ইসলামপুরে ঈদের বাজারে ব্যস্ততা, দাম বাড়তি

4 hours ago 1
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

রাজধানীর ইসলামপুরে ঈদকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে পাইকারি পোশাক ও কাপড়ের বেচাকেনা। শিশু থেকে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের পোশাকের পসরা এখানকার মার্কেটগুলোতে। বাজার জমজমাট হলেও রমজানের বেচাকেনা কিছুটা কম। তবে ঈদের বাজার হওয়ায় দোকানগুলোতে শেষ মুহুর্তের ব্যস্ততা দেখা গেছে পাইকারি ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) সরেজমিনে ইসলামপুর ঘুরে দেখা গেছে বাজার অনুযায়ী পোশাকের রয়েছে রকমফের। এই এলাকার অধিকাংশ মার্কেট রয়েছে থ্রি-পিসের পসরা। গুলশান আরা সিটিতে রয়েছে দেশি-বিদেশি থান কাপড়। জাহাঙ্গীর টাওয়ার এবং লায়ন টাওয়ারে পাওয়া যাচ্ছে দেশি-বিদেশি কাপড়ের থ্রি-পিস। আবার নবাব বাড়ি মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে রেডিমেড থেকে শুরু করে সব বয়সের ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য কাটা কাপড়।

এছাড়া ইসলামপুরের রাস্তার দুই পাশে পাওয়া যাচ্ছে দেশি-বিদেশি থান কাপড় থেকে শুরু করে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস এবং ২ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের পোশাক।

ইসলামপুরে ঈদের বাজারে ব্যস্ততা, দাম বাড়তি

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর থ্রি-পিস, শাড়ি, কাটা কাপড়, পঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্টের কাপড়ের চাহিদা ভালো থাকলেও গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইসলামপুরে পাইকারি বাজারে তিন ধাপে বেচাকেনা হয়। রমজানের আগ মুহূর্তে বেচাকেনা হয় সবচেয়ে বেশি। ১০ রমজানের পরে ২০ রমজান পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে বেচাকেনা হয়। ২০ রমজানের পর পাইকারি বেচাকেনা কমে যায়। এসময় খুচরা মালামাল বিক্রি হয়। বর্তমানে ঈদের আগে পাইকারি বাজারের শেষ মুহুর্তের বেচাকেনা চলছে।

বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি ক্রেতাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন জেলা থেকে এসে ইসলামপুরে কাপড় কিনে নিয়ে যান, যা পরে দেশের বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রি হয়। রোজা শুরুর আগে বেচাকেনা বেশ জমজমাট থাকলেও রোজার মধ্যে কিছুটা কমে গেছে।

বাজার ঘুরে ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাচ্চাদের থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ থেকে ১৮০০ টাকায়। পাইকারি প্রতি বান্ডেল বিক্রি হচ্ছে ৪৫০০ থেকে ৮৫০০ টাকায়। বাচ্চাদের এসব থ্রি-পিস, লেহেঙ্গার প্রতিটি বান্ডেল ৩ ধরনের সাইজে এবং দুইটি রংয়ে পাওয়া যায়।

ইসলামপুরের আম্বিয়া টাওয়ারের হাবিব গার্মেন্টসের স্বত্ত্বাধিকারী হাবিব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, রোজার আগে বেচাকেনা ভালোই হয়েছে। তবে ঈদের আগ মুহুর্তে দ্বিতীয় ধাপে বেচাকেনা কিছুটা কমছে। খুচরা বিক্রেতারা রোজার আগে যেসব পণ্য নিয়েছেন সেগুলো শেষ করেই তারা আবার আসেন। কাল থেকে ক্রেতা বাড়তে পারে। আমরাও প্রস্তত রয়েছি।

মা গার্মেন্টসের ম্যানেজার হাশেম খান বলেন, এবার বাচ্চাদের নতুন ড্রেস ফার্সি বেশি বিক্রি হচ্ছে। যার মূল্য ৩০০০ থেকে ৫৫০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে।

গুলশান আরা সিটি মার্কেটের সায়েম সেন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, কাটা কাপড়ের মধ্যে চিলি কাপড় বিক্রি হচ্ছে প্রতি গজ ১৩৫ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত। বয়েল কাপড় রয়েছে প্রতি গজ ১০০ থেকে ১৭০টাকার মধ্যে। টিস্যু কাপড় রয়েছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে।

ইসলামপুরে ঈদের বাজারে ব্যস্ততা, দাম বাড়তি

এই মার্কেটের ব্যবসায়ী রিয়াজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এবার কাপড়ের দাম ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছে। ডলারের দাম বাড়া ও আমদানি খরচ বেশি হওয়ায় আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারছি না।

সাব্বির ফেব্রিক্সের প্রোপাইটর সাব্বির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা কাটা কাপড়ের লেহেঙ্গা, থ্রি-পিস ও পাঞ্জাবির কাপড় বিক্রি করি। বেচাকেনা একটু কম। তবে পর্যাপ্ত পণ্যের যোগান রেখেছি। এবার ইন্ডিয়া থেকে কাপড় আনা ঝামেলা, কেয়ারিং চার্জ বেড়েছে, ডলার সংকট এখনো রয়েছে। ফেন্সি কাপড়, লেহেঙ্গা কাপড় এগুলোর গজ ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে।

পাঞ্জাবির মধ্যে চিকেন কারি প্রতি গজ ৪০০ টাকা ও সিকোয়েন্স পাঞ্জাবি প্রতি গজ ৩৫০ টাকা করে দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর সিকোয়েন্স পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি থাকলেও এ বছর কম। গরমের কারণে এত মোটা কাপড় দিয়ে অনেক পাঞ্জাবি বানাতে চাচ্ছেন না।

এ বছর মহিলাদের জামা ও মেক্সির জন্য লিনেন কাপড়ের গজ বিক্রি হচ্ছে ৯৮ থেকে ১০০ টাকায়। চায়না কাপড় বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়।

ইসলামপুরে মহিলাদের শাড়ির বাজারেও রয়েছে বৈচিত্র্য। বিশেষ করে জামদানি ও কাতান শাড়ির চাহিদা বেশি। বি প্লাস এর শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ৮৫০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত দামে। এছাড়া পাইকারি বাজারে ৫০০ থেকে শুরু করে ৪০০০ টাকার মধ্যে শাড়ি রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ইসলামপুরে চাহিদার শীর্ষে থ্রি-পিস:

ইসলামপুরের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, দেশি কাপড়ের থ্রি-পিস ৫৯০ থেকে ৩২০০ টাকার মধ্যে রয়েছে। এছাড়া ভারতীয় ও পাকিস্তানি থ্রি-পিস রয়েছে ২৫০০ থেকে শুরু করে ৬০০০ টাকার পর্যন্ত। তবে ভারতীয় থ্রি-পিস মাঝারি ধরনের গুলো পাওয়া যাচ্ছে ১২০০ থেকে ২০০০ টাকায়।

শহিদ গার্মেন্টেসের দোকানি জহিরুল বলেন, কয়েক হাজার থ্রি-পিস স্টক করেছি। আমাদের এখানে ৪৫০ থেকে শুরু করে ২০০০ টাকার পর্যন্ত থ্রি-পিস রয়েছে। চাহিদা বেশি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকার থ্রি-পিসের। যেগুলো খুচরা বাজারে ১১০০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

ইসলামপুরে ঈদের বাজারে ব্যস্ততা, দাম বাড়তি

ইনসাফ ফেব্রিক্সের জাহাঙ্গীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, মার্কেটের অবস্থা খুব বেশি ভালো না। যদিও ইসলামপুরে থ্রি-পিস ও শাড়ির চাহিদা অনেক। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যে ব্যবসায়ীরা আসে, তারা আতঙ্কে থাকে। রাতের বেলা যাতায়াতে চুরি-ডাকাতির ভয় থাকে বলে অনেকে এবার জেলা শহর থেকে পাইকারি পোশাক নিচ্ছেন।

বেচাকেনা কম শার্ট-প্যান্টের কাপড়ের:

ইসলামপুরে নারীদের পোশাকের রমরমা ব্যবসা থাকলেও পুরুষদের শার্ট ও প্যান্ট পিসের বেচাকেনা কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আল ইসলাম ফেব্রিক্সের আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, একটা প্যান্ট পিস ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। শার্ট পিস পাওয়া যায় ৫০০-৬০০ টাকায়। মানভেদে বেশি দামের শার্ট ও প্যান্টের কাপড়ও রয়েছে। কিন্ত বেচাকেনা কম। মানুষ এখন রেডিমেড খুঁজে। কাটা কাপড় কিনে কেউ সেলাতে চায়না। যারা চাকরিজীবী তারা ঈদকে সামনে রেখে মোটামুটি প্যান্ট-শার্ট বানান।

কুমিল্লা থেকে আসা এক ব্যবসায়ী জাগো নিউজকে বলেন, শবে বরাতের পর যে পণ্য নিছি সেগুলা বিক্রি প্রায় শেষ। এখন রমজানের শেষ দশ দিনে অনেক বেচাকেনা হয়। সেজন্য থ্রি-পিস, শাড়ি ও লুঙ্গি নিয়েছি। পণ্য আনা নেওয়ার খরচ অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে পাকিস্তানি ও ইন্ডিয়ান থ্রি-পিসের দামও বেশি।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর থেকে আসা ব্যবসায়ী সামাদ বলেন, ২০ রমজানের পর এসে ভালো পণ্য পাওয়া যায় না। তাই আগে পছন্দ করে কিছু পণ্য নিয়েছি। ডলার সংকটের ও ক্যারিং চার্জের অজুহাতে দাম বেশির কথা বলে। কিন্ত বাজারে পণ্যের সংকট নেই। এবার যা নিচ্ছি তা দিয়ে ঈদ পর্যন্ত চলে যাবে।

আরএএস/এএমএ/জিকেএস

Read Entire Article