দু’দেশের সীমান্তে হারানোদের ফিরিয়ে দেন ‘বাঙালির বজরঙ্গী ভাইজান’

5 hours ago 1
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হারিয়ে যাওয়া কিংবা দু’দেশের কারাগারে আটক ব্যক্তিদের দেশে পরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে দেন শামসুল হুদা। এই কাজ করতে গিয়ে পেয়েছেন ‘বাঙালির বজরঙ্গী ভাইজান’ খ্যাতি।

এ পর্যন্ত দুই দেশের কারাগারে আটক থাকা বা হারিয়ে যাওয়া ৪৩ জনকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে একদিনে এসব সম্ভব হয়নি। পদে পদে বাধা পেয়েছেন তিনি। ব্যর্থ হয়ে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন স্বজনের খোঁজে।

২০২০ সালে প্রথমবারের মতো ভারত সীমান্তে নিখোঁজ এক ব্যক্তিকে পরিবারের কাছে ফেরানোর চেষ্টা করেন তিন। প্রথমে চেয়েছিলেন ভালোবাসা দিবসে সম্পর্ক জোড়া লাগাতে। তবে হেরে যান তিনি। আবোরো নতুন উদ্যোমে শুরু করেন মানুষকে তার আপনজনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার। সেই চেষ্টা থেকেই কখনো ৪২ বছর পর আবার কখনো ৫০ বছর পর, কাউকেতো তৃতীয় প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে আপনজনের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন শামসুল হুদা। এ পর্যন্ত দুই দেশের কারাগারে আটকে থাকা কিংবা হারিয়ে যাওয়া ৪৩ জনকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। আর এরই মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন ‘বাঙালির বজরঙ্গী ভাইজান’।

আরও পড়ুন-

শামসুল হুদা বলেন, আমাদের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন আছে। যার নাম অ্যামেচার রেডিও ক্লাব। আমি বাংলাদেশের এই ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক। ২০২০ সালে প্রথম ভারতে অ্যামেচার রেডিও ক্লাব থেকে একটি এসএমএস এলো যে বাংলাদেশি নাসির নামে একজন মেদেনীপুর জেলার গঙ্গা সাগর মেলার কাছে আছে। তার বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে ঠিকানা পাঠাই। তবে বাংলাদেশের ওই ঠিকানায় গিয়ে দেখি তার পরিবারের কেউ তাকে নিতে আগ্রহী না। এমনকি সবাই বলে তার বিয়ে হয়নি। কিন্তু নাসিরের দাবি, সন্তানকে দেখতে গিয়ে কোনোভাবে তিনি ভারতে হারিয়ে গিয়েছিলেন। পরে আবারো খোঁজ নিয়ে কথা হয় নাসিরের শাশুড়ির সঙ্গে। তিনি জানান, মেয়ে আরেকটি বিয়ে করেছে। তাই তারা তাকে ফেরত চান না।

দু’দেশের সীমান্তে হারানোদের ফিরিয়ে দেন ‘বাঙালির বজরঙ্গী ভাইজান’

তখন আমি ভেঙে পড়ি। মনে মনে ভাবি মানুষ কীভাবে মানুষকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। সেইদিন ছিল ভালোবাসা দিবস। আমরা মনে হলো ভালোবাসার জন্য মানুষ এতকিছু করে কিন্তু তারা কিছু করছে না। অনেক কষ্ট পাই। ভেঙে পড়ি।

এরপর ৩ মাস পর মে মাসে আরও এক নারীর খোঁজ দেয় অ্যামেচার ক্লাস। তার নাম ছায়াদেবী। পরিবারকে খুঁজছেন বহুকাল থেকে। এখানেও একটি সমস্যা হয়ে যায়। তিনি যে ঠিকানা দেন সেখানে অনেক সমস্যা ছিল। ঠিকানায় ছিল খুলনার একটি নদীর নাম। তবে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি রূপসা নদী ছাড়া আর কোনো নদী নেই। কিন্তু তারা বলেন কালী নদী। পরে আমি নদীর ওয়েবসাইট ঘুরে খুঁজে পাই কালিগঙ্গা নদী। এরপর সেখান থেকে প্রযুক্তির সহায়তায় সেখানকার চেয়ারম্যানের সহায়তা নিয়ে তার পরিবারে একজনকে পাই। তিনি বলেন, ছায়াদেবী তার বোন। পরে ভাই-বোনকে ৪০ মিনিট কথা বলিয়ে দিলাম। ৪২ বছর পর তাদের কথা হলো। অন্যরকম অনুভূতি হলো।

এরপর ভাবলাম এভাবে অনেককেইতো এক করতে পারি। সেই থেকেই কাজ করা শুরু। এভাবে একে একে ৪৩ জনকে সংযোগ করিয়ে দিয়েছি, যোগ করেন তিনি।

আরও পড়ুন-

তিনি আরও বলেন, এসব করতে গিয়ে সবথেকে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠিকানা। অনেক সময় ঠিকানা সঠিক না থাকার কারণে অনেকেই বছরের পর বছর জেলে পড়ে থাকছেন। এর পাশাপাশি ভারতের মানুষ অনেক সময় বাংলাদেশ থেকে বলছি বললেই সংযোগ কেটে দেন। তখন পূর্বে সহায়তাকারীদের মাধ্যমে সংযোগ করাতে হয়। এটিই বড় বাধা।

আরেকটি বড় বাধা হলো, দূতাবাস থেকে পাঠানো চিঠিটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘুরে কারা অধিদপ্তরের কাছে যায়। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। তারা এটি করতে চায় না। এটি সহজ করা দরকার।

পেশায় সাংবাদিক হলেও বর্তমানে তাকে ‘বাঙালির বজরঙ্গী ভাইজান’ বলে ডাকে সবাই। সর্বশেষ একটি বেসরকারি টেলিভিশন থেকে চাকরিও হারিয়েছেন তিনি।

তিনি জানান, এসব কাজ করে অনেক শান্তি পাই। এখন অনেক কাজ বাড়ছে। অনেকেই এখন আমাকে খবর দিচ্ছে। এসবের পেছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজের অর্থ যায়। তবে কিছু অর্থ সহায়তা দেন রোটারি ক্লাব অব বনানীর সদস্যরা। এসব কাজ এখন বেশ ভালোই লাগে। আগামীতেও করে যেতে চান তিনি। তার হাতে এখনো ১০টির মতো কেস আছে। যাদেরকে স্বজনদের মাঝে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।

শামসুল হুদা বলেন, আমি নিজ ইচ্ছা থেকেই সীমান্তে নিখোঁজ কিংবা সীমান্ত পেরিয়ে কারাগারে থাকা ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। সর্বশেষ সেই চেষ্টা থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া ভারতীয় নাগরিকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত মোট ৫৯টি সীমান্তের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করেছি। এর মধ্যে ৪৩টি সমস্যার সমাধান হয়েছে। আর ভারতে থাকা দুই নারীকে জীবিত উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

এফএ/এমএস

Read Entire Article