ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
এখনই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে শক্তিশালী করার মুখ্য সময় বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এর পাশাপাশি তামাকপণ্যের সব ধরনের খুচরা ও খোলা বিক্রি বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের এক নীতিনির্ধারনী আলোচনা সভায় বক্তরা এ মত দেন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, অ্যাকাডেমিক, গবেষক, সমাজের সচেতন নাগরিক এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সমন্বয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের দাবিতে এ আয়োজন করা হয়।
সভায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাশের দাবিতে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়ে আলোচনা হয়।
আলোচনায় অংশ নেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগ) এ টি এম সাইফুল ইসলাম, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ভাক্সিন অ্যান্ড ইনিশিয়েটিভ (গ্যাভী) এর চেয়ার ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী ও মো. মহসীন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কাজী মোখলেছুর রহমান, প্রজনন ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের (বিইউএইচএস) অধ্যাপক ডা. হালিদা হানুম আক্তারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষ ব্যক্তিবর্গ।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ। মূল প্রবন্ধে তিনি ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রণীত খসড়ার সংশোধনীগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৬টি প্রস্তাব তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সব পাবলিক প্লেস এবং গণপরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাকজাত পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাকপণ্যের সব ধরনের খুচরা ও খোলা বিক্রি বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।
অতিরিক্ত সচিব এ টি এম সাইফুল ইসলাম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশের অনেক তামাক কোম্পানি বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করছে। যেমন প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাস হলে সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাবে বলে মিথ্যা প্রচারণাও চালিয়েছে তামাক কোম্পানিগুলো। তবে বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন ও ২০১৩ সালে সংশোধনের পর গত ১৮ বছরে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে সাড়ে ১২ গুণ। বাংলাদেশ সরকারকে এই দিকে নজর দিতে হবে।
প্রজনন ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ (বিইউএইচএস) এর অধ্যাপক ডা. হালিদা হানুম আক্তার বলেন, বাংলাদেশে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক (১৫ বা তার বেশি বয়সী) তামাক ব্যবহার করেন (গ্যাটস ২০১৭) এবং তার মধ্যে ৪৬ শতাংশ পুরুষ ও ২৫.২ শতাংশ নারী তামাক ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। ৫৯ শতাংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক পাবলিক প্লেসে এবং ৩১ শতাংশ বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। বাংলাদেশের মোট মৃত্যুর ১৯ শতাংশ (১ লাখ ৬১ হাজার ২৫২) তামাকের ব্যবহারজনিত কারণে হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকার তামাক থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব পেয়েছিল তার চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি টাকা খরচ হয়েছে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসা বাবদ। তামাকের এসব ক্ষতি থেকে জনস্বাস্থ্যকে রক্ষার জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে শক্তিশালী করার মুখ্য সময় এখনই।
যুগ্ম সচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী বলেন, স্বাস্থ্য বাতায়নের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ অধূমপায়ীদের থেকে ধূমপায়ীদের মৃত্যু তিনগুণ বেশি ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত। ৬১ হাজারেরও বেশি শিশু (১৫ বছরের নিচে) পরোক্ষ ধূমপানের কারণে সৃষ্ট রোগে ভুগছে। ঢাকার মিরপুর ও সাভারের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের লালা পরীক্ষা করে ৯৫ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রীর লালায় নিকোটিন পাওয়া গেছে। এরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, একটি নির্দিষ্ট প্রজন্ম, বিশেষত যুবসমাজ তামাকের করাল গ্রাসের শিকার। তরুণদের মধ্যে তামাক ব্যবহার উৎসাহিত করার জন্য তামাক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখায়। যেমন, বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় নির্ধারিত ধূমপান এলাকা (ডেসিগনেটেড স্মোকিং এরিয়া) স্থাপন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ব্যাটল অব মাইন্ড। এইসব অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী অতীব জরুরি।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পলিসি অ্যাডভাইজর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রোজেক্ট কো-অরডিনেটর ডা. বরিষা পাল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অ্যান্টি টোব্যাকো ক্লাবের সদস্যসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী এবং দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা।
এসইউজে/এএমএ/এমএস