা দ্রুত সমাধান করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বৈঠক শেষে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, ‘আমার পুরোনো বন্ধু এবং বাংলাদেশের পুরোনো বন্ধু আসায় আমি খুবই খুশি’। অন্তর্বর্তী সরকারে ড. ইউনূসের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই ছিলো প্রথম কোনো দেশের সরকারপ্রধানের বাংলাদেশ সফর। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা করেন তারা। এ সময় আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, বাংলাদেশের কর্মীদের দুই দেশের অর্থনীতিতে অবদান গুরুত্বপূর্ণ। টিকিট জটিলতায় মালয়েশিয়া যেতে না পারা ১৮ হাজার শ্রমিককে সব সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি। তিনি আরও জানান এই অঞ্চলকে শান্তিপূর্ণ দেখতে আসিয়ানকে আরো কার্যকর করতে চায় মালয়েশিয়া। তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করেন এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বৈঠকে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি, কর্মসংস্থান তৈরি, ভিসা সহজীকরণ এবং উচ্চশিক্ষা, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে হৃদ্যতামূলক আলাপ-আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার মধ্যে এই বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক নতুন নয়। ১৯৭২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয় মালয়েশিয়া। ১৯৯৯ সালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বাংলাদেশ সফর করেন। এর পরের বছর প্রথম মালয়েশিয়ায় সরকারি সফরে যান বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৩ সালের নভেম্বরে সরকারি সফরে ঢাকায় এসেছিলেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। এরপর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় বার মালয়েশিয়া সফরে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। নাজিব রাজাকের সফরের প্রায় ১১ বছর পর গত অক্টোবরে বাংলাদেশ সফর করে গেলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। তার এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরো দৃঢ়তার দিকে এগিয়ে যাবে—-এমনটাই প্রত্যাশা।
এর আগে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মালয়েশিয়ার প্ল্যান্টেশন, শিল্প ও পণ্যবিষয়ক মন্ত্রী দাতুক মাজাহ জুরাইদা বিস্তি কামারুদ্দিন বাংলাদেশ সফরে এসে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ করে পাম ও অন্যান্য শিল্পে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হন। এ সময় বাণিজ্য ও পাম শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ সরকার ও ব্যবসায়িক খাতের প্রচেষ্টা যেমন বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় যৌথ উদ্যোগ, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিনিয়োগের সুযোগ এবং মালয়েশিয়ার জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সুবিধা সম্পর্কে মালয়েশিয়ার মন্ত্রীকে অবহিত করা হয়। সে বছরেরই মার্চ মাসে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করা হয়।
বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার বন্ধু রাষ্ট্র ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবসায়িক অংশীদার। উভয় দেশের চলমান ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে মালয়েশিয়ার অবস্থান নবম। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক, পাটজাত পণ্য, প্লাস্টিক, হালকা যন্ত্রপাতি ও চামড়াজাত পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুইদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩.৮৬ বিলিয়ন মর্কিন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৩৭১.৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১০ সালে যা ছিল মাত্র ৫৬ মিলিয়ন ডলার। যা থেকে দু’দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক আঁচ করা যায়। রপ্তানি বাণিজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য আমদানিকারক উৎস দেশ হিসেবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে চীন ও ভারতের পরেই ৩য় দেশ হিসেবে মালয়েশিয়ার অবস্থান।
বাংলাদেশ ৬৫ ধরনের বিভিন্ন পণ্য মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করে থাকে। রপ্তানি আয়ের বড় আয় আসে তৈরি পোশাক খাত হতে। এ ছাড়াও শাক-সবজি, খাদ্যসামগ্রী, মাছ, সিরামিক পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, পাটজাত পণ্য, খেলনা, মেশিনারিজ পণ্য প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য রপ্তানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে, অনেকগুলোর কাজ প্রায় শেষের পথে। যাতে অবকাঠামোসহ সব ধরনের সমস্যা দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এসব ইকোনমিক জোনে মালয়েশিয়া ফার্নিচার, কৃষিপণ্য প্রসেসিংসহ সংশ্লিষ্ট শিল্প খাতে বিনিয়োগ করলে আরও বেশি লাভবান হবে।
বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির বড় বাজারও দেশটি। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী মালয়েশিয়ায় ২৮ হাজারেরও অধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। তাদের মাধ্যমে বিস্তৃত হচ্ছে দুই দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধন। এছাড়া উপযোগী ও অনুকূল পরিবেশ থাকায় প্রতি বছর দেড় লাখেরও বেশি বাংলাদেশি মালয়েশিয়া ভ্রমণ করেন। মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা ১৪ লক্ষাধিক। ১৯৭৮ সাল থেকে সে দেশে আমাদের শ্রমিক কাজ করতে যাচ্ছেন। সে বছর প্রথম বাংলাদেশের ২৩ জন শ্রমিক মালয়েশিয়াতে যান।
আনুষ্ঠানিকভাবে দুই দেশের সঙ্গে জনশক্তি নিয়োগের চুক্তি হয় ১৯৯২ সালে। বংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানির তালিকায় চতুর্থ দেশ হিসেবে রয়েছে মালয়েশিয়া। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের নয় শতাংশের বেশি শ্রমবাজার। কিন্তু এর পরও এ দেশের শ্রমবাজার নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা টানাপড়েনের ঘটনা ঘটে, যা বন্ধ হওয়া সময়ের দাবি। এ সংক্রান্ত অনিয়ম, প্রতারণা ও দুর্নীতি বন্ধে উভয় সরকারকে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। মূলত সততা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন আমাদের কর্মীরা। এজন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এসব কর্মীর কল্যাণে উভয় দেশকে নিবিড়ভাবে কাজ করে যেতে হবে।
মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম হিসেবে কয়েক হাজার অ্যাপার্টমেন্ট এবং ফ্ল্যাট কিনে রেখেছেন বাংলাদেশি বিত্তশালীরা। শুধু রিয়েল স্টেট খাতই নয়, জমি-জমা লিজ নিয়ে কৃষি খামার বা ডেভেলপমেন্ট ব্যবসা, স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা, হোম সার্ভিস, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, গাড়ি বেচাকেনা বা ভাড়ায় ব্যবসা, আইটি ব্যবসা, ফাস্ট ফুড, কফি সপসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করছেন অনেক বাংলাদেশি।
মালয়েশিয়ায় সম্ভাবনাময় ব্যবসা বাণিজ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন চেইন শপের ফ্যাঞ্চাইজি, ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার, ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট অফিস স্থাপন, সেলুন দোকান, কারওয়াশ, রেন্ট-এ কার, সাইবার ক্যাফে, মোবাইল লোড-ফটোকপির দোকান, টেইলারিং শপ, ফলের দোকান, প্রিন্টিং ব্যবসা ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, একসময় মালয়েশিয়ার অর্থনেতিক অবস্থা বাংলাদেশের মতো থাকলেও বিদেশি বিনিয়োগকারীগণকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হওয়ায় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক বিনিয়োগ আসতে থাকে দেশটিতে। এতে দেশটি দ্রুত উন্নতির দিকে ধাবিত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, মানবসম্পদ, অবকাঠামো প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের মাধ্যমে পরিণত হয় একটি অনুকরণীয় রাষ্ট্রে। মালয়েশিয়ার মতো বিভিন্ন খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীগণকে আকৃষ্ট করে আমাদের দেশেও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ ও কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে বিদেশি বিনিয়োগকারীগণকে আকৃষ্ট করার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে না উঠলে আমাদের দেশে ক্রমবর্ধমান উচ্চশিক্ষিত বেকার সমস্যার সমাধান এবং উৎপাদন ও আয়স্তর বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়।
মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড বা ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো যেভাবে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারছে, আমরা কিন্তু সেভাবে বিনিয়োগকারীগণকে আগ্রহী করতে পারছি না এবং বিনিয়োগকারীগণ বাংলাদেশেকে বিনিয়োগের জন্য আদর্শ স্থান মনে করছেন না। এটা আমাদের চরম ব্যর্থতা। সুতরাং ১০ থেকে ১২ বছরকে টার্গেট করে দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে বড় পরিকল্পনা করতে হবে। প্রয়োজন বিনিয়োগ বান্ধবনীতি প্রণয়ন ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি। এজন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং অথরিটি (বেপজা) এবং বিভিন্ন জেলার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে আরো গতিশীল ও কার্যকর করা প্রয়োজন। দরকার ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ, স্পেশাল ইকোনমিক জোনসহ দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করা। বাংলাদেশের কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাত, ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীগণকে আকৃষ্ট করা যেতে পারে।
মালয়েশিয়া ২০২২ সালে বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আকৃষ্ট করার জন্য প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার কৌশলগত অর্থ বরাদ্দ দেয়। আমাদেরও এ ধরনের দূরদর্শী পদক্ষেপ নিতে হবে। একজন সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী যাতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা ও তথ্য সহজেই পেতে পারেন, এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনাসহ এ খাতে গবেষণার জন্য অর্থ-বরাদ্দও বাড়াতে হবে। মালয়েশিয়ার উন্নতি সত্যিই প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়।
সর্বোপরি, স্বল্প সময়ে মালয়েশিয়ার অর্থনীতির অভূতপূর্ব উন্নয়নের পেছনে নেওয়া দেশটির পদক্ষেপগুলো বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশেরও উচিত দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা। দেশে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এশিয়ার দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ মালয়েশিয়ার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিসহ (এফটিএ) সম্ভাব্য অন্যান্য সব ক্ষেত্রে দেশটির সঙ্গে সহযোগিতার মাত্রা অদূর ভবিষ্যতে আরও বহুগুণে বাড়বে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী