ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
আদালতের আদেশ অগ্রাহ্য করে ভেনেজুয়েলার একটি গ্যাংয়ের অভিযুক্ত সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। হোয়াইট হাউজ নজিরবিহীন এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রেসিডেন্টের কাজে বাঁধা দেওয়ার ক্ষমতা একজন বিচারকের নেই।
সোমবার (১৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিয়াভিট বলেছেন, মার্কিন ভূখণ্ড থেকে বহিষ্কৃত বিদেশি সন্ত্রাসী বহনকারী উড়োজাহাজের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার কোনো অধিকার একজন বিচারকের নেই।
ভেনেজুয়েলান অপরাধচক্র ত্রেন দে আরাহুয়ার দুই শতাধিক অভিযুক্ত সদস্যকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্রুত বিতারিত করার জন্য গত শুক্রবার কয়েক শতকের পুরোনো ভিনদেশি শত্রু আইন বা এলিয়েন এনেমিস অ্যাক্ট ব্যবহারের নির্দেশ দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটি যুদ্ধকালীন আইন হিসেবে পরিচিত।
তবে পরদিন ওয়াশিংটনের কেন্দ্রীয় সরকারের বিচারক জেমস বোসবার্গ ১৭৯৮ সালের ওই ভিনদেশি শত্রু আইনের ব্যবহার ১৪ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। তার বক্তব্য ছিল, এই আইনে অন্য দেশের দ্বারা সংঘটিত এমন ‘শত্রুতাপূর্ণ কর্মকাণ্ডকে’ বোঝানো হয়েছে, যা ‘যুদ্ধের সমতুল্য’।
একজন প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্রনীতিতে বিচারবিভাগ চাইলেই হস্তক্ষেপ করতে পারে না দাবি করে রবিবার (১৬ মার্চ) হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিয়াভিট বলেছেন, স্থগিতাদেশ দেওয়ার জন্য আদালতের কোনো আইনি এখতিয়ার নেই।
রয়টার্স বলছে, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে মার্কিন সাংবিধানিক ব্যবস্থায় ক্ষমতার ভারসাম্য ও বিচারবিভাগের স্বাধীনতার প্রতি প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানালেন ট্রাম্প।
এই বিষয়ে ক্যাট ইনস্টিটিউটের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও নাগরিক অধিকার বিশেষজ্ঞ প্যাট্রিক এডিংটন বলেছেন, হোয়াইট হাউজ যেভাবেই পুরো বিষয়টা উপস্থাপনের চেষ্টা করুক না কেন, তারা যে বিচারকের আদেশ সরাসরি অগ্রাহ্য করেছে, এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। মার্কিন সরকারের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য উপেক্ষা করার এমন নজির গৃহযুদ্ধের পর আর দেখা যায়নি বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের এল সালভাদরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী অন্য দেশের অপরাধীদের এল সালভাদরের কারাগারে রাখার জন্য গত মাসে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি চুক্তি হয়েছে।
শনিবার (১৫ মার্চ) এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলে যুক্তরাষ্ট্রের বিচারকের নির্দেশ নিয়ে কিছুটা ঠাট্টার সুরে বলেছেন, ‘উফ... অনেক দেরি হয়ে গেছে’। পোস্টের সঙ্গে তিনি একটি ভিডিও যুক্ত করেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, হাত-পা বেঁধে বিমান থেকে সশস্ত্র কর্মকর্তারা লোকজনকে নিয়ে যাচ্ছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিত্র বুকেলে আরো বলেছেন, আটককৃতদের তাৎক্ষণিকভাবে এল সালভাদরের কুখ্যাত মেগা-জেল টেরোরিজম কনফাইনমেন্ট স্টোরে (সেকোট) স্থানান্তর করা হয়েছে। এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তাদের ‘এক বছরের জন্য’ সেখানে রাখা হবে এবং এটি ‘নবায়নযোগ্য’ হতে পারে।
রবিবার (১৬ মার্চ) আদালতে দাখিল করা একটি নথিতে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, বিচারকের আদেশের আগেই ‘কিছু’ বিতারিতদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, আদালতের আদেশটি আমলে নেওয়া হয়নি, কারণ ফ্লাইটগুলো ইতিমধ্যেই ‘আন্তর্জাতিক জলসীমার উপর দিয়ে’ ছিল।
তবে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলা বেশ কয়েকজন আইন বিশেষজ্ঞ এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক স্টিভ ভ্লাদেক বলেছেন, একটি ফেডারেল আদালতের ক্ষমতা জলসীমায় আটকে থাকে না। প্রশ্ন হলো, আসামিরা আদালতের আদেশের অধীন কিনা, যেখানে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে সেই আচরণটি সংঘটিত হয় না।
কার্ডোজো ল স্কুলের অধ্যাপক এবং অভিবাসন প্রয়োগকারী বিশেষজ্ঞ পিটার মার্কোভিটজ বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ আদালতের আদেশ ‘স্পষ্টতই লঙ্ঘন’ করেছে।
আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করে কোনো অভিবাসীকে অপসারণ করেনি, ট্রাম্প প্রশাসনকে তা নিশ্চিত করতে বলেছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ)।
এসিএলইউ-এর প্রধান আইনজীবী লি গেলার্ট রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আদালতের আদেশের পরে যদি কাউকে কোনো বিদেশি সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়, তাহলে আমরা আশা করব যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেই বিদেশি সরকারের সঙ্গে কাজ করে ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনবে।”