ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
কৃষকের জমি দখল করে ব্রিজ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। জমি রক্ষায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন মুনছুর আলীর ছেলে মো. পলাশ এক ব্যক্তি।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গ্রামের মুনছুর আলী বিশ্বনাথপুর মৌজায় জমি দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখলসহ চাষাবাদ করে আসছিলেন। হঠাৎ ওই জমিতে ব্রিজ নির্মাণের পায়তারা করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। ব্রিজ নির্মাণে বাধা প্রদান করা হলেও উপেক্ষা করে ওই জমিতে ব্রিজ নির্মাণ করেন তিনি। উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার না মেলায় আদালতে মামলা করা হয়। মামলাটি বর্তমানের আদালতে বিচারাধীন।
জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন গ্রামীণ রাস্তায় ১২ মিটার দৈর্ঘ্য সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন নেয়। কোটি টাকার ব্রিজ নির্মাণ কাজটি পায় গোবিন্দগঞ্জের ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম রফিক। সম্প্রতি ব্রিজের কাজ শেষ করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর ও তালুক রহিমাপুর গ্রামের মাঝামাঝি ফাঁকা জমিতে ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। যা মানুষের কোনো কাজে আসবে না। ব্রিজ যথাস্থানে নির্মাণ না করে কোটি টাকা পানির জ্বলে ফেলে দিয়েছে। সম্প্রতি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে রাতের আধারে বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান দুলু জমি দখল করে ব্রিজের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন যুবক জানান, ব্রিজ নির্মাণ কাজের সময় তারা কয়েকজন গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন। তারা ব্রিজ নির্মাণের ভিডিও ধারণ করে রেখেছেন। সেখানে দেখা গেছে ব্রিজের উইন ওয়ালে রড কম দেওয়া হয়েছে। যাতে এখন ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়া ব্রিজের ছাঁদ ও রেলিংয়ে রড কম দেওয়া হয়েছে। নিম্নমানের কাজ হয়েছে ব্রিজটিতে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়েছে ব্রিজটি। এভাবে অনিয়ম করে কোটি টাকার ব্রিজটিতে অর্ধেক টাকা আত্মসাৎ করেছে ঠিকাদার।
এদিকে নিম্নমানের কাজের একটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ভিডিওটি এ প্রতিবেদকের নিকট সংরক্ষিত রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিস্ত্রি বলেন, নির্মাণকাজ শেষের দিকে কিছু রড কম পড়েছিল। সেদিন কাজের সময় কয়েকজন যুবক মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেছে। রড কমের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, সেটা তিনি ঠিকাদারকে জানিয়েছিলেন।
অপরদিকে উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের দুদাহারা গ্রামের পাশে রাস্তায় প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ব্রিজ অনুমোদন নেয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। কিন্তু ব্রিজটি যথাস্থানে নির্মাণ না করে নির্মিত ব্রিজ থেকে মাত্র ৫০ ফুট দুরে আরেকটি ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে ব্রিজটি জনগণের কোনো কাজে লাগবে না। টাকাগুলো দরিয়ায় ফেলা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছে। এনিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বিধবা নারী মোছা. ইয়াসমিন আক্তারের জমি দখল করে ব্রিজ নির্মাণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে মোছা. ইয়াসমিন আক্তার জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ব্রিজ নির্মাণে ঠিকাদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার কোনো অস্তিত্ব মেলেনি।
ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা যেখানে জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেখানেই ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু থেকেই তিনি সেখানে যাননি। মিস্ত্রিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। হয়তো বা মিস্ত্রি ফাঁকি দিয়ে রড কম দিতে পারে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিন্দার আলী বলেন, কাজ না করলে তো প্রকল্প ফেরত যাবে। আর ওই জমি খাস। যদি রাস্তা না থাকে তবে বিএনপির লোকজন সেটি করে দেওয়ার চুক্তি নিয়েছে।
অপর ব্রিজের বিষয়ে তিনি বলে, এসব ব্রিজ তো আপনাদের কাজে লাগবে। আমি কী টাকা মেরে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি? এখন না হলেও এক সময় ব্রিজগুলো কাজে লাগবে।
এ ব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দুলু বলেন, জমিটি খাস খতিয়ানের। প্রকল্প কর্মকর্তা ব্রিজের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারছিল না। তাই জনস্বার্থে ওই কাজে সহযোগিতা করেছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার এখতিয়ার নেই সেখানে ভূমি অধিগ্রহণ করে সড়ক নির্মাণ করার। দুটি ব্রিজ নির্মাণের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এএইচ শামীম/আরএইচ/জিকেএস