ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
রপ্তানিযোগ্য টুপি তৈরিকে কেন্দ্র করে নওগাঁয় কর্মসংস্থান বাড়ছে নারীদের। অবসর সময়ে টুপি তৈরি করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে অন্তত ৪০ হাজার নারীর। জেলায় তৈরি এসব টুপি রপ্তানি হচ্ছে ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। যেখান থেকে প্রতি বছর শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা।
তবে এ কাজে সম্পৃক্ত নারীদের অনেকেরই অভিযোগ তারা মজুরি বৈষম্যের শিকার। সম্ভাবনাময় এ খাতকে আরও এগিয়ে নিতে উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি নারী কারিগরদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
উদ্যোক্তাদের তথ্যমতে, রপ্তানিযোগ্য এসব টুপিতে চেইন, দেওয়ান, বোতাম, গুটিদানা ও মাছকাটা নামে পাঁচ ধরনের সেলাই করা হয়। আকর্ষণীয় এসব টুপি ওমানের জাতীয় টুপি নামে পরিচিত হলেও সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচের বিভিন্ন দেশে এর চাহিদা রয়েছে। এসব দেশে প্রতি বছর নওগাঁ থেকে অন্তত শত কোটি টাকার টুপি রপ্তানি করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
আরও পড়ুন-
- নওগাঁয় টুপি তৈরিতে সংসারে সচ্ছলতা এসেছে নারীদের
- টুপিতে নকশা তুলে কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত নারীদের মধ্যপ্রাচ্য জয়
টুপি তৈরির এ কর্মযজ্ঞ দেখতে শুক্রবার (১৪ মার্চ) দুপুরে সরেজমিন নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে গেলে দেখা যায়, ওই গ্রামের নারীরা বাড়ির উঠানে বসে দলবদ্ধভাবে টুপি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সাদা কাপড়ের ওপর সুইয়ের সাহায্যে বিভিন্ন রঙের সুতা দিয়ে নকশার ওপর ফুল তুলছেন তারা। গ্রামীণ এসব নারীদের সুইয়ের ফোঁড়ে নান্দনিক নকশা ফুটে উঠছে একেকটা কাপড়ে। কয়েক হাত বদলের পর বিশেষ কায়দায় সেলাই ও ভাঁজ করে এই কাপড় দিয়ে বানানো হচ্ছে চেইন, দেওয়ান, বোতাম, গুটিদানা ও মাছকাটা নামে পাঁচ ধরনের টুপি। অবসর সময়ে হাতখরচের টাকা জোগাড় করতে ক্ষুদ্র এ শিল্পে যোগ দিয়েছে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও।
ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের গৃহবধূ লিপি বেগম বলেন, ভালো মানের একটি গুটিদানা টুপি তৈরিতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লেগে যায়। সংসারে কাজের পাশাপাশি এই টুপি তৈরি করে মানভেদে দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পাই। অবসর সময়ের এই আয় থেকে কৃষক স্বামীকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। সারা বছর উপার্জিত টাকা থেকে নিজের পছন্দের জিনিসপত্র কেনাসহ সন্তানের পড়ালেখার খরচ নিজেই চালিয়ে আসছি।
একই গ্রামের আরেক গৃহবধূ সাবানা বেগম বলেন, প্রতিবেশীদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ৫ বছর আগে অবসর সময়ে টুপি সেলাইয়ের কাজ শিখেছিলাম। এখন সেই কাজকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। সংসারে কাজের পাশাপাশি টুপি সেলাই করে বর্তমানে আমি নিজেই স্বাবলম্বী। তবে এ কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার পর থেকে দেখছি এখন অবধি আমাদের পারিশ্রমিক বাড়েনি। শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণে আমরা প্রত্যেকেই প্রতিনিয়ত মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। একই কাজ পুরুষ শ্রমিকরা করলে অন্তত তিনগুণ বেশি পারিশ্রমিক পেতো।
আরও পড়ুন-
নওগাঁ শহরের আয়মান হস্তশিল্পের স্বত্বাধিকারী জীবন আহম্মেদ সুজন বলেন, টুপি তৈরির ক্ষুদ্র এ শিল্পে ৯০ শতাংশ কাজই নারী শ্রমিকদের দিয়ে করাতে হয়। পুরো জেলায় বর্তমানে ৪০ হাজারের অধিক নারী এ পেশায় নিয়োজিত। পুরুষরা এজেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকেন। বর্তমানে আমার অধীনে ৬ হাজারের অধিক নারী শ্রমিক টুপি তৈরির কাজ করছেন। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে প্রায় ১ কোটি টাকা মূল্যের টুপি ওমানে রপ্তানির টার্গেট রেখেছিলাম। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ টুপি ওমানে পাঠানো হয়েছে। বাকিগুলো পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র এই হস্তশিল্পে কাজের মানভেদে প্রতিটি টুপির দাম নির্ধারণ করেন বিদেশিরা। নকশাগুলো যত বেশি নিখুঁত হবে, তত বেশি দামে ওমানে টুপি বিক্রি করা সম্ভব। তবে আমাদের নারী শ্রমিকরা অতোটা দক্ষ নয়। শুধুমাত্র দক্ষতার অভাবে দীর্ঘসময় ব্যয় করার পরও তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক তারা পাচ্ছেন না। উদ্যোক্তারাও পুঁজি সংকটে ব্যবসা প্রসারিত করতে পারেন না। এ সংকট সমাধানে উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি নারী কারিগরদের সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
নওগাঁ বিসিক শিল্পনগরীর উপ ব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন জাগো নিউজকে বলেন, রপ্তানিযোগ্য টুপি তৈরির শিল্প থেকে একদিকে জেলায় প্রায় অর্ধ লক্ষ নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। অন্যদিকে এ শিল্প থেকে প্রতি বছর অন্তত শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন স্থানীয় উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। তবে ফিলিপাইন ও ভারতের যেসব নারী এই শিল্পে সম্পৃক্ত তাদের তুলনায় আমাদের এ অঞ্চলের নারীরা শুধুমাত্র দক্ষতায় পিছিয়ে থাকায় কম পারিশ্রমিক পান। এ মজুরি বৈষম্য দূর করতে নারীদের প্রয়োজনীয় কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিসিকের। পাশাপাশি এই হস্তশিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে উদ্যোক্তারা চাইলে তাদের সহজ শর্তে ঋণ পেতে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।
এফএ/এমএস