নতুন নতুন পণ্য-প্রযুক্তিতে জমজমাট আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক মেলা

3 hours ago 1
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

ঢাকার পূর্বাচলের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক, প্যাকেজিং অ্যান্ড পেইন্টিং ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেলার ১৭তম আসর চলছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ছিল মেলার দ্বিতীয় দিন। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন চার দিনব্যাপী এই মেলার উদ্বোধন করেন।

মেলায় দেশি-বিদেশি ৮ শতাধিক স্টল রয়েছে। এতে স্বাগতিক বাংলাদেশ, চীন, জার্মানি, ভারত, ইতালি, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের কোম্পানিগুলো তাদের নতুন পণ্য ও প্রযুক্তি প্রদর্শন করছে।

বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিপিজিএমইএ) এবং হংকংভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইয়োকার্স ট্রেড অ্যান্ড মার্কেটিং সার্ভিস যৌথভাবে মেলাটির আয়োজন করেছে।

মেলার দ্বিতীয় দিনে দেখা যায়, মেলায় বিভিন্ন স্টলে প্লাস্টিক উৎপাদন, রিসাইকেলসহ সব ধরনের মেশিনারিজ, টুলস, কাঁচামালের পণ্যসামগ্রী শোকেস করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন শেয়ারের পাশাপাশি এ সংক্রান্ত বিষয়ে নলেজ শেয়ার করতে পারছেন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা।

jagonews24

১৮টি দেশের ৮ শতাধিক স্টল এবং ৩৯০টি ব্র্যান্ড অংশগ্রহণ করেছে এবারের মেলায়। আয়োজকদের দাবি, এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় প্লাস্টিক মেলা।

মেলায় আরএফএল গ্রুপের দুটি স্টল রয়েছে। এর মধ্যে একটি পাইপ, ফিটিংস সংশ্লিষ্ট এবং অন্যটি হাউজওয়্যার পণ্য সংক্রান্ত।

আরএফএল সেন্ট্রাল ল্যাবের সিনিয়র কোয়ালিটি ইনস্ট্রাক্টর মো. জাকিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মেলায় আসার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পণ্যের প্রচার-প্রচারণা করা। এবারের মেলায় আমাদের নতুন কিছু পণ্য নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে রয়েছে এইচডিপিই পাইপ, যা বাংলাদেশে প্রথম উৎপাদন করছে আরএফএল। এছাড়া সিপিভিসি, হোস পাইপ, এসডব্লিউআর, ক্লাস পাইপ রয়েছে।

আরও পড়ুন

তিনি আরও বলেন, আমরা আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ ১৫টি দেশে আমাদের পণ্য রপ্তানি করে থাকি। টার্গেট, কেম্যাট, পেটম্যাটসহ বড় বড় কোম্পানি আমাদের ডিলার।

মেলায় প্লাস্টিকের সব ধরনের পণ্যের সমাহার রয়েছে। যেমন- ব্যাগ, খেলনা, বোতল, পাইপ, ফিটিংস, কলম, আলমারি, চেয়ার, টেবিল, কনটেইনার, গ্লাস, মগসহ সব ধরনের পণ্য। এছাড়া এসব পণ্যের কাঁচামালও মেলায় পাওয়া যাচ্ছে। এ যেন প্লাস্টিক উৎপাদনকারী, প্রক্রিয়াজাতকারী, রিসাইকেলারদের এক মিলনমেলা।

মেলায় প্লাস্টিক, প্যাকেজিং অ্যান্ড পেইন্টিং ইন্ডাস্ট্রিয়ালের নানান পণ্য, পণ্য তৈরির কাঁচামাল, মেশিনারিজ, টুলস আইটেমের পসরা নিয়ে বসেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানি। একে অপরের সঙ্গে নিজেদের পণ্যের বিস্তারিত তথ্যাদি শেয়ার করছেন তারা।

বিপিজিএমইএ জানায়, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক প্লাস্টিক পণ্যের বাজারের আকার ছিল ৬২ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। বিশাল এই বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশ থেকে ১০ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়।

প্লাস্টিক মেশিনারিজ পাওয়ারজেট কোম্পানির বাংলাদেশি ডিলার পার্কার কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজমাল জর্দার জাগো নিউজকে বলেন, এবারের মেলায় আমরা নতুন অটোমেটিক ফার্মাসিটিক্যাল স্পুন, মেজারিং কাপ, ইত্যাদি তৈরির মেশিন নিয়ে এসেছি।

jagonews24

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বছরে একবার এই মেলা হয়, তবে বহির্বিশ্বে বছরে কয়েকবার এই ধরনের মেলা হয়। কারণ এখানে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা আসেন। তাই অন্তত বছরে দুইবার যদি এরকম মেলার উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে শিল্পের জন্য সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি।

মেলায় বেঙ্গল প্লাস্টিকের স্টলে দেখা যায় প্লাস্টিকের দরজা, ব্যাগ, বোতল, আলমারিসহ গৃহস্থালির বিবিধ পণ্য। বেঙ্গল প্লাস্টিকের সেলস অপারেশন ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা শুরু থেকেই এই এক্সিবিশনে অংশগ্রহণ করছি। প্রতিবারই আমাদের কিছু উদ্ভাবনী পণ্য থাকে, এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।

তিনি বলেন, আমাদের মূল পণ্য গৃহস্থালির সব আইটেম। যেমন- দরজা, আলমারি, চেয়ার, টেবিল। এছাড়া আমাদের রপ্তানিযোগ্য পণ্য আছে যা আমেরিকা, কানাডা, ইতালিসহ বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। গত বছর আমাদের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০ কোটি টাকা এবং আমাদের বাৎসরিক প্রবৃদ্ধি ২০-৩০ শতাংশ।

তিনি আরও বলেন, মেলায় এবার অনেক নতুন নতুন কোম্পানি এসেছে, বিশেষ করে চীন, ভিয়েতনাম থেকে অনেক কোম্পানি এসেছে। তারা তাদের নতুন উদ্ভাবন নিয়ে এসেছেন। এর ফলে আমাদের দেশীয় উদ্যোক্তারা আরও উৎসাহ পাবেন যা এই শিল্পের প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্লাস্টিক রিসাইকেল করে ভারত, চীন, কোরিয়াসহ কিছু ইউরোপীয়ান দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩০ দশমিক ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের রিসাইকেল প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যার প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ। দেশের প্রায় ১২ লাখ লোকের কর্মসংস্থান আছে এই সেক্টরে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রতি বছর একজন মানুষ গড়ে ১৫ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করে যেখানে জাপানে এই পরিমাণ ১৪০ কেজি। কিন্তু বাংলাদেশে সলিড ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনা ভালো না হওয়ায় রিসাইকেল শিল্প দাঁড়াতে পারছে না।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০৩০ সালে বাংলাদেশের প্রতি বছর একজন মানুষ গড়ে ৩০ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করবে।

এসআরএস/ইএ

Read Entire Article