ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
বিলকিস নাহার মিতু
টানা একমাস পরীক্ষা দিয়ে আমাদের সবার মন রিক্ত-শূন্য হয়ে গেছে। হঠাৎ বান্ধবী আনিকা বলল, চল কোথাও ঘুরতে যাই। আমারও খুব ঘুরতে ইচ্ছে করছিল। এর মাঝে আবার প্রাকটিক্যালের প্যারা। খবর পেলাম ক্লাস আর হবে না। সেই আনন্দে শুরু করে দিলাম পরিকল্পনা। জায়গা ঠিক হলো গিলাতলা জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট। যেটা খুলনা-যশোর মহাসড়কের উত্তর দিকে ১৫ কিলোমিটার সামনে।
পরদিন সকালে আকাঙ্ক্ষা টাওয়ারে আমি, বৃষ্টি, আনিকা, সুমি মিলিত হলাম। সুমি আমাদের গাইড দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। সবাই বাসা থেকে খাবার রান্না করে এনেছি। এরপর দৌলতপুর থেকে রওয়ানা দিলাম গিলাতলা জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট। দৌলতপুর থেকে ৩০ টাকা ভাড়া এবং ২০ মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছে গেলাম।
এখানে টিকিট জনপ্রতি ৫০ টাকা। তাই সুমি আমাদের জন্য টিকিট কাটতে গেল। তখন দেখলাম টিকিট কাউন্টারে একটি টিয়া পাখি ‘মিঠু মিঠু’ বলে ডাকছে। টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করেই দেখতে পেলাম চমৎকার একটি সাইকেল। যেটি পুরোটাই রঙিন ফুলে সজ্জিত। সবাই তার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। আশেপাশে অনেকগুলো দোকান আছে। যেখানে কসমেটিকস্ থেকে শুরু করে যাবতীয় কিছু পাওয়া যায়। চোখ সামনে রাখতেই দেখি মস্ত এক জিরাফ আর হাতির গেট। ওপরে লেখা ‘বনবিলাস জু’। গেটে প্রবেশ করতেই ছোট একটি খাল। তার ওপরে কাঠের পুল। সেটি পার হয়ে চিড়িয়াখানায় ঢুকতে হয়।
ভেতরে ঢুকেই আমরা যে যার মতো ছবি তুলতে এবং ভিডিও করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। আমার চোখ যায় একটি চমৎকার পাখির ওপরে। যার নাম ‘ইস্টার্ন রোজেলা’। চারদিকে ফুটে আছে বনবিলাস আর কাঠমল্লিকা ফুল। চিড়িয়াখানার অন্যপাশে দেখলাম কতগুলো খাঁচায় শুধু বাঁদর আর বাঁদর। দেখলাম এক মমতাময়ী মা বাঁদর তার বাচ্চাকে কোলে করে পেয়ারা খাওয়াচ্ছে। বাঁদরের পাশের খাঁচায় একটি মেছো বিড়াল। যেটা দেখতে একদম বাঘের বাচ্চার মতো। সে বড় বড় মাংসের পিস মুখে নিচ্ছে আর খাচ্ছে। চোখ পড়ল সজারু, খরগোশ, উট পাখি, ইমু পাখি, গিনিপিগ, মদন টাক, ধনেশ, বেজী, গন্ধগোকুল, ভাল্লুক আর এক ঝাঁক কবুতরের ওপরে।
এরপর আমরা ময়ূর দেখলাম। সুমি বারবার বলছিল, ময়ূর পেখম কেন মেলে না। সুমি আমাদের এবার সাপ দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আনিকা বেচারি সাপ ভয় পাবে, তাই যাবে না। তা-ও জোর করে সাপ দেখালাম তাকে। মাঠের মাঝখানে বড় এক কাচের জারের মধ্যে তিন প্রজাতির পাখির ডিম সংরক্ষণ করা আছে। দেখে মনে মনে বললাম, এরা ডাইনোসরের ডিমটা পায়নি। পেলে সংরক্ষণ করতো। যা-ই হোক, আমরা তারপর একটা খাঁচায় কতগুলো গ্রে প্যারট দেখলাম। যার মধ্যে একটি প্যারট খুব মন ভার করে আছে।
এক পাল হরিণ ছোটাছুটি করছে দেখে আমাদের প্রচুর আনন্দ হলো। চিড়িয়াখানায় এলাম আর বাঘ দেখবো না তা হয় নাকি? চলে গেলাম বাঘ দেখতে। গিয়ে দেখি বাঘ মামা ঘুমাচ্ছে। কিন্তু এত বড় বাঘ আমরা জীবনেও দেখিনি। দেখে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। অবশ্য বাঘ দেখতেও আমাদের বেগ পেতে হয়েছে। কোনো রকমে জানালার চিপা থেকে দেখলাম।
চারদিকে আমের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ ভেসে আসছে। আমাদের চিড়িয়াখানা ঘোরা শেষ। গেট থেকে বের হতেই দেখি কতগুলো বাজরিগার পাখি কিচির-মিচির করছে। একজন আরেক জনের কাঁধে মাথা রাখছে। কী যে স্নিগ্ধ লাগছে দেখে!
আমরা বের হয়ে গেলাম মৎস্য জাদুঘরে। যেখানে জনপ্রতি ২০ টাকা টিকিট। জাদুঘর চিড়িয়াখানার অপর পাশে। সেখানে চমৎকার এক ঝরনা আর কত ধরনের মাছ সংরক্ষণ করা। সবচেয়ে বড় একটি হাঙর আছে। যার ওজন ৪২০ কেজির ওপরে। কয়েক প্রজাতির সাপও আছে। দেখলাম একটি সাপের খাঁচায় জীবন্ত কোয়েল পাখি। সাপটা ওকে খাবে। এই দৃশ্যটা কেন জানি মেনে নিতে পারিনি।
সেখান থেকে বের হতেই দেখি টগবগ টগবগ করে ঘোড়ার গাড়ি চলছে। এর পাশে আছে নানা খেলনাসামগ্রী ও খাবার দোকান। এখানে কয়েক ধরনের নাগরদোলা আছে। দেখলে যে কারোরই মন জুড়িয়ে যাবে।
এখান থেকে আমরা বাগানবিলাস পিকনিক স্পটে গেলাম। সেখানে কত পরিবার, চাকরিজীবী বা স্কুল থেকে আসে পিকনিক করতে। দেখলাম কেউ কেউ নামাজ পড়ছেন। চারিদিকে শিমুল ফুলে ভরা। যে যার কাজে ব্যস্ত। আমরা চারজন ঘাসের ওপর বসে গেলাম খেতে। আনিকার হাতের মজার খিচুড়ি, বৃষ্টির সুস্বাদু মাংস আর আমার তৈরি পলিথিন নামক রুটি দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করলাম।
আমাদের এত আনন্দ হলো যে ইচ্ছে করছিল সেখানেই আমরা শুয়ে পড়ি। সুমির বাসায় রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় ও বলল, তোদের হাত মোছার জন্য আমি টিস্যু নিয়ে এসেছি। শুনেই আমরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ি। অনেকক্ষণ সেখানে গল্প করে বের হয়ে আসার সময় আমরা চারজন চারটি আইস্ক্রিম খেতে খেতে আবার দৌলতপুরে ফিরে আসি এবং আমাদের দিনটা অনেক ভালো গেছে সেদিন।
জাহানাবাদ সত্যিই একটি মনোমুগ্ধকর জায়গা। কারণ এখানে এলে সবকিছু দেখার সৌভাগ্য হবে। দেশের যে কোনো প্রান্তের মানুষ চাইলে এখানে আসতে পারেন। সবার মনে জায়গা করে নেওয়ার মতো জায়গা গিলাতলা জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট।
লেখক: ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।
এসইউ/এএসএম