ফিরে দেখা নিজেকে: শিক্ষাবিদের জীবন ও শিক্ষাদর্শন

12 hours ago 3
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

সম্প্রতি হাতে এলো শিক্ষাবিদ, লেখক, অধ্যাপক ড. আব্দুল আউয়াল খানের স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘ফিরে দেখা নিজেকে’। গ্রন্থটি আবীর পাবলিকেশন্স থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম প্রকাশিত হয়। লেখকের জীবনে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে বায়ান্ন বছরের শিক্ষকতার বিচিত্র অভিজ্ঞতা গ্রন্থটিতে স্থান পেয়েছে। পাশাপাশি স্থান পেয়েছে লেখকের জন্ম, বেড়ে ওঠা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও চাকরিজীবনে প্রবেশের নানা প্রস্তুতি সম্পর্কীয় কথকতা। এছাড়া বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিভীষিকাময় নানাবিধ অভিজ্ঞতার কথা। সে হিসেবে গ্রন্থটি লেখকের আত্মজীবনীমূলক লেখা। লেখকের জন্ম ১৯৪৮ সালের ঘন শীতে বরিশালের সাতুরিয়ায়। তাঁর মায়ের হিসেবমতে, দিনটি ছিল ২২ মাঘ। কিন্তু স্কুলের রেকর্ড অনুযায়ী ১ জানুয়ারি লেখকের জন্মদিন। তিনি ছোট থেকেই খুব গর্ববোধ করতেন এই ভেবে যে, এ জেলায়ই জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলার বাঘ খ্যাত শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, বিখ্যাত কবি জীবনানন্দ দাশ প্রমুখ।

লেখকের বাবা রুস্তম আলী খান ও মাতা ছাহেরা খাতুন। তাদের চার পুত্রসন্তানের মধ্যে আব্দুল আউয়াল খান মেজো। দাদার তিন সন্তান কিন্তু নানার একমাত্র জীবিত সন্তান লেখকের মা ছাহেরা খাতুন হওয়ার ফলে দাদার বাড়িটি তিন সন্তানের মধ্যে বন্টিত হলেও নানার বাড়িটির একমাত্র উত্তরাধিকার হন লেখকের মা। এজন্য নানা বাড়িতেই তাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। লেখকের বাবা রুস্তম আলী খান খুব অল্প বয়সেই বাবা-মাহীন হওয়ায় কিছুটা অনাদরে বড় হয়ে ওঠেন। তাই বাল্যকাল থেকে আর্থিক অনটন না হলেও পারিবারিক স্নেহ-ভালোবাসার যথেষ্ট ঘাটতি অনুভব করেন। মাধ্যমিক স্তরের বাইরে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রেও ঘাটতি দেখা দেয় এবং কৈশোর থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসা, নিজস্ব জমিতে কৃষি ও বাগান ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সামাজিক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। লেখকের পরিবারে ধর্মীয় অনুশাসন এবং সমাজ হিতৈষী কাজের বেশ গুরুত্ব থাকায় তাদের চার ভাইকেও এগুলো মেনে চলতে হতো।

লেখক কৈশোর ও প্রাক-যৌবনের বর্ণনা দিতে গিয়ে স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলেছেন। জীবন চক্রের সময়টি প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। তেমনই আব্দুল আউয়াল খান হিসেবে গড়ে উঠতে এই ছোট ছোট ধাপই তাঁকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। হাইস্কুল পর্যন্ত লেখক ভালো ফল করতে না পারলেও তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় নবম শ্রেণিতে উঠেই। নবম শ্রেণির প্রথম টার্মিনাল পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। এ পর্যায়ে লেখকের পড়াশোনার প্রতি বিশেষ আগ্রহ তাঁকে বোর্ড ফাইনাল পরীক্ষায় ৭১% নম্বর প্রাপ্তিতে সহায়তা করে। শিক্ষকদের পরামর্শ মেনে চলাতে আব্দুল আউয়াল খান নতুনভাবে জীবনকে আবিষ্কার করেন। এরপর ১৯৬৩ সালে বরিশাল বিএম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। লেখক এখানে একটি তথ্য দিয়েছেন, যা বেশ নজর কাড়ে। সেসময় মেয়েরা বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হতে উৎসাহী ছিল না। তার কারণ সামাজিক-পারিবারিক উভয়ই হতে পারে। তাই যথারীতি ক্লাসের সবাই ছাত্র। এসএসসি রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে মাসের পয়তাল্লিশ টাকা করে আবাসিক স্কলারশিপ পেলেও তা বছরের শেষে একাবারে দেওয়ায় প্রতি মাসে বাড়ি থেকেই পড়ালেখার খরচ আসতো।

১৯৬৪ সালে বিএম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় লেখকের জীবনের মোড় ঘুরে যায়। এই শ্রেণিতে পড়াকালীন হঠাৎ করে বাবার মৃত্যুতে পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। কিন্তু সেই অন্ধকার দ্রুতই সরে যায় লেখকের মায়ের অদম্য মনোবলে। সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করার প্রত্যয় তাঁকে শোকের ওপর আস্তরণ টানতে বাধ্য করে। মাত্র ৩৯-৪০ বছর বয়সে একজন নারীর ওপর চার সন্তানের ভার খুব একটা সহজ কথা নয়! তবে তাঁর এই দুঃখে কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়েছিল বড় ছেলে। লেখক বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে:
‘‘আব্বার মৃত্যুর ০২ (দুই) দিন পরে ভাইজান (আমার বড় ভাই) ঢাকা থেকে বাড়িতে পৌঁছেন। তাঁর আগমনে এক ভিন্ন পরিবেশ তৈরি হয়। চরম দুঃখের মধ্যেও মা যেন তাঁর বড় ছেলেকে পেয়ে কিছুটা হাল্কা বোধ করলেন, আশ্বস্ত হলেন নতুন দিনের আশায়। বড় ছেলেও বড় দায়িত্ব নিয়ে মাকে আশ্বস্ত করলেন ছোট ভাইদের পড়ালেখার দায়িত্ব বহনের। প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন চেষ্টা করে চাকুরিতে বদলি নিয়ে বাড়ি থেকে সবচেয়ে কাছের শাখায় চলে আসার। আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা কবুল করলেন এবং মাত্র ২ (দুই) মাসের মধ্যেই বরিশাল শহরে অবস্থিত তৎকালীন হাবিব ব্যাংকের একমাত্র শাখায় ২য় কর্মকর্তা (Second officer) হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। আমাদের পরিবার, বিশেষ করে আমার মায়ের জন্য এটি ছিলো একটি বড় প্রাপ্তি। বাড়ির বড় ছেলে দৃষ্টান্তমূলক একটি দায়িত্ব পালনের ঐতিহ্য তৈরি করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন শ্রদ্ধার আসনে।’’

বরিশাল বিএম কলেজে পড়ার সময়ই বড় ভাই ও মায়ের স্নেহ-ভালোবাসায় আব্দুল আউয়াল খান বেড়ে ওঠেন। তার মা, ছোট দুই ভাই আব্দুর রহিম ও মিজানুর রহমানসহ তারা প্রতি মাসেই গ্রামের বাড়িতে একত্রিত হতেন। ১৯৬৫ সালে বিএম কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে উচ্চশিক্ষা নিয়ে কিছুটা ধোয়াশা অনুভব করেন লেখক। কিন্তু অতি শিগগিরই এ থেকে পরিত্রাণ পান এবং তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখকের অধ্যায়নকাল ১৯৬৫-১৯৭০ সাল। এই সময়টা পূর্ব বাংলার ছাত্রদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ সময়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) পরিণত হয় সরকার বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে। এ সময় পাকিস্তান সামরিক শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার লক্ষ্যে ওই সময় ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বহীন করে দিতে তারা ষড়যন্ত্র করে। একটি পর্যায়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা রুজু করে দেশে এক অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি করে।

এ মামলার ফসল ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে সংগঠিত ‘মুজিব মুক্তি’ আন্দোলনে শেষপর্যন্ত আইয়ুব সরকারের পতন হয়। লেখক আব্দুল আউয়াল খান ঘটনাগুলো তুলে ধরেছেন স্মৃতিপট থেকে। ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে করে আরেক ধাপে জীবনের সংগ্রাম শুরু হয় লেখকের। মাস্টার্সের পরীক্ষার ফলাফল বের হওয়ার সময়টি সমগ্র দেশ ছিল উত্তাল। তাই সময়টা ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের তুলনায় লেখকের কাছে দেশের স্বাধীনতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয়। লেখক তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘‘[...] তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম অনেকটাই ব্যাহত হয় এবং শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। দেশের সর্বত্র প্রস্তুতি চলে মুক্তিযুদ্ধের এবং আমরা প্রায় সবাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশ নেই সেই মহান যুদ্ধে। উদ্দেশ্য ছিলো, পাক সেনাদের দখলদারিত্বের অবসান ঘটানো এবং স্বাধীনতার লাল সূর্যকে জয় করা।’’

মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ লেখকের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি আবার ঢাকায় পাড়ি জমান কাঙ্ক্ষিত চাকরি লাভের উদ্দেশ্যে। তেজগাঁও কলেজে তিনশত পঞ্চাশ টাকা বেতনে প্রভাষক হিসেবে প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৭২ সালের আগস্ট মাসে সরকারি কলেজে চাকরি পান কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে। পরিবেশ-পরিস্থিতি সবমিলিয়ে দ্রুতই ঢাকা জগন্নাথ সরকারি কলেজে বদলি হন। এভাবেই লেখকের জীবনচক্র ঘুরতে থাকে। এরপর ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন লেখক। চট্টগ্রামে চাকরি, মেস জীবন, বিবাহিত জীবন, চাকরির টাকায় পরিবার ও সংসারজীবনে সংগ্রাম, প্রমোশনের আশা, পিএইচডি ডিগ্রি লাভ ও সন্তানদের বড় করতে করতে কেটে যায় অনেকটা বছর। এর মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে পাশ কাটিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর নিদারুণ লড়াই করতে থাকেন লেখক আব্দুল আউয়াল খান।

সন্তানদের পড়াশোনা নানা রকম প্রাপ্তির ভেতর দিয়ে ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার ২৫ বছর সমাপ্ত করেন তিনি। প্রসঙ্গক্রমে গ্রন্থটিতে বর্ণিত হয়েছে:
‘‘সুদীর্ঘ প্রায় ২৫ বৎসর মূলত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় কাটলেও আমার জীবনের এই মহামূল্যবান সময়কাল (বয়স ২৭ থেকে ৫২ বৎসর) কেটেছে প্রথমে যৌবনের স্বপ্নে ও পরে প্রৌঢ়ত্বের ব্যস্ততায়। জীবনের একমাত্র প্রেম ও বিয়ে এবং তিনটি সন্তান (০২টি ছেলে ও ০১টি মেয়ে) লাভের সৌভাগ্য এই সময়কালেরই অর্জন। সর্বোচ্চ কাম্য ডিগ্রী পি.এইচ.ডি ও অধ্যাপকের পদ প্রাপ্তিও ঘটে এই সময়কালেই। এছাড়াও অগণিত ছাত্র-ছাত্রী ও সহকর্মীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতাও কম হয়নি। এ কথা অনস্বীকার্য যে, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টি চট্টগ্রাম তথা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে দিলেও; পেয়েছিও কম না। একটা প্রশ্ন মাঝেমধ্যেই মনে হতো আর তা হচ্ছে ‘‘চট্টগ্রাম আমাকে বেশি ভালোবেসেছে না কি আমি চট্টগ্রামকে বেশি ভালোবেসেছি?’’ চট্টলার অবস্থান সুসংহত করার লক্ষ্যে আবীর পাবলিকেশন নামে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি যেখান থেকে আমার ও আমার কয়েকজন সহকর্মীর লেখা পাঠ্যবই প্রকাশ করা হয়।’’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক নানা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে লেখক ও অধ্যাপক ড. আব্দুল আউয়াল খান চট্টগ্রামের বসবাস গুটিয়ে ঢাকায় স্থানান্তরিত হন। লিয়েন নিয়ে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন ১৯৯৭ সালে। এর মধ্য দিয়ে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। বাউবিতে যোগদান করে স্কুল অব বিজনেসের ডিনশিপের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন লেখক। শুরু হয় নতুন সংগ্রাম। ১৯৯৭-২০০০ সাল পর্যন্ত মাত্র তিন বছর বাউবিতে বেশ ব্যস্ত সময় পার করেন লেখক। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকতার পরিবর্তে সময়টি তিনি মূলত দূরশিক্ষণ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সময় পার করেন। কর্তৃপক্ষীয় প্রতিশ্রুতি ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার সংকটে ধীরে ধীরে শিক্ষা কার্যক্রমে বাধা আসতে থাকে। লেখক এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক হিসেবে অর্পিত দায়িত্বের যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করতে না পেরে ২৮ বছরের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার ইতি টানতে সচেষ্ট হন। এ সময় পেনশনের টাকায় আল্লাহর রহমতে সস্ত্রীক হজ পালন করেন। পরবর্তীতে জীবন সংগ্রামে নতুন করে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

এরপর শুরু হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা। প্রথম কর্মস্থল তথা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম চাকরি শুরু করেন ২০০১ সালে। কর্মক্ষেত্র ছিল ধানমন্ডি। লেখক ড. আব্দুল আউয়াল তুলে ধরেছেন, তখন বেকারত্ব থেকে পরিত্রাণ পাওয়াটাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সততা, দক্ষতা ও অন্যায়ের সঙ্গে আপোষহীন মন কখনো মাথা নোয়ায় না। যা জাতির জন্য অকল্যাণকর, শিক্ষার্থীদের জন্য মঙ্গলদায়ক নয় তা তিনি কখনোই মেনে নিতে পারেননি। তাই একে একে ছয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে চাকরি করতে হয়। কিন্তু কোথাও চাকরিতে যোগদানের সময় যে শর্ত ও পরিবেশ পাওয়ার কথা ছিল তা তিনি পাননি। বিধায় ২০০১-২০০৬ পরবর্তী আবারও নতুন স্বপ্ন ও উদ্যম বৃথা যেতে শুরু করে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান এবং চাকরি থেকে পদত্যাগের সময়কাল যথাক্রমে তুলে ধরা হলো: দ্বিতীয় কর্মস্থল (২০০৭-২০১০); তৃতীয় কর্মস্থল (২০১০-২০১৩); চতুর্থ কর্মস্থল (২০১৩-২০১৫); পঞ্চম কর্মস্থল (২০১৬-২০১৭); ষষ্ঠ কর্মস্থল (২০১৭-২০১৮) এবং বর্তমান কর্মস্থল (২০১৮-বর্তমান)। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই যাত্রায় লেখকের স্মৃতিচারণায় নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতার কথা স্থান পেয়েছে। শিক্ষার মান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্ট্রি তথা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতপার্থক্য, শিক্ষার মান ও পরিবেশ, পরীক্ষায় দুর্নীতি নানাবিধ বিষয় এখানে স্থান পেয়েছে। জীবনের ভাঙা-গড়া, একটি চাকরি থেকে আরেকটিতে স্থানান্তরিত হওয়া, ছেলেদের প্রবাসে জীবনযাপন, একমাত্র মেয়ে তানহা থেকে পাওয়া নাতিন আলভিনা ও ইহানের ভালোবাসা ও মধুর সম্পর্ক ড. আব্দুল আউয়াল খানকে নতুনভাবে বাঁচতে শিখিয়েছে।

সুদীর্ঘ শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবনে একজন সফল মানুষ ফিরে দেখা নিজেকে বইয়ের লেখক ড. আব্দুল আউয়াল খান। জীবনের এ পর্যায়ে এসেও দেশের প্রতি গভীর অনুরাগ ও মমত্ববোধ তাঁকে বারবার উজ্জীবিত করে। দেশের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা থেকেই বিদেশের হাতছানিকে তিনি অবলীলায় উপেক্ষা করেছেন। মা-মাতৃভূমিকে ভালোবেসে গ্রামের বাড়িটিকে সুন্দর ও নিরাপদ করে গড়ে তুলেছেন। লেখক কখনো চাননি মূল থেকে বিচ্ছিন্ন হতে। তাই তো মায়ের শেষ ইচ্ছেমতো গ্রামের বাড়িটিকে হেফজখানা, মসজিদ, পাঠাগার ইত্যাদির মতো ধারাবাহিক ও ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে সক্রিয় হয়েছেন। এই গ্রন্থে লেখক খুব আক্ষেপ নিয়েই জানিয়েছেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে সবার জোর দিনে দিনে কমে যাচ্ছে কিন্তু এর পরিত্রাণ ঘটাতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের মধ্য দিয়েই জাতিগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।

এসইউ/জেআইএম

Read Entire Article