ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোয় সাময়িকভাবে হামলা বন্ধে সম্মতি

14 hours ago 5
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা ফোনালাপের পর তার দেওয়া ইউক্রেনে তাৎক্ষণিক ও পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কেবল ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোয় চলমান হামলা সাময়িকভাবে বন্ধ করতে সম্মত হয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি সৌদি আরবে এক বৈঠকে ট্রাম্পের প্রতিনিধি দল ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার এক মাসের পূর্ণ যুদ্ধবিরতির যে পরিকল্পনা করেছিল তাতে স্বাক্ষর করতে রাজি হননি পুতিন। তিনি বলেন, একটি শর্তেই পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা সম্ভব হতে পারে। আর তা হলো– ইউক্রেনকে বিদেশি সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।

যদিও ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা এর আগেও এই শর্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তিন বছর ধরে চলমান এই সংঘাতের মধ্য দিয়ে রাশিয়া সম্প্রতি তাদের কুরস্ক অঞ্চলের কিছু এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে, যা ছয় মাস আগে ইউক্রেনীয় বাহিনীর দখলে চলে গিয়েছিল।

এদিকে গতকাল ট্রাম্প এবং পুতিনের মধ্যকার ফোনালাপ নির্দেশ করছে যে এক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে যে অবস্থানে ছিল, এখন তারা তা থেকে কিছুটা সরে এসেছে। যদিও দুই নেতা একটি বিষয়ে রাজি হয়েছেন যে মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত নতুন শান্তি আলোচনা শুরু হবে।

গত মঙ্গলবার যখন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধি দল জেদ্দায় ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন, তখন কিয়েভ যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়– যাতে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে হামলা বন্ধের বিষয়টি ছিল।

গতকাল মঙ্গলবার ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ শেষ হওয়ার পরপরই ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে সরকারি সফরে গেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, জ্বালানি অবকাঠামো রক্ষা করবে এমন সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি ইউক্রেন। তবে এ ব্যাপারে তারা আরও বিস্তারিত জানতে চায়।

পরে তিনি আরও অভিযোগ করেন যে ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর ইউক্রেনে একের পর এক ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের এই নেতা জানান, দেশটির সুমি শহরের একটি হাসপাতাল ও স্লোভিয়ানস্কের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

পুতিন স্পষ্টতই পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছেন উল্লেখ করে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করেন, দুঃখজনকভাবে, আরও কিছু হামলা হয়েছে। বিশেষ করে বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর।

অন্যদিকে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ফোনালাপকে ‘খুব ভালো ও ফলপ্রসূ’ বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, শান্তি চুক্তির অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি তার পোস্টে বলেন, অবকাঠামো ও জ্বালানিতে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে রাশিয়া। এটাই প্রথমে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি, পরবর্তীতে এই ভয়াবহ যুদ্ধের সমাপ্তির দিকে এগোবে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন, ইউক্রেনের ৮০ শতাংশ জ্বালানি অবকাঠামো রাশিয়ার বোমাবর্ষণে ধ্বংস হয়ে গেছে। ইউক্রেনও পাল্টা আক্রমণ হিসেবে রাশিয়ার অভ্যন্তরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, বিশেষ করে তেলের শোধনাগার ও গ্যাস স্থাপনাগুলোয়।

জেদ্দায় অনুষ্ঠিত গত সপ্তাহের বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছিলেন, বল এখন রাশিয়ার কোর্টে। কারণ ইউক্রেন এরই মধ্যে পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে গ্রহণ করেছে। কিন্তু মঙ্গলবার ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের পর হোয়াইট হাউজ যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে ইউক্রেনের সঙ্গে আগের ওই চুক্তির কোনো উল্লেখ নেই।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই নেতা সম্মত হয়েছেন যে, জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শান্তির পথে অগ্রগতি শুরু হবে। এর পর কৃষ্ণসাগরে একটি সামুদ্রিক যুদ্ধবিরতি এবং পরে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তি নিয়ে আলোচনা হবে।

কিন্তু ক্রেমলিন তাদের বিবৃতিতে বলেছে যে, ইউক্রেনের সঙ্গে কোনো চুক্তি বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা রয়েছে। কারণ এখানে ইউক্রেনের জন্য বিদেশি সমর্থন ও গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ বন্ধের মতো একটি ‘মূল শর্ত’ রয়ে গেছে। রোববার আবারও জেদ্দায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনা শুরুর কথা রয়েছে।

ট্রাম্প এবং পুতিন দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য কৌশলগত আলোচনায় সম্মত হয়েছেন। তবে এক্ষেত্রে ক্রেমলিন বলেছে, এই আলোচনা বিস্তারিত হতে হবে। তবে এটি স্পষ্ট নয় যে এই দর কষাকষি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে হবে না কি সরাসরি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে হবে।

টিটিএন

Read Entire Article