সিলিকা বালু উত্তোলন: চা বাগানে বসত ভিটা হারানোর শঙ্কায় ৬ পরিবার

6 hours ago 1
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না হবিগঞ্জের রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশে সিলিকা বালু উত্তোলন। প্রকাশ্যে দিনে-রাতে ডজনের বেশি ড্রেজার মেশিন দিয়ে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী একটি চক্র বালু তুলছে। 

এতে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়ের পাশাপাশি জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি চা বাগানের একটি বস্তিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে চা বাগানের কয়েকটি পরিবারের লোকজন বসতভিটা হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন।

শিবলাল মুণ্ডা দেউন্দি চা বাগানের ৮নং বস্তির বাসিন্দা। ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তির নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। আশপাশের কয়েকটি গ্রামে শ্রমিকের কাজ করে পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম শিবলাল মুণ্ডার সংসারে সদস্য সংখ্যা আটজন। একে সংসার চালানো দায়, তার মধ্যে পড়েছেন বসতভিটা হারানোর শঙ্কায়।

শিবলাল মুণ্ডা বলেন, “বালু উত্তোলনের কারণে ইতোমধ্যে ভাঙনে বিলীন হয়েছে বাড়ির উঠোন। যে কোনো সময় আশ্রয়স্থল বসতভিটাও ভেঙে পড়তে পারে। বালুখেকো চক্রের লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদ করার কোন সুযোগ নেই।”

সরেজমিনে দেখা যায়, চুনারঘাট উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের পানছড়ি মৌজার রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশ গাধাঁছড়া এলাকায় বিকট শব্দে চলছে ডজনখানেক ড্রেজার মেশিন। এতে ওই এলাকায় অনেকগুলো বড় বড় গর্তে তৈরি হয়েছে। অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে সংরক্ষিত রঘুনন্দন পাহাড়ের একাধিক টিলায়। দেউন্দি চা বাগানের ৮নম্বর বস্তিতে ভাঙন দেখা দেওয়ায় বসতভিটা হারানোর শঙ্কায় পড়েছে অন্তত ছয়টি পরিবার। 

ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে

ভাঙনের শঙ্কায় থাকা চা বাগানের বাসিন্দারা জানান, সংরক্ষিত রঘুনন্দন বনের টিলা কেটে বালু উত্তোলন করায় পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা দায়ের করা হয়ছে। তবু থেমে নেই বালু উত্তোলন। জামিনে এসে আবারও সিলিকা বালু উত্তোলনে জড়িয়ে পড়ছেন আসামিরা। 

তাদের অভিযোগ, পানছড়ি এলাকার আসমত উল্লাহর ছেলে আমজত উল্লাহর নেতৃত্বে প্রত্যক্ষ সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন একই এলাকার সফর আলীর ছেলে মাহফুজ মিয়া, স্থানীয় ইউপি সদস্য ফয়েজ মিয়া, তাজম হোসেনের ছেলে সুজন মিয়া, রফিক মিয়ার ছেলে কাউসার মিয়া এবং তাহির মিয়ার ছেলে সাইদূর রহমান। 

এছাড়া উত্তোলনকৃত বালু পরিবহনে কাজ করছেন চুনারুঘাট উপজেলার মহিমাউড়া গ্রামের সৈয়দ মিয়ার ছেলে কালাম মিয়া, সবুজ মিয়ার ছেলে বশির মিয়া, আব্দুল হাই-এর ছেলে বিলাল মিয়া, লাদিয়া এলাকার খবির মিয়ার ছেলে রিপন মিয়াসহ অন্তত ২০-২৫ জন।

পরিবেশ অধিদপ্তর হবিগঞ্জ কার্যালয়ের পরিদর্শক হরিপদ চন্দ্র দাস জানান, ইতোমধ্যে ২১ জনের নামে একটি মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।

চুনারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রবিন মিয়া বলেন, “আমরা নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের থামাতে আরো কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে উচ্চপর্যায়ে আলাপ করব।”

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘‘ড্রেজার মেশিন দিয়ে মূল্যবান সিলিকা বালু উত্তোলনের ফলে পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতি মারাত্মকভাবে ধ্বংস হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এদেরকে থামানো না গেলে পরিবেশে বিপর্যয় নেমে আসবে। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”

Read Entire Article