ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরে দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়ি এবং কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের প্রয়াত এমপি’র বাড়িতে ভাঙচুর-আগুন
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা হাসিবুর রহমান স্বপনের দুটি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুদ্ধ জনতা।
এদিন রাতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পুর্ণবাসন এলাকায় অবস্থিত বাড়ি দুটিতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।
২০১৩ সালে সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পূর্ণবাসন এলাকায় হাসিবুর রহমান স্বপন দুটি বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। বাড়ি দুটি ভাড়া দেওয়া ছিল।
হাসিবুর রহমান স্বপন ৮০-র দশকে পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন সিরাজগঞ্জ-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
পরবর্তীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ঐক্যমতের সরকার গঠনের ডাক দিলে তিনি তাতে যোগ দিয়ে শিল্প উপ-মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। সে সময় বিএনপি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করলে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
এরপর ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সিরাজগঞ্জ-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০২১ সালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তুরস্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় (২ সেপ্টেম্বর) মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, “সয়দাবাদের পুর্ণবাসন এলাকায় দুটি বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর পেয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি।”
নোয়াখালী-৬ আসনের সাবেক এমপির বাড়ি-ট্রলারে আগুন
নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর দুটি বাড়ি, সাতটি স্পিডবোট এবং চারটি ট্রলারে ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে হাতিয়া পৌরসভা, ব্রিকফিল্ড বাজার ও নলচিরা ঘাটে একদল যুবক এসব ঘটনা ঘটায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কিছু লোক মিছিল নিয়ে মোহাম্মদ আলীর লক্ষ্মীদিয়ার বাড়ির সামনে যায়। এসময় আলীর অনুসারীদের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে মিছিলে থাকা তিনজন আহত হন।
এ ঘটনার জেরে রাত দেড়টার দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে কয়েকশ’ মানুষ সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর দুটি বাড়িতে হামলা চালায়। ভাঙচুরের পর দুটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। একই সময়ে নলচিরা ঘাটে মোহাম্মদ আলীর সাতটি স্পিডবোট এবং চারটি পণ্য ও যাত্রীবাহী ট্রলারে আগুন দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোহাম্মদ আলীর এক অনুসারী বলেন, “রাত নয়টায় ছাত্রদের মিছিল থেকে প্রথমে মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে এক দফা হামলা হয়েছিল। পরে আবার রাত দেড়টায় দ্বিতীয় দফায় দুটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া সাতটি স্পিডবোট ও চারটি ট্রলারেও আগুন দেওয়া হয়েছে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “ছাত্রদের হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার সুযোগে বাড়ি দুটিতে ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করার পরও কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।”
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা বলেন, “বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের মিছিলে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর লোকজন ধাওয়া দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাতে ঘটনাস্থলগুলোতে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না।”
উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মোহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য আয়েশা আলী গৃহবন্দী হয়ে ছিলেন। এছাড়া তাদের সাথে বড় ছেলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক আলী অমিও একই সাথে ছিলেন। পাঁচ দিন গৃহবন্দী থাকার পর ১০ আগস্ট রাতে নৌবাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করেন। বিভিন্ন মামলায় আদালতের নির্দেশে তারা এখন কারাগারে রয়েছেন।
হবিগঞ্জে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর
হবিগঞ্জ জেলায় নির্মিত শেখ মুজিবুর রহমানের সকল ম্যুরাল অপসারণ না করলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সাকিব হোসাইন।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে নিমতলায় থাকা শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙার প্রাক্কালে তিনি এই হুমকি দেন।
সাকিব হোসাইন বলেন, “এখনো হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে শেখ মুজিবুর রহমানের মুর্যালসহ বিভিন্ন চিহ্ন রয়েছে। এসব মুর্যাল ও চিহ্ন অচিরেই ভেঙে ফেলতে হবে। এদেশের মাঠিতে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের কোন চিহ্ন থাকতে পারবে না। এখনও যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানী দিয়ে স্বৈরাচারকে ফিরিয়ে আনতে চায়-তাদের পরিণতি ভাল হবে না।”
এসব কথা বলার পরে সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে গান বাজিয়ে নেচে-গেয়ে মুর্যালটি ভাঙচুর করা হয়। আন্দোলনকারীরা শুরুতে মুর্যালের নাম ফলক ভেঙে দেন। পরে হাতুড়ি দিয়ে ২০২১ সালে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত শেখ মুজিবের ম্যুরালটি ভেঙে ফেলেন।
ঝিনাইদহে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর
দেশের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু স্থানে বসানো ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে শেখ মুজিব টাওয়ারে ১২৩ ফুট উপরে অবস্থিত শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে স্থানীয় ছাত্র ও জনতা।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা বারোবাজারের শমশেরনগরে গিয়ে ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের শমশেরনগর গ্রামে কয়েক বছর আগে দেশের বৃহত্তম ১২৩ ফুট উচ্চতায় শেখ মুজিবের নামে একটি টাওয়ার তৈরি করা হয়। যার নাম দেয়া হয়েছিল ‘স্ট্যাচু অফ ফ্রিডম’। ওই গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ শমসের এটি তৈরি করেছিল।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা মিছিল সহকারে সেখানে গিয়ে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ও বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করে। এরপর ওই ভাঙচুরকৃত ম্যুরাল বারবাজার শহরে এনে সড়কের উপরে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঝিনাইদহ জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হোসাইন আহমেদ বলেন, “খুনি হাসিনার পরিবারের কোন মুরাল স্থাপনা এ দেশে থাকবে না। বাংলার জমিনে কোন ফ্যাসিবাদের চিহ্ন থাকবে না। এজন্য আমরা শেখ মুজিবের ওই ম্যুরাল গুলি ভেঙে পুড়িয়ে দিয়েছি। এতে কয়েকশ’ ছাত্র জনতা অংশ নেয়।”
কালীগঞ্জ থানার ওসি শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, “রাতে ছাত্র-জনতা ম্যুরাল ভাঙচুর করে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।”
দিনাজপুরে আ.লীগের দুটি কার্যালয়ে ভাঙচুর-আগুন
দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও খানসামা উপজেলায় আওয়ামী লীগ কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিয়ে অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে জেলার চিরিরবন্দর ও খানসামা উপজেলায় আওয়ামী লীগের কার্যালয় দুটি গুঁড়িয়ে দেয় তারা।
গতকাল রাতে চিরিরবন্দর উপজেলায় স্থানীয় ছাত্র জনতার একটি মিছিল নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জড়ো হয়ে ভাঙচুর শুরে করে। পরে একটি এক্সকাভেটর মেশিন দিয়ে দলিয় কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
এদিকে, খানসামা উপজেলার পাকেরহাট শাপলা চত্বর জড়ো হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিলসহ বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছায়। এসময় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা দলীয় কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন খানসামা উপজেলার অন্যতম সদস্য রহিদুল ইসলাম রাফি বলেন, “স্বৈরাচার হাসিনা এত ছাত্র-জনতাকে হত্যার পরেও ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। এটা ছাত্র-জনতা মেনে নিবে না। তাই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের সকল চিহ্ন মুছে দিতেই বিক্ষুব্ধ ছাত্র ও জনতা এমন প্রতিবাদ করেছে।”
চিরিরবন্দর উপজেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সোহলে সাজ্জাদ বলেন, “স্বৈরাচারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা মিলে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে চিরিরবন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি।”
শামীম ওসমানের দাদার বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়া হলো
সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দাদার বাড়ি ‘বায়তুল আমান ভবন’ গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া এলাকায় অবস্থিত আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ভাষাসৈনিক খান সাহেব এম ওসমান আলীর বাসভবন ‘বায়তুল আমান’ ভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাটি ঘটে।
মহানগর বিএনপি নেতাদের উপস্থিতিতে কয়েকশ’ জনতা বাড়িটিতে হামলা ও ভাঙচুর শুরু করেন। এক পর্যায়ে এক্সকাভেটর দিয়ে ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়া শুরু হয়।
প্রয়াত এম ওসমান আলী আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দাদা। বর্তমানে ওই বাড়িতে কেউ থাকতেন না।
প্রত্যক্ষদর্শী ইমরান মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বায়তুল আমানে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন ও সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফের উপস্থিতিতে কয়েকশ’ বিএনপি নেতা–কর্মী ও বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর শুরু করেন। এসময় তারা হাতুড়ি দিয়ে ওই ভবনের দেয়ালে ভাঙচুর করেন।
এক পর্যায়ে একদল বিক্ষুদ্ধ জনতা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় বাড়ি ভাঙতে এক্সকাভেটর আনা হয়। সীমানা প্রাচীরের প্রধান ফটক ভেঙে এক্সকাভেটরটি ভেতরে প্রবেশ করে। তারপর সেটি দিয়ে বাড়ির দেয়াল ও ছাদ ভাঙা শুরু হয়।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “শেখ হাসিনার দোসর গডফাদার শামীম ওসমানের প্রতি মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ঘৃণা থেকে ওই বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করেছেন।”
এর আগে বেলা ১১টার দিকে শহরের চানমারী এলাকায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় প্রাঙ্গণ ও জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ভাঙচুর করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। জেলা আইনবীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ মহানরগ বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন এবং সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফের উপস্থিতিতে বিপুলসংখ্যক সাধারণ আইনজীবী ভাঙচুরে অংশ নেন।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ বলেন, “শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবারের ছবি বাংলার জনগণ কোথাও রাখতে চায় না। সে কারণে ডিসি অফিসের সামনে বাকশালের নায়ক শেখ মুজিব ও খুনি হাসিনার ছবি ভাঙা হচ্ছে। এসপি অফিসের সামনের ছবিও ভাঙা হয়েছে।”
গাইবান্ধায় আ.লীগ কার্যালয় ভাঙচুর
গাইবান্ধা শহরের ডিবি রোডের রেলগেটস্থ জেলা আওয়ামী লীগের আধাপাকা টিনশেড কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা থেকে এক্সকাভেটর মেশিন দিয়ে এই ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসরদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করার আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাত আটটা থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে থাকে। সাড়ে নয়টা থেকে এক্সকাভেটর মেশিন দিয়ে ভাঙা শুরু হয়। রাত দশটার মধ্যে আওয়ামী লীগ কার্যালয় পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
এরপর রাত ১১টার দিকে শহরের থানাপাড়ায় জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ আহসান হাবীব রাজিবের বাড়ির প্রধান গেট ভাঙচুর করে বৈষম্য বিরোধী শতশত ছাত্র-জনতা।
এরআগে শহরের রেলগেট এলাকায় বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা মিছিল করে। পরে তারা স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও আওয়ামী লীগ বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয়। এসময় তারা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের জানালা, দরজা ও পুরো ভবন এক্সেভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাইবান্ধা শাখার আহ্বায়ক আহ্বায়ক মো. মাসুদ মিয়া জানান, গতকাল ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি গুঁড়িয়ে মাধ্যমে আমরা সারাদেশে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন করার কার্যক্রম শুরু করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের অফিস গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া অবৈধভাবে বিপুল অর্থের মালিক বনে যাওয়া ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসভবন গুঁড়িয়ে দেওয়ার কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “যতদিন না পর্যন্ত গাইবান্ধায় সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ এবং ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসরদের শাস্তি এবং গ্রেপ্তার নিশ্চিত না হবে, ততদিন পর্যন্ত এ ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।”
এ বিষয়ে জানতে গাইবান্ধা সদর থানার ওসি শাহিনুল ইসলাম তালুকদারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মাগুরায় সাবেক পৌর মেয়রের বাড়ি ভাঙচুর-আগুন
মাগুরায় সাবেক পৌর মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশিদ হয়দার টুটুলের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংগযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
বৃস্পতিবার (৬ ফ্রেরুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সরকারি হোসেন শহীদ সোহওয়ার্দী কলেজের সামনে থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নোমানী ময়দানের পাশে থাকা সাবেক পৌর মেয়রের বাড়ি ভেঙে দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহরের নোমানী ময়দানের পাশে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশিদ হায়দার টুটুলের তিন তলা বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
এসময় তারা ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’ বলে স্লোগান দেন।
পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি আসে। কিন্তু আগুন না নিভিয়েই চলে যান তারা। পরে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি গাড়ি ঘঠনাস্থলে গিয়ে বাড়ির বৈদ্যুতিক লাইন বন্ধ করে দেয়।
এর আগে দুপুরে মাগুরা স্টেডিয়াম গেট এলাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করে ছাত্র-জনতা।
মাগুরা সদর থানার (ওসি) আয়ুব আলী বলেন, “সাবেক পৌর মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা জানতে পেরেছি। তবে কারা ভাঙচুর করেছে কোন তথ্য নেই। খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।”
বরগুনার সাবেক এমপি শম্ভুর বাড়ি ভাঙচুর
বরগুনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর উপজেলা সংলগ্ন বাসভবন ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে প্রথমে শম্ভুর উপজেলা সড়ক সংলগ্ন বাসভবনে ভাঙচুর শুরু করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। পরে সেখান থেকে ফার্মেসি পট্টির জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর করে তারা।
ভাঙচুরে নেতৃত্ব দেন জেলার সমন্বয়ক মুহিত নিলয় এবং মীর নিলয়। এসময় তারা স্বৈরাচার বিরোধী নানান ধরনের স্লোগান দেন।
মুহিত নিলয় ভাঙচুর শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “স্বৈরাচারী হাসিনা কথা বললেই দফায় দফায় ভাঙচুর হবে। উনি মানুষের রক্ত চুষে খেয়ে পালিয়ে আছেন, আর এখন আবার নতুন করে দেশকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করছেন। ওনার আর কোন কথা বাংলার জনগণ শুনতে চায় না।”
মীর নিলয় বলেন, “হাসিনার দোষরদের স্থাপনা ভাঙচুর করেছি। ওদের কোন অস্তিত্ব রাখব না।”
লক্ষ্মীপুরে ৪ আ.লীগ নেতার বাড়ি ফের ভাঙচুর, আগুন
লক্ষ্মীপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের চার নেতার বাড়িতে ফের ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে হামলার ঘটনায় শুরু হয়। উত্তেজিত কয়েকশ’ লোক শহরের উত্তর তেমুহনী থেকে মিছিল করে হাতুড়ি দিয়ে ভাঙচুর শুরু করে। টিপুর বাসায় ভেক্যু মেশিন দিয়ে ভাঙচুর করা হয়।
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি চৌধুরী মাহমুদুন্নবী সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক রাকিব হোসেন লোটাসের বহুতল বাস ভবনে ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়।
এরমধ্যে লোটাসের ভবন ছাড়া অন্য নেতাদের ভবনগুলোতে এর আগে ৪, ৫ ও ৬ আগস্ট দফায় দফায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসময় মালামাল লুটে নেয় উত্তেজিত নেতাকর্মীরা।