ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
ভারতের রাজধানী দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদে অত্যন্ত নিঃশব্দে প্রশংসিত কাজ করে চলেছেন সনাতন ধর্মের এক তরুণী। রমজান মাসে প্রতি সন্ধ্যায় রোজাদারদের জন্য ইফতারের খাবার তৈরি থেকে শুরু করে বিতরণও করছেন নেহা ভারতী নামে ওই তরুণী।
মাথায় দোপাট্টা ও সবুজ রঙের সালোয়ার কামিজ পরিহিত নেহা অন্য সব ধর্মের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আন্তরিকতার সাথে খাবার বিতরণ করছেন। হাসিমুখে নেহা বলছেন, ‘‘আমি এটাকে দান-খয়রাত হিসেবে দেখি না। এভাবেই আমি ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে চাই। হিন্দুরা মুসলমানদের সাহায্য করতে পারে, আবার মুসলমানরাও পারেন। ভারতে এটাই আমি বিশ্বাস করি।’’
গত তিন বছর ধরে নেহা প্রতিদিন সন্ধ্যায় জামে মসজিদে খাবারের প্যাকেট ও শরবত নিয়ে আসছেন। প্রথমে মাত্র কয়েক খাবারের প্যাকেট দিয়ে এই উদ্যোগ শুরু করেছিলেন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে তার উদ্যোগে গতি আসে। এখন প্রতিদিন প্রায় কয়েক শতাধিক মানুষের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করেন।
পুরাতন দিল্লির বাসিন্দা এবং ‘রাহ্’ নামক একটি এনজিও-র প্রতিষ্ঠাতা নেহা এমন একটি পরিবারে বেড়ে ওঠেন, যারা কখনও হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে বৈষম্য করে না। তিনি যখন প্রথম লক্ষ্য করেন যে, কীভাবে রোজাদাররা ইফতারের খাবারের জন্য সংগ্রাম করে চলেছেন, তখনই নতুন কিছু করার চিন্তাভাবনা করেন।
নেহা বলেন, ‘‘তিন বছর আগে আমি দেখেছিলাম যে বহু রোজাদার খাবার ছাড়াই জামে মসজিদে ইফতার করতে আসছেন। তখন আমি ভেবেছিলাম, কেন তাদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা শুরু করা হবে না? প্রাথমিকভাবে, আমার ক্ষমতা খুবই সীমিত ছিল। কিন্তু বন্ধুবান্ধব ও সোশ্যাল মিডিয়ার সহায়তায় আমি এই কর্মকাণ্ড আরো প্রসারিত করতে সক্ষম হয়েছি। এখন আমরা রমজান মাসে প্রতিদিন ইফতারের খাবার পরিবেশন করি।’’
আর নেহার প্রচেষ্টাই তাকে জামে মসজিদে সুপরিচিত ও জনপ্রিয় করে তুলেছে। স্থানীয়দের পাশাপাশি ওই মসজিদে যেসব দর্শনার্থী আসেন তারা সকলেই নেহার সঙ্গে সেলফি তোলার পাশাপাশি তার কাজের প্রশংসা করছেন।
বর্তমান প্রেক্ষিতে যেখানে প্রায়শই ধর্মীয় বিভাজন তুলে ধরা হয়, সেখানে নেহার এই উদ্যোগ বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। শান্তি, ভ্রাতৃত্ব এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার দিকটি সুকৌশলে তুলে ধরছেন নতুন প্রজন্মের নেহা।
তার অভিমত, আজকাল চারিদিকে যে ঘৃণা ছড়িয়ে পড়ছে, তা আমাকে খুবই পীড়া দেয়। আমি দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে আমাদের আগের ভালোবাসা ফিরিয়ে আনতে চাই। ভারত তার ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য পরিচিত। আমি সেই চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।
ইতোমধ্যেই নেহার এই ‘মিশন’ বহু মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে। নেহার এই উদ্যোগ যাদের গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে তার মধ্যে অন্যতম উত্তর প্রদেশের বেরিলির বাসিন্দা গুলাব বানো। ইফতারের জন্য প্রতিদিন জামা মসজিদে আসা গুলাব জানান, এই উত্তেজনার মুহূর্তে একজন হিন্দু নারীকে মুসলমানদের ইফতারের খাবার দিতে দেখাটা সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে যায়। একটা মানুষ কীভাবে পরিবর্তন আনতে পারেন নেহা সেটা দেখিয়েছেন। জামা মসজিদে দাঁড়িয়ে তিনি একা রোজাদারদের ইফতারি দিয়ে যাচ্ছেন।
গাজিয়াবাদে কর্মরত মুজাফফরনগরের ৩৫ বছর বয়সী নওশাদও নেহার এই নিষ্ঠার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘‘একটা ছোট কোণে আমি একজন মহিলাকে খাবার বিতরণ করতে দেখেছিলাম। প্রথমে আমি কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। আবার যখন জানতে পারি যে সে একজন হিন্দু, তখন আমি আরো বেশি অবাক হয়েছিলাম। আজকের সময়ে, যেখানে এত ঘৃণা ও বিদ্বেষ সেখানে নেহা ভালোবাসা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি এমন একটা কাজ করছেন, যা অনেকেই করার সাহস করে না।’’
নেহার এই কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে হিন্দু ও মুসলিম নির্বিশেষে উভয় সম্প্রদায়ের স্বেচ্ছাসেবকরাই তার এই মিশনে যোগ দিতে আগ্রহী হয়েছেন। অনেকেই এখন ইফতারের খাদ্য বিতরণের জন্য আর্থিক অনুদান বা অন্য সহায়তা প্রদানের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
তবে নেহার দৃষ্টিভঙ্গি আরো বিস্তৃত। তার মূল স্বপ্ন, জামা মসজিদের আশপাশে যারা গৃহহীন ও জীবনধারণের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের জন্য একটি বৃদ্ধাশ্রম খোলা।
সে বলেন, ‘‘প্রতিদিন আমি বয়স্কদের রাস্তায় ঘুমাতে দেখি। আমার স্বপ্ন হল তাদের জন্য একটি আশ্রয়স্থল তৈরি করা। এমন একটা জায়গা হবে যেখানে তারা মর্যাদার সাথে বসবাস করতে পারে। এটাই আমার পরবর্তী লক্ষ্য।’’