ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
বেশ কয়েকজন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষকে দেখা গেলো একটি শুকনা নদীর মাঝখানে। সঙ্গে আছে শিশুরাও। কারও হাতে গামলা বা খাদি। আবার কারও সঙ্গে ব্যাগ। রয়েছে শাবল আর কোদালও। নদীর খননকাজ চলার মধ্যেই তারা নদীতে নেমেছেন। দূর থেকে দেখলে বোঝা যায়, নিশ্চয়ই মনোযোগ দিয়ে কিছু খোঁজাখুঁজি করছেন তারা।
ঠিক তাই। ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শুভখিলা গ্রামে ‘নরসুন্দা’ নামের এই নদীর কাছে গিয়ে দেখা গেলো, মাটি আর গাছের বিভিন্ন অংশ সংগ্রহ করতে নদীতীরের বাসিন্দাদের হুড়োহুড়ি চলছে। তবে এটি সাধারণ মাটি নয়। বেছে বেছে ‘কালো মাটি’ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ মাটি রোদে শুকিয়ে সারাবছর রান্নাবান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর আগে এখানে নদীতীরে কালো মাটি পাওয়া গিয়েছিল। কৌতূহলবশত সে মাটি শুকিয়ে দেখা যায় ভালো জ্বলে। মাঝখানে আর সে মাটি পাওয়া যায়নি। এখন আবার নদীখনন শুরু হয়েছে। খননের সঙ্গে সঙ্গে কয়েক ফুট নিচে ‘গুপ্তধনের’ মতো লুকায়িত জীবাশ্ম জ্বালানির ‘কালো মাটির’ সন্ধান পাওয়া গেছে। তাই নদীতীরের বাসিন্দারা প্রতিদিন মাটি সংগ্রহে হুড়োহুড়ি করছেন। রান্নাবান্নায় বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে কে কার আগে বেশি সংগ্রহ করবেনে তা নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। শুদ্ধ ভাষায় এ মাটিকে ‘জীবাশ্ম জ্বালানি’ বলা হলেও স্থানীয়রা নাম দিয়েছেন ‘কসম’।
কথা হয় নদী তীরবর্তী শুভখিলা গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিনের সঙ্গে। এই বৃদ্ধ জাগো নিউজকে বলেন, ‘নদীর পাড়ঘেঁষে একসময় প্রচুর গাছগাছালি ছিল। আশপাশেও ছিল বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। পরে ভাঙন আর বন্যায় অসংখ্য গাছগাছালি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। গাছগুলো নদীর মাটির নিচে চাপা পড়ে কালো মাটিতে পরিণত হয়েছে, যা জীবাশ্ম জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাচ্ছে।’
কালো মাটি সংগ্রহ করছিলেন রিপা রানী। তিনি বলেন, ‘কসম (কালো মাটি) সবসময় পাওয়া যায় না। নদী খনন করার কারণে নিচে থাকা কসম বেরিয়ে পড়েছে। তাই স্বামীকে নিয়ে কয়েকদিন ধরে কসম সংগ্রহ করছি। কসম সংগ্রহ করার সময় গাছের বিভিন্ন অংশও পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোও সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।’
বরুণ দাস নামের আরেকজন বলেন, ‘কসম সংগ্রহের পর দুই সপ্তাহ রোদে শুকাতে হয়। এরপর এগুলো যে কোনো লাকড়ি বা গ্যাসের চেয়েও বেশি জ্বলে, রান্নাও হয় দ্রুত। যৎসামান্য কসম দিয়েই সব রান্না হয়ে যায়।’
উপজেলার রাজগাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইফতেখার মমতাজ খোকন বলেন, ‘নদী খনন শুরুর দিকে কালো মাটি বেরিয়ে এলেও কেউ জানতে পারেননি। তবে কয়েকদিন আগে এটি নজরে আসে। এরপরই মাটি সংগ্রহে ব্যস্ত বহু নারী-পুরুষ। বিশেষ করে অসচ্ছল পরিবারগুলোর দারুণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তারা খুশিমনে মাটি সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ময়মনসিংহের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নান্দাইলের নরসুন্দা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি এবং সারাবছর নৌ চলাচলের সুবিধায় নদীটির ২৩ কিলোমিটার খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে ১৩টি খননযন্ত্র (ভেকু) দিয়ে উপজেলার পূর্ব সীমানা চংভাদেড়া গ্রামে খনন শুরু হয়। খননকাজ এগিয়ে কালিগঞ্জ বাজার পার হয়ে শুভখিলা রেল সেতু পর্যন্ত এসেছে।
এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন, ‘যত বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা যাবে, ততই বনাঞ্চল সংরক্ষিত থাকবে। রান্নাবান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে নদীর কালো মাটি সংগ্রহ চলছে বলে শুনেছি। এটি নিঃসন্দেহে ভালো খবর। বিষয়টির খোঁজখবর নেওয়া হবে।’
পাউবো ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখলাক উল জামিল জাগো নিউজকে বলেন, ‘নরসুন্দা নদী এর আগে কখনো খনন হয়নি। ঠিক কত বছর পর খনন হচ্ছে, তা নির্দিষ্ট করে এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে বহু গাছগাছালি শতবছর কিংবা এর আগে বা পরে নদীতে পড়ে যাওয়ায় মাটির সঙ্গে মিশে কালো মাটিতে রূপান্তর হয়েছে বলেই ধারণা করছি।’
তিনি আরও বলেন, আপনার মাধ্যমে ‘কালো মাটি’ সংগ্রহের বিষয়টি প্রথম শুনলাম। এটি দারুণ একটি খবর। বহু মানুষ এই মাটি সংগ্রহের মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। আমিও এটির খোঁজ নিচ্ছি।
কামরুজ্জামান মিন্টু/এসআর/জিকেএস