ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ভুল পথে অগ্রসর হচ্ছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হয়েছে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে আগামীর বাংলাদেশে এ খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। না হলে দেশের শিল্পখাতসহ সার্বিক অর্থনীতি ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টস ইউনিটি মিলনায়তনে ‘কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র : অভিজ্ঞতা কী বলে?’ শীর্ষক সেমিনারে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন অর্থনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনেরা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত সেমিনারে রামপাল ও মাতারবাড়ির বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে কি ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তা তুলে ধরেন ভুক্তভোগীরা।
অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ২০০৮’ বলা হয়েছে, দেশের মোট জ্বালানিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশ ২০১৫ সালের মধ্যে ৫ শতাংশে এবং ২০২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। তবে পরিতাপের বিষয়, ২০২০ সনের লক্ষ্য মোটেও অর্জিত হয়নি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংক্রান্ত সংস্থার তথ্যানুযায়ী ২০১৮ নাগাদ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে মাত্র ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে, যা কিনা ২০২০ সালের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১২ শতাংশ। কপ-২৬ সম্মেলনে বাংলাদেশ ঘোষণা করে যে, ২০৪১ সাল নাগাদ মোট জ্বালানিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশ ৪০ শতাংশে বাড়ানো হবে। অতীতের অকার্যকর পরিস্থিতির আলোকে বাংলাদেশ কীভাবে এ লক্ষ্য অর্জন করবে তা বলা কঠিন।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকার বাসিন্দা এম এ সবুর রানা বলেন, আমরা রামপাল নিয়ে মুভমেন্ট করার জন্য ১৪ বার ১৪৪ ধারার সম্মুখীন হয়েছি। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ সুন্দরবন। সেই সুন্দরবনের পাশে দেশি-বিদেশি পরিবেশবাদী সংগঠনের বিরোধের মুখে বিগত সরকার এ বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করে। আমাদের এলাকা অধিকাংশ সময় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে এতে সুন্দরবনের মাছের ক্ষতি হচ্ছে। আশঙ্কাজনকভাবে মাছের প্রজনন-উৎপাদন কমে গেছে। মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে।
সেমিনারে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ২০১০ সালে জাপানি সংস্থা জাইকার মাধ্যমে জ্বালানি খাত নিয়ে মহাপরিকল্পনা করেছে সরকার। সেই মহাপরিকল্পনায় বাংলাদেশের জ্বালানি খাত নিয়ে বিপজ্জনক পথ তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়লা বিদ্যুৎ, এলএনজি গ্যাস, বিদ্যুৎ আমদানি, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে গুরুত্ব দিয়ে মূল পরিকল্পনা করা হয়েছে। তারপর আমরা দেখলাম, রামপাল, বাঁশখালী, মাতারবাড়ি একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। সেই থেকে দেশের জ্বালানি খাত সর্বনাশা পথে গেছে।
তিনি আরও বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ। এ পদক্ষেপ বিদ্যুতের সরবরাহ অনিশ্চিত করে তুলেছে। আমাদের গ্যাস অনুসন্ধানের জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে মনোযোগ বাড়ানো হবে। তাহলে জ্বালানি ব্যয় কমিয়ে এনে মানুষের ওপর ক্রমান্বয়ে ঋণের বোঝা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় আর বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) পরিচালক মোহাম্মদ মোক্তারুজ্জামানসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।
এনএস/এমএএইচ/জিকেএস