ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেটে দুর্বল ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক পুন:রুদ্ধারকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। নতুন বাজেটে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলার জন্য স্বল্পমেয়াদী কার্যক্রমের পাশাপাশি অর্থনীতিকে কীভাবে স্থিতিশীল করা যায় তার জন্য মধ্যমেয়াদী সংস্কারের কিছু ভিত্তি স্থাপন করা প্রয়োজন বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের আর্থিক সংকটের ‘দুষ্টচক্র’ ভাঙা, এনবিআরের সংস্কার, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।
রোববার (১৬ মার্চ) সকালে ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে এরকম বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে সংস্থাটি।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, চ্যালেঞ্জপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাজেট প্রণয়ন করবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব সংগ্রহে স্থবরিতা, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকটসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংকট সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি প্রায় অসম্ভব। ২০২৬ অর্থবছরের বাজেট এমন একটি সময়ে প্রণয়ন করা হচ্ছে যখন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্চের মুখোমুখি। এটি মোকাবিলায় দূরদর্শী ও সমন্বিত নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। মুদ্রানীতির স্থীতিশীলতা আনয়ন নীতিনির্ধারকদের অন্যতম কাজ। এটি অর্জনের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হার স্থিতিশীল করা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, অর্থবছর শেষে রাজস্ব ঘাটতি ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত পৌছাতে পারে। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ওপরের দিকে ছিল। শহর ও গ্রামে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে ছিল। এ মাসে মূল্যস্ফীতি কমেছে, তবে গ্যাসের দামের যে প্রস্তাব আছে সেটা যদি অনুমোদিত হয় তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাবে। বৈশ্বিক শুল্ক যুদ্ধ ও মূল্যস্ফীতির ধারা বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক যে বলছে চলতি বছরের জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশে নামিয়ে আনবে সেটা বাস্তবে অর্জন না ও হতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সূচারুভাবে সম্পন্ন করাই মূলনীতি হওয়া উচিত। সেটা করতে হলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল করা এবং রাজস্ব ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়ানো উচিত। এলডিসি গ্রাজুয়েশনের বিষয়গুলো মাথায় রেখেও বাজেট প্রণয়ন করা দরকার। বাজেট প্রস্তাবে সিপিডি জানায় ৬০টি পণ্যের শুল্কহার নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে হবে যাতে বাণিজ্য ভারসাম্য বজায় থাকে। যাতে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের ধাক্কাটা আমরা সামলে আনতে পারি। রপ্তানিকারকদের সহায়তা করার জন্য অন্য ধরনের সহায়তার কথা চিন্তা করতে হবে।
বাজেট প্রস্তাবে এনবিআরের সংস্কার আনার কথা জানায় সিপিডি। এসব সংস্কারের মধ্যে রয়েছে আধুনিক রাজস্ব কাঠামো প্রণয়ন, ডিজিটালাইজেশন করা, সামঞ্জস্যপূর্ণ করনীতি তৈরি করা, ঝামেলামুক্তভাবে কর দেওয়ার ব্যবস্থা করা। সিগারেট, জর্দা, বেভারেজ পণ্যে কর ভার বেশি করা, শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানো ইত্যাদি। জুলাই বিদ্রোহের সময় যারা আহত বা অক্ষম ছিল তাদের স্নাতক ডিগ্রি শেষ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার অর্থায়নের জন্য ২০২৬ অর্থবছরে একটি বৃত্তি কর্মসূচি চালু করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বকেয়া পরিশোধ করতে হবে উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এলএনজি আমদানির পরিবর্তে দেশের গ্যাস অনুসন্ধানের গুরুত্ব দিতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির কাচাঁমালের ওপর শুল্ক কমাতে হবে। এসএমই সুযোগ বৃদ্ধির জন্য প্রতিযোগিতা কমিশনের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এসএম/এএমএ