ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত বেড়ে ৫৩

8 hours ago 4
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন পর্যন্ত এ হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন শিশুও রয়েছে বলে জানিয়েছে হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর স্বাস্থ্য বিভাগ। খবর বিবিসির। 

ওয়াশিংটন জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন হুতি নেতাও রয়েছেন। যদিও হুতি গোষ্ঠী এই বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করেনি। 

হুতি বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, সোমবার (১৭ মার্চ) ভোরে রাতে বন্দরনগরী হুদাইদা এবং আল জাউফ এলাকায় নতুন করে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন বাহিনী শনিবার থেকে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ওপর বড় ধরনের বিমান হামলা শুরু করে। লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলে হুতিদের আক্রমণ বন্ধ করার লক্ষ্যে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে এই অভিযান বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বিবিসি বলছে, গত জানুয়ারি মাসে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর মধ্যপ্রাচ্যে হুতিদের বিরুদ্ধে চলমান এই হামলাই এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান।

হুতি নেতা আব্দুল মালিক আল হুতি বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত মার্কিন বাহিনী ইয়েমেনে আক্রমণ চালিয়ে যাবে, ততদিন পর্যন্ত তার সশস্ত্র বাহিনী লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলোকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করে যাবে।

নিহতের সংখ্যা হালনাগাদ করে হুতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আনিস আল আসবাহি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জানিয়েছেন, পাঁচ শিশু এবং দুইজন নারীসহ ৫৩ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া এতে আহত হয়েছে ৯৮ জন।

দুই সন্তানের বাবা আহমেদ বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, আমি ১০ বছর ধরে সানায় বসবাস করছি, যুদ্ধের গোলাগুলির শব্দ শুনছি। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কসস, এর আগে কখনও আমার এমন কিছুর অভিজ্ঞতা হয়নি।  

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ লোহিত সাগরে হুতিদের হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহতভাবে তাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

ফক্স টেলিভিশনের এক বিজনেস সাক্ষাৎকারে হেগসেথ বলেন, আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এই ক্ষেপণাস্ত্র অভিযান নৌপথের স্বাধীনতা এবং প্রতিবন্ধকতা থেকে পুনরুদ্ধারের অভিযান।

এর আগে গত শনিবার হুতিদের ওপর বিমান হামলার ঘোষণা দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত আমরা আমাদের অপ্রতিরোধ্য প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করবো।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লিখেন, ইরানের অর্থায়নে এই হুথি ডাকাতরা যুক্তরাষ্ট্রের বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং আমাদের সৈন্য এবং মিত্রদের লক্ষ্য করেছে।

তাদের জলদস্যুতা, সহিংসতা এবং সন্ত্রাসবাদের জন্য বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে এবং অনেকের জীবনকে হুমকিতে পড়েছে বলেও লিখেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হুতিদের সরাসরি সম্বোধন করে ট্রাম্প হুমকি দিয়ে লিখেন, যদি তারা না থামে, তোমাদের ওপর ‘নরক বৃষ্টি’ হবে যা তোমরা আগে কখনও দেখোনি।

এদিকে হুতি গোষ্ঠী বলেছে, ইসরায়েল গাজার ওপর থেকে অবরোধ তুলে না নেওয়া পর্যন্ত তারা লোহিত সাগরের জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে এবং তাদের বাহিনী হামলার জবাব দেবে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, ইরানের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণের ওপর নাক গলাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কর্তৃত্ব নেই। রবিবার (১৬ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ইসরায়েলি গণহত্যা এবং সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন বন্ধ করুন। ইয়েমেনি জনগণকে হত্যা বন্ধ করুন। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তেহরানকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দেয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র আপনাদের সম্পূর্ণ জবাবদিহির আওতায় আনবে। এটি কিন্তু আপনাদের জন্য ভালো হবে না।

এক দশকের বেশি সময় ধরে ইয়েমেনে সশস্ত্র সংগ্রাম করছে হুতিরা। ইয়েমেনের অধিকাংশ অঞ্চলই এখন তাদের দখলে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হলে এর প্রতিবাদে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে তারা ১০০ এর বেশি হামলা চালিয়েছে।

এরপর হুতিদের থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে হামলা শুরু হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। তাই নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসে আবারও হুতিদের ওপর হামলার নির্দেশ দিলেন।

Read Entire Article