ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) নবিজির বিখ্যাত সাহাবি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনে খাত্তাবের (রা.) সন্তান, মক্কায় নবিজির (সা.) নবুওয়াত লাভের তৃতীয় বছরে হিজরতের প্রায় ১০ বছর আগে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার উপনাম আবু আব্দুর রহমান। তার মায়ের নাম যাইনাব বিনতে মাজউন। তিনি ছোটবেলায় ইসলাম গ্রহণ করেন। মাত্র এগোরো বছর বয়সে তিনি তার বাবার সাথে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন।
বদর ও উহুদের যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বয়স অল্প হওয়ায় আল্লাহর রাসুল (সা.) তাকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের উপযুক্ত মনে করেননি। খন্দকের যুদ্ধে তিনি অংশ গ্রহণ করেছিলেন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র পনেরো বছর। তিনি খন্দকের পরে আল্লাহর রাসুলের (সা.) নেতৃত্বে সংঘটিত সবগুলো যুদ্ধেই তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। নবিজির (সা.) ওফাতের পর তিনি ইয়ামামার যুদ্ধ ও ইয়ারমুকের যুদ্ধে অংশ নেন। মিসর ও উত্তর আফ্রিকা বিজয়েও তিনি অংশ নেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) জীবনের প্রতিটি কাজে, প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুলকে (সা.) অনুসরণ করতে অত্যন্ত উদগ্রীব ছিলেন। আমল ও ইবাদতের ক্ষেত্রে তো বটেই, বৈষয়িক কাজকর্মেও তিনি নবিজিকে (সা.) অনুসরণের চেষ্টা করতেন। বুঝতে শেখার পর নবিজির (সা.) প্রায় সব মজলিসে উপস্থিত থাকতেন। যদি কোনো কারণে কোনো মজলিসে উপস্থিত থাকতে ব্যর্থ হতেন, তাহলে উপস্থিত সাহাবিদের থেকে জিজ্ঞাসা করে জানতেন ওই মজলিসে নবিজি (সা.) কী বলেছেন।
আল্লাহর রাসুলের হাদিস, তার জীবনযাপন, বাণী চর্চা ও বর্ণনায় আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) থেকে সরাসরি বহু হাদিস বর্ণনা করেছেন তিনি। এ ছাড়া আবু বকর (রা.), ওমর (রা.), ওসমান (রা.), আবু যর (রা.), মুয়ায (রা.), আয়েশা (রা.) প্রমুখ সাহাবি থেকেও হাদিস বর্ণনা করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরের (রা.) হাদিসের মজলিসে বসে, তার কাছ থেকে হাদিস শুনে বর্ণনা করেছেন বহু মানুষ। তাদের মধ্যে অনেক প্রখ্যাত সাহাবি ও তাবেঈও রয়েছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রহ.), আলকামা ইবনে ওয়াক্কাস (রহ.), আবু আব্দুর রহমান নাহদি (রহ.), মাসরুক (রহ.), জুবাইর ইবনে নুফাইর (রহ.), আব্দুর রহমান ইবনে আবি লায়লা (রহ.), আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার (রহ.), উরওয়া ইবনে যুবাইর (রহ.), বিশর ইবনে সাঈদ (রহ.), আতা (রহ.), মুজাহিদ (রহ.), মুহাম্মদ ইবনে সিরিন (রহ.) প্রমুখ।
তার থেকে বর্ণিত অসংখ্য হাদিস আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে। সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে তার থেকে বর্ণিত ২৮০টি হাদিস রয়েছে। এ ছাড়া ছয়টি প্রধান হাদিস গ্রন্থ, মুসনাদ ও অন্যান্য সুনান গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে তার থেকে বর্ণিত প্রায় ২৬৩০টি হাদিস।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) অত্যন্ত নেক, পরহেজগার ও দুনিয়াবিমুখ মানুষ ছিলেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘কত চমৎকার একজন মানুষ আব্দুল্লাহ!’ অন্য একটি বর্ণনায় আছে, নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘আব্দুল্লাহ নেক ব্যক্তি’।
তিনি অত্যন্ত বিনয়ী, সহনশীল, দয়ালু ও দানশীল ছিলেন। তিনি নিজের পছন্দের খাবার ও সম্পদ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করে দিতেন। বর্ণিত রয়েছে, এক রাতে তার কাছে দশ হাজার দিরহাম আসে, তিনি রাত যাপন করার আগেই তা বিতরণ করে দেন। একবার তিনি মজলিসে বসে ছিলেন, তখন তার কাছে বাইশ হাজার দিরহাম আনা হলে তিনি তা বিতরণ করে দেন এবং আরও যোগ করেন। কখনও তার কাছে যা থাকত তা শেষ হয়ে যেত, তখন তিনি ঋণ নিয়েও দান করতেন যেমন নবিজিও (সা.) মাঝে মধ্যে ঋণ করে দান করতেন। তিনি যখনই খাবার খেতে বসতেন, অন্তত একজন এতিমকে সাথে খেতে বসাতেন। মৃত্যুর আগে তিনি এক হাজার বা তারও বেশি দাস মুক্ত করে দেন।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা তার বাবা হজরত ওমরের (রা.) পর অনেক সাহাবি তাকে খলিফা হিসেবে দেখতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু ওমর (রা.) নিজের ছেলেকে খেলাফতের দায়িত্ব দিতে রাজি হননি। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরেরও (রা.) খলিফা হওয়ার আগ্রহ ছিল না। পরবর্তীকালেও তিনি বারবার খলিফা হওয়ার সুযোগ ও প্রস্তাব পেয়েছেন, কিন্তু তিনি রাজি হননি। দুনিয়ার সব ঝামেলা ও ফিতনা থেকে দূরে সরে থেকে জ্ঞানসাধনা ও ইবাদতে নিমগ্ন থাকতেই তিনি পছন্দ করতেন।
আল্লাহর রাসুলের (সা.) এই সাহাবি ৭৩ হিজরিতে মক্কায় ৮৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
ওএফএফ/এএসএম