রাজশাহীর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি বাতিলে আলটিমেটাম

2 hours ago 2
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদ্য ঘোষিত রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমিটি প্রত্যাখান করেছেন কিছু শিক্ষার্থী। আওয়ামী দোসর, চাঁদাবাজ এবং হত্যা মামলার আসামিও কমিটিতে স্থান পেয়েছেন বলে তাদের অভিযোগ। তারা কমিটি বাতিলের জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় নগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে সংবাদ সম্মেলন করে এই আলটিমেটাম দেন তারা। এর আগে বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা ও মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত নগর কমিটির সদস্য সাফিউল ইসলাম অনিক ও আরিবুল ইসলাম আবিরও উপস্থিত ছিলেন। তারা ইতোমধ্যে কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিক্ষার্থী জুবায়ের রশিদ। তিনি বলেন, “একটি স্বার্থান্বেষী মহল জুলাই বিপ্লবের প্রকৃত নায়কদের মাইনাস করে, ৫ আগস্টের পর সুবিধাভোগী কিছু অনুপ্রবেশকারীর মাধ্যমে প্রহসনের পকেট কমিটি গঠন করেছে। জেলা ও মহানগরের কমিটিতে আন্দোলনের প্রকৃত বিপ্লবী এবং নির্ভরযোগ্য নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে চেতনাবিরোধী, বহিরাগত ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। আন্দোলনবিরোধী এসব ব্যক্তি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাজারে চাঁদাবাজি, ক্ষমতার দখল এবং সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত।”

তিনি বলেন, “ফাতিন মাহাদী ও মাহিন সরকার মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই কমিটি গঠন করেছে। আরও উদ্বেগের বিষয়- এই কমিটির নেতৃত্বে এমন অনেককে রাখা হয়েছে যারা সরাসরি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এমনকি আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদের ছাত্র সংগঠনের মূল নেতৃত্বকারীদেরও এই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে।”

জুবায়ের বলেন, “যারা রাজশাহীর বাইরে ছিল, আন্দোলনে সম্পৃক্তই ছিল না- তাদেরকেও কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। অথচ প্রকৃত লড়াকু যোদ্ধাদের নাম সেখানে নেই! এটি সরাসরি জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অপমান এবং রাজশাহীর ত্যাগী ছাত্র-জনতার সঙ্গে প্রতারণার শামিল। একজন হত্যা মামলার অন্যতম আসামিকে এই কমিটির শীর্ষ পদে রাখা হয়েছে, যা এই কমিটির প্রকৃত উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দেয়। এরা আন্দোলনের চেতনা বিকৃত করে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত স্বার্থসিদ্ধির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।”

অভিযোগ করে আরও বলা হয়, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার ও তার সহযোগী কিছু ভুয়া সমন্বয়কের নেতৃত্বে প্রকাশিত এই কমিটি ঘোষণার সাথে তাদের প্রত্যক্ষ যোগসাজশ রয়েছে, যা আমাদের ক্ষোভ ও হতাশা আরও গভীর করেছে। আমরা রাজশাহীর ছাত্রসমাজ এই অবৈধ পকেট কমিটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি বাতিল করার জন্য কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল, আব্দুল হান্নান মাসুদ, হাসনাত আব্দুল্লাহ, উপদেষ্টা  নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ভাইয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”

কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে জুবায়ের রশিদ বলেন, “রাজশাহীর সর্বস্তরের ছাত্রসমাজ এই পকেট কমিটিকে সম্পূর্ণভাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছে এবং একইসাথে রাজশাহীর মাটিতে মাহিন সরকার ও সালাউদ্দিন আম্মারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। এই আন্দোলন হাজারো শহীদের আত্মদানের ফসল, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার প্ল্যাটফর্ম নয়। রাজশাহীর ছাত্রজনতা জুলাই বিপ্লবের চেতনা রক্ষায় যে কোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত।”

সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, “যে ১৫-২০ জন সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাদের আমি ভাল করেই চিনি। তারা আন্দোলনে ছিল এতে কোনো সন্দেহ নেই। অনেককেই জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তারা কিন্তু তখন কমিটিতে থাকতে চায়নি। এখন সংবাদ সম্মেলন করছে। লিখিত বক্তব্য পাঠ করা ব্যক্তি জুবায়ের রশিদ  মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুনুর রশিদের ছেলে। তার পাশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিল।”

আম্মার বলেন, “কমিটি একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে হয়েছে। ঢাকা থেকে বিভাগীয় প্রতিনিধি এসেছিল। সেখানে তারা বিভাগীয় প্রতিনিধি ফাতিনের ওপর হামলা করে। তিনমাস ধরে জেলা-উপজেলায় সার্ভে করেই কমিটি দেওয়া হয়েছে। আমি এই কমিটি গ্রহণ করছি। কারণ, আগের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আর এখনকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক নয়।”

Read Entire Article