বাবার হত্যাকারীদের শেখ হাসিনা রক্ষা করেছেন: রেজা কিবরিয়া

1 day ago 3
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

হবিগঞ্জের বৈদ্যেরবাজারে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী ড. এএমএস কিবরিয়াসহ পাঁচজন। এই হত্যাকাণ্ডের ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রকৃতপক্ষে বিচারের কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দল ক্ষমতায় থাকাকালীন তদন্তে অভিযুক্তের তালিকা বদল হয়েছে মাত্র। 

গত সোমবার (২৭ জানুয়ারি) পিতার মৃত্যুবার্ষিকীতে এক ভিডিও বার্তা দিয়ে ছয় জনকে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি ড. রেজা কিবরিয়া। 

সদ্য ক্ষমতাচ্যূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার বাবার খুনীদের রক্ষা করার জন্য দোষারোপ করেছেন। পাশাপাশি সালমান এফ রহমানকে হত্যাকাণ্ডে অর্থের যোগানদাতা হিসেবেও দাবি করেছেন রেজা কিবরিয়া।

ড. রেজা কিবরিয়ার সেই ভিডিও বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো- 

ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, “১৯ বছরে ঠিকমত তদন্ত করা হয়নি। আমি আশা করছিলাম এতদিন পুলিশ আমার সাথে যোগাযোগ করবে, পুনঃতদন্তের ব্যাপারে। কিন্তু তারা করেনি। এটা খুব দুঃখজনক।

“আমি জানি এমন কেস অনেক পড়ে আছে। যেমন সাগর-রুনি, মুনিয়া, তারপর বিডিআর হত্যা, অনেক কেস আছে। শত শত কেস আছে বাংলাদেশে। কিন্তু আমার বাবারটাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”

পিতার হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছয় জনকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়ে তিননি বলেন, “এর মধ্যে এক নাম্বার শেখ হাসিনা। উনি কতটুকু জানতেন, কতটুকু তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত, আমি জানি না। কিন্তু আমি জানি যে, হত্যাকাণ্ড যারা করেছে, তাদেরকে রক্ষা করার জন্য উনি ১৫/১৬ বছর সব কাজ করে গেছেন। ঠিকমতই কাজ করে গেছেন, ওই খুনীদের পক্ষে।

“দ্বিতীয় হলেন সালমান এফ রহমান। আমি যতদূর জানি, এই হত্যাকাণ্ডের আর্থিক যতটুকু সাহায্য প্রয়োজন ছিল, এটা সালমান এফ রহমান দিয়েছেন।”

তিনি বলেন, “হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের মধ্যে এমপি আবু জাহির (জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য) এবং বানিয়াচংয়ের এমপি (জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান) সেও জড়িত ছিলেন। সে মামলার বাদী। হবিগঞ্জের এক নেতা, তার নাম ডা. মুশফিক চৌধুরী (জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান), সেও জড়িত। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।” 

বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও হবিগঞ্জের সাবেক মেয়র আলহাজ্ব জিকে গউছকেও জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা বলে তিনি, “হবিগঞ্জের বিএনপি নেতা হলেন আওয়ামী লীগের এমপি আবু জাহিরের ব্যবসায়িক পার্টনার। তারা একসময় মাদকদ্রব্যের ব্যবসা করত। রাজনীতিবিদদের মধ্যে এই কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।” 

এছাড়াও হবিগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক এমদাদুল হককেও উল্লিখিত রাজনীতিবিদদের সাথে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা খুব জরুরি বলে মনে করেন রেজা কিবরিয়া।

তিনি মামলার পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সম্পৃক্ততা নিয়ে বলেন, “সে ওই ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ কোন ভূমিকায় ছিল না। যদিও সে জানত হয়তো কিন্তু সে প্ল্যানিংয়ে বা এক্সিকিউশনে, আমি যতদূর জানি, তার কোন ভূমিকা ছিল না। বিএনপি কিছু লোকজনকে ঢুকিয়েছে, যারা কিছুই জানত না। তাদেরকে জাস্ট ঢুকিয়ে দিয়েছে কেইসে।”

তিনি আরো বলেন, “আওয়ামী লীগের সিস্টেম হলো- কোন ক্রাইম হলে, কোন অপরাধ হলে বিএনপির কাছাকাছি কোন শত্রুকে তারা ঢুকিয়ে দেয়। এটা তাদের সিস্টেম। আমরা সত্যটা চাই। যেই দলেরই হোক না কেন, কারা জড়িত ছিলো, ওই ছয়জনকে রিমাণ্ডে নিয়ে সিরিয়াস জিজ্ঞাসাবাদ করলে, আসল তথ্যটা আমরা পাব। আমরা ২০ বছর পরে আসল বিচারের যে একটা রেজাল্ট তা আমরা দেখতে পাব বাংলাদেশে।”

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়া। সভা শেষে ফেরার সময় দুর্বৃত্তদের গ্রেনেড হামলায় তিনি ও তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুর হুদাসহ মোট পাঁচ জন নিহত হন। এতে আহত হন অন্তত ৫০ জন। 

ওই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু দফায় দফায় বেড়াজালে আটকে থাকে তদন্ত। যে কারণে বিচারকার্যে দীর্ঘসূত্রীতা পরিলক্ষিত হয়। বর্তমানে এই মামলা সিলেট বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।

Read Entire Article