পেঁয়াজ আবাদে অর্ধেক খরচও উঠছে না চাষিদের

4 hours ago 1
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

পাবনার বাজারে আসতে শুরু করেছে হালি পেঁয়াজ। কিন্তু বাজারে প্রত্যাশিত চাহিদা ও দাম না থাকায় উৎপাদিত পেঁয়াজ নিয়ে লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন চাষিরা। ফলন ভালো হলেও বর্তমান বাজার দরে উৎপাদন খরচই উঠছে না বলে দাবি চাষিদের।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পেঁয়াজ চাষে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া এবং বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় মুড়ি কাটা পেঁয়াজে স্থানীয় চাষিদের প্রতি বিঘায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। বাজারে আসা নতুন চারা পেঁয়াজেও একই ধরনের লোকসান গুণতে হচ্ছে।

চাষিরা বলেন, পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যয়, বাজারমূল্যের অস্থিরতা এবং মধ্য স্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যই এ লোকসানের প্রধান কারণ। এসব কারণে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারাতে পারেন চাষিরা।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান বলেন, এ বছর এক কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৩৮ টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুসারে গত বছরের তুলনায় এবার পেঁয়াজ আবাদ বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।

চাষিরা জানান, কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। জমি প্রস্তুত, বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক এবং শ্রমিক খরচ মিলে একবিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে যা খরচ হয়েছে, তার অর্ধেক দামেও বিক্রি হচ্ছে না।

করমজা চতুরহাটে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা সাঁথিয়া উপজেলার পুন্ডরিয়া এলাকার কৃষক নাসির প্রামাণিক বলেন, এবার মুড়িকাটা পেঁয়াজ বীজ প্রতিমণ ৮ হাজার ৫০০ টাকা দরে ৬ মণ বীজ এক বিঘা জমিতে লাগিয়েছিলাম। শুধু বীজ বাবদ ৫১ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সঙ্গে সার, কীটনাশক, সেচ, শ্রমিকসহ বিঘায় খরচ দাঁড়িয়েছে ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। এক বিঘা জমিতে ৪৩ মণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। বাজারে প্রতিমণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে। সে হিসাবে প্রতি বিঘায় ৫০ হাজার টাকা লোকসান হবে।

সুজানগর উপজেলার উলাট গ্রামের কৃষক মন্টু খান জানান, নিজের মালিকানাধীন প্রায় ১০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা। এরমধ্যে তিনি ঋণ নিয়েছেন প্রায় দেড় লাখ টাকা। পেঁয়াজ বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করব ভেবেছিলাম, পেঁয়াজ এখন গলার কাঁটা হয়ে গেছে।

কালিবাজার এলাকার কৃষক মমিন উদ্দিন জানান, জমিতে বিঘাপ্রতি পেঁয়াজের ফলন হয়েছে ৪৫ মণ। বর্তমান বাজারে ৭০০ বা ৮০০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। তাতে প্রতি বিঘা জমির পেঁয়াজ বিক্রি করে ৩১ হাজার থেকে ৩৬ হাজার টাকা পাচ্ছেন। বিঘায় তার গড়ে লোকসান হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা।

পেঁয়াজ আবাদে অর্ধেক খরচও উঠছে না চাষিদের

সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর এলাকার কৃষক শাওন মন্ডল বলেন, আমাদের পেঁয়াজ উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে সার-কীটনাশকের বকেয়া দেনা পরিশোধ করতে হয়। আবার বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ এক সঙ্গে সংরক্ষণেরও তেমন ব্যবস্থা আমাদের নেই। সরকার কখনো আমাদের কথা ভাবে না। তারা বড় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। সরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগার থাকলে আমাদের এ দুরবস্থা হতো না।

সুজানগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম বলেন, এ বছর পেঁয়াজের ফলন অত্যন্ত ভালো তাই বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে গেছে। তবে সরকার যদি পেঁয়াজের মৌসুমে আগামী তিন মাস আমদানি বন্ধ রাখে, তবে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবেন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

সাধারণত পাবনায় দুটি পদ্ধতি পেঁয়াজ চাষ হয়। এর একটি হলো মুড়িকাটা ও অপরটি হলো হালি বা চারা পদ্ধতি। মুড়িকাটা পদ্ধতিতে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়, সেই পেঁয়াজ ঘরে তোলা হয় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে। অন্যদিকে হালি বা চারা পদ্ধতিতে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়, যা মার্চ-এপ্রিলে ঘরে তোলা হয়।

কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলা দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত। দেশের মোট চাহিদার প্রায় এক তৃতীয়াংশ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় এ তিন উপজেলায়। জেলায় এবার ৪৪ হাজার ২২১ হেক্টর জমিতে চারা বা হালি পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। এর বিপরীতে আবাদ হয় ৪৪ হাজার ১৮৯ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় চার হাজার ৬৩১ হেক্টর, সুজানগরে ১৭ হাজার ৭১০, সাঁথিয়ায় ১৫ হাজার ৪০ ও বেড়া উপজেলায় ২ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে এ পেঁয়াজের আবাদ হয়। এ বছর আগাম জাতের (মুড়িকাটা) পেঁয়াজ আবাদে চাষিরা লাভের মুখ দেখা তো দূরের কথা উৎপাদন খরচ তুলতে পারেনি। একই ভাগ্যবরণ করতে যাচ্ছে চারা বা হালি পেঁয়াজ চাষিরাও।

এ ব্যাপারে পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. রোকনুজ্জামান বলেন, দাম কমলেও কৃষকদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই। এখন পুরোদমে পেঁয়াজ তোলা হচ্ছে জন্য বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। মৌসুম শেষে পেঁয়াজের দাম বাড়বে। তাড়াহুড়ো করে পেঁয়াজ বিক্রি না করে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেন তিনি।

আলমগীর হোসাইন/আরএইচ/জেআইএম

Read Entire Article