চাষিদের অনুপ্রেরণা ‘বাবু ভাই’

3 hours ago 1
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে হয়েছেন কৃষক। বাবা কৃষি কাজ করতেন, বাবার পেশাতাই তিনি খুঁজে পেয়েছেন জীবনের স্বাদ। 

বাবার রেখে যাওয়া দশ বিঘা কৃষি জমির আয় দিয়ে পঁয়ত্রিশ বিঘায় পরিণত করেছেন। শুধু নিজেই কৃষি কাজ করে সফল হননি, এলাকার শতাধিক কৃষকের নানা আধুনিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান নির্ভর চাষাবাদে উদ্বুদ্ধকরণ এবং পরামর্শ দিয়ে চাষিদের কাছ ‘বাবু ভাই’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন।

মানিকগঞ্জের বেতিলা মিতরা ইউনিয়নের তালিফাবাদ গ্রামের আব্দুল খালেক বাবু। গত একযুগে এ অঞ্চলের চাষাবাদের আধুনিকায়নে চাষিদের এক অনুপ্রেরণার নাম।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, তালিফাবাদ দক্ষিণ চকে চলতি মৌসুমে বিঘার পর বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন আব্দুল খালেক বাবু। চাষাবাদ করেছেন বেগুন, টমেটো, মূলা, ফুলকপিসহ নানা ধরনের সবজি। নিজের জমি দেখভালের সাথে গ্রামের চাষিদেরও দিচ্ছেন নানা পরামর্শ।

অন্যদের সাথে নিজেও জমিতে কাজ করছেন ‘বাবু ভাই’ (কালো সোয়েটার পরা)


তালিফাবাদ গ্রামের চাষি আব্দুল করিম বলেন, “দক্ষিণ চক এলাকায় বাপ-দাদার আমল থেকে লাল বা মাঘী সরিষার আবাদ করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বৃষ্টি হলে ওই সরিষা পড়ে যেত, ফলনও কম হত। কোন রকম আবাদ হলেও লোকসান গুনতে হত। বিঘা প্রতি সরিষা হত দুই থেকে তিন মণ। এ সমস্যা সমাধানে গত এক যুগ আগে আব্দুল খালেক বাবু ভাই বারী-১৭ জাতের সরিষা আবাদ শুরু করেন। এ সরিষা আবাদ করে তিনি সফল হন। পরে এলাকার প্রায় সকল চাষিকেই তিনি এ বীজ সরবরাহ করেন এবং পরামর্শ দেন। তার পরামর্শে এ এলাকায় সরিষা চাষে আমূল পরিবর্তন ঘটে। চাষিরা লোকসানের হাত থেকে বেঁচে যায়।” 

তিনি আরো বলেন, “বাবু ভাই এলাকার চাষিদের মাঝে উন্নত জাতের ভুট্টা, মূলা, গাজর ও আখের বীজ সরবরাহ করায় আগের চেয়ে ফলন বেড়েছে।” 

চাষি আব্দুর রশিদ বলেন, “বাবু ভাইয়ের কাছ থ্যাইক্যা বীছন (বীজ) নিয়া সবজির ফলন ভালো অইছে। কয়েক বছর ধইরা ওনার পরামর্শ নিয়া চাষবাষ করায় লোকসানে পড়তে অইনাই। চাষবাষের বিষয়ে বাবু ভাই নানান পরামর্শ দেন। এইসব পরামর্শে ফলন বাড়ছে।”

দেলোয়ার হোসেন দুলাল নামের আরেক চাষি বলেন, “উন্নত আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভালো ফলন পাব কিনা তা নিয়ে আমরা সংশয়ে থাকতাম। বাবু ভাইয়ের পরামর্শে চাষাবাদে সে সংশয় দূর হয়েছে। তার কাছ থেকে সঠিক পরামর্শ পেয়ে আমরা সুফল পাচ্ছি।”

অন্য কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন ‘বাবু ভাই’


আব্দুল খালেক বাবু বলেন, “শিক্ষিত হলেই যে সরকারি চাকরি করতে হবে এমনটা কখনো ভাবিনি। ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে মাঠে কৃষি কাজ করতাম। লেখাপড়া শেষ করে চাকরির সুযোগ থাকলেও বাবার পেশা কৃষিতে মনোনিবেশ করি। নিজে আধুনিক চাষাবাদ শুরু করি, চাষিদের আধুনিক কৃষিতে উদ্বুদ্ধ করি। আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করায় আমার চাষাবাদে ফলন বাড়ে, লাভও বাড়ে। এতে এলাকার চাষিদের মাঝে উৎসাহ বাড়ে, তারাও নানা পরামর্শ নিয়ে আধুনিক কৃষিতে অভ্যস্ত হচ্ছেন।” 

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটির সমন্বয়কারী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “সমাজে এমন মানুষরাই শেকড়ের মানুষ, মাটির মানুষ। বাবু ভাই চাকরি না করে কৃষিতে জড়িয়েছেন নিঃসন্দেহে তা সমাজকে উপকৃত করেছে, চাষিরা উপকৃত হচ্ছেন। কৃষকদের বাঁচাতে এভাবে সবার এগিয়ে আসা উচিত।”

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আলম বলেন, “মাঠ পর্যায়ে কৃষি অফিস থেকে নানা পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করা হয়। সমাজের অনেক কৃষক অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা জোগান। এসব কৃষকদের আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করি। যেন তার মাধ্যমে আরো কৃষকরা সফল হতে পারেন।”

Read Entire Article