ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির প্রভাবশালী নেতা মাহবুবউল আলম হানিফ ও তার ব্যক্তিগত সহকারী জেলা আওয়ামী লীগের দাপুটে নেতা আমজাদ হোসেন রাজু পালিয়ে গেলেও তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে আগের মতোই। হানিফের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আমজাদ হোসেন রাজুর মালিকানাধীন সম্পদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করছেন তার আপন ভায়রা জনতা ব্যাংক কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান চঞ্চল।
ভায়রার প্রভাব খাটিয়ে জনতা ব্যাংকের আঞ্চলিক শাখার কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান চঞ্চল নিজেও ঠিকাদারি কাজ করে আওয়ামী শাসনামলের বিগত প্রায় ১৬ বছরে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও ঢাকায় গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। দুই ভায়রা মিলে করেছেন টেন্ডারবাজি। ব্যাংকে চাকরি করেও ঠিকাদারি ও রাজনীতি নিয়ে পড়ে থাকতেন সব সময়। জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা হয়েও এখন তিনি অঢেল সম্পদের মালিক।
পট পরিবর্তনের পর বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে তার দহরম বেড়েছে। সম্প্রতি জেলা বিএনপির সাবেক এক নেতার জন্মদিনের অনুষ্ঠানেও গিফট নিয়ে হাজির হন তিনি। পাশাপাশি ব্যাংকের এক নারী এজিএম ও তার স্বামী বিএনপি নেতা কলেজ শিক্ষককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওই নারীর স্বামীকে ব্যবসায়িক অংশীদার করেছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে এই ব্যাংক কর্মকর্তা অফিস না করেই যেমন মাসের পর মাস বেতন তুলেছেন। তেমনি কুষ্টিয়াসহ কয়েকটি জেলায় সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ব্যাংকে চাকরি করায় অন্যের লাইসেন্সে বাগিয়ে নেন কোটি কোটি টাকার কাজ। সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করেন হানিফ ও ভায়রা রাজুকে।
- আরও পড়ুন
- কুষ্টিয়ায় সাবেক এমপি হানিফের বাড়ি ভাঙচুর
- বিএনপির দুই নেতা আ’ লীগের স্টাইলে লুটপাটের রাজনীতি করছেন
ব্যাংক কর্মকর্তার বাইরে তার আরেক পরিচয় তিনি হানিফের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আমজাদ হোসেন রাজুর স্ত্রীর বোনের স্বামী। সম্পর্কে ভায়রা। এ পরিচয়ে তিনি বিগত এক দশক দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। পট পরিবর্তনের পর প্রথম দিকে কিছুটা চাপে থাকলেও চঞ্চল এখন আবার ঠিকাদারি কাজে পুরোদস্তুর সময় দিচ্ছেন। গণপূর্ত, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কুষ্টিয়া সার্কিট হাউজ, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ভবন ছাড়াও মেহেরপুর জেলার গাংনীতে শিশু পার্ক, ব্রিজসহ অন্যান্য কাজ চলমান এই কর্মকর্তার। এসব কাজের বেশির ভাগই গত আওয়ামী লীগ সকারের সময় টেন্ডার হয়। রাজুর মাধ্যমে তিনি এসব কাজ বাগিয়ে নেন।
বর্তমানে গণপূর্ত বিভাগের অধীনে কুষ্টিয়া কৃষি বিপণন কেন্দ্র নির্মাণের কাজ করছেন ওয়াহিদুজ্জামান চঞ্চল। যদিও কাগজে-কলমে এ কাজের বাস্তবায়ন করতে বাবর ও সৌরভ নামের দুই ঠিকাদার। এছাড়া মেহেরপুর জেলার গাংনী পৌরসভায় পার্ক নির্মাণসহ প্রায় ১৩ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ বর্তমানে চলমান। এই কাজও ব্যাংকার ওয়াহিদুজ্জামান চঞ্চল বাস্তবায়ন করছেন।
কাজের পাশাপাশি হানিফ ও রাজুর ঢাকাসহ অন্য জেলায় থাকা ফ্ল্যাট, জমি ও ব্যবসা দেখাশোনা করেন ওয়াহিদুজ্জামান চঞ্চল। হানিফ ও রাজুর কোটি কোটি টাকাও তার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
আগে দুই নেতাকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করলেও পট পরিবর্তনের পর বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে তার দহরম বেড়েছে। সম্প্রতি জেলা বিএনপির সাবেক এক নেতার জন্মদিনের অনুষ্ঠানেও গিফট নিয়ে হাজির হন তিনি। পাশাপাশি ব্যাংকের এক নারী এজিএম ও তার স্বামী বিএনপি নেতা কলেজ শিক্ষককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওই নারীর স্বামীকে ব্যবসায়িক অংশীদার করেছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
এখন পলাতক জেলা আওয়ামী লীগের দাপুটে নেতা রাজু-ফাইল ছবি
জনতা ব্যাংকে চাকরি করেন এমন দুজন কর্মকর্তার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই দুই কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগের সময় চঞ্চল অফিস করতেন না দিনের পর দিন। কোনো ম্যানেজার তাকে কিছু বলার সাহস করেননি। হানিফ ও রাজুর লোক হিসেবে চিনতো সবাই। ৫ আগস্টের পর তিনি শহরের চৌড়হাস শাখা থেকে বদলি হয়ে পুলিশ লাইনসের সামনে আঞ্চলিক শাখায় আসেন। এখানে আসার পর এক নারী কর্মকর্তা ও তার স্বামীকে ম্যানেজ করে ঠিকাদারি কাজ চালিয়ে আসছেন। তার দাপট এখনো কমেনি।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে জনতা ব্যাংক কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস শাখায় কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি তিনি বদলি হয়ে পুলিশ লাইন্স শাখায় যোগ দিয়েছেন। এ দুটি ব্যাংকের শাখা প্রধানদের নগদ অর্থ এবং নানারকম উপঢৌকন দিয়ে তুষ্ট করেই বছরের পর বছর ব্যাংকের কাজে ফাঁকি দিয়ে ঠিকাদারি কাজ করছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই ব্যাংক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন। এছাড়া নিজের লাইসেন্সে কোনো কাজ না করার সুবাদে এত বড় অনিয়ম করেও চঞ্চল পার পেয়ে যাচ্ছেন।
- আরও পড়ুন
- বিএনপি নেতাদের চাঁদাবাজির কারণে কুষ্টিয়া মোকামে চালের দাম বাড়ছে
- সেই আওয়ামী লীগ নেতার দখলে থাকা সরকারি জমি উদ্ধার
নিজের বা স্ত্রীর নামে লাইসেন্স করলে ধরা খেয়ে যাবেন চিন্তা করে ঢাকার প্রতিষ্ঠান বাবর অ্যাসোসিয়েট ও কুষ্টিয়ার গ্যালাক্সি অ্যাসোসিয়েট ছাড়াও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে কাজ করেন তিনি। তার প্রতিনিধি হিসেবে এসব কাজ দেখাশোনা করেন শাকিল নামের একজন স্থানীয় ঠিকাদার।
গণপূর্ত বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ আমলে সারাদিন অফিসে এসে বসে থাকতেন চঞ্চল। তার এক আত্মীয় প্রকৌশলীর মাধ্যমে নির্বাহী প্রকৌশলীকে হাত করে কাজ বাগিয়ে নিতেন।
বর্তমানে গণপূর্ত বিভাগের অধীনে কুষ্টিয়া কৃষি বিপণন কেন্দ্র নির্মাণকাজ করছেন ওয়াহিদুজ্জামান চঞ্চল। যদিও কাগজে-কলমে এ কাজের বাস্তবায়ন করছেন বাবর ও সৌরভ নামের দুই ঠিকাদার। এছাড়া মেহেরপুর জেলার গাংনী পৌরসভায় পার্ক নির্মাণসহ প্রায় ১৩ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ বর্তমানে চলমান। সূত্র জানায়, এই কাজও ব্যাংকার ওয়াহিদুজ্জামান চঞ্চল বাস্তবায়ন করছেন। অন্যদিকে কুষ্টিয়া এবং মেহেরপুর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর মোহাম্মদপুর-শ্যামপুর, নাতনাপাড়া-গোয়ালগ্রাম ও কোদালকাঠি-খলিশাকুন্ডি নামে তিনটি সেতুর কাজ বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
গাংনী উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই কাজের ঠিকাদার ছিলেন মেহেরপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি ডা. নাজমুল হক সাগর ও তার খালাতো ভাই বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান বাবলু। কাগজে-কলমে এ দুজন ঠিকাদার সেতু তিনটির কাজ করলেও আসলে এই কাজগুলো করেন কুষ্টিয়ার আলোচিত ব্যাংকার ওয়াহিদুজ্জামান চঞ্চল।
- আরও পড়ুন
- মাহবুবউল আলম হানিফের ব্যাংক হিসাব জব্দ, মুন্নী সাহার তলব
- মাহবুব উল আলম হানিফের দুর্নীতির অনুসন্ধান চেয়ে দুদকে আবেদন
একইভাবে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতাধর ব্যাংকার চঞ্চল গোপালগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল খননের কাজ করেন। অফিসিয়ালি কাজের ঠিকাদার ইউনাইটেড ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈদ্যুতিক প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজও করেছেন তিনি। রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে লাইটিং এরেস্টারের কাজ করেন তিনি। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের অফিস চত্বরের একটি আরসিসি ঢালাই রাস্তা ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাজ অন্য একজন ঠিকাদারের লাইসেন্সে বাগিয়ে নিয়ে বাস্তবায়ন করেন চঞ্চল। কুষ্টিয়া সার্কিট হাউজ পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের সিসি ক্যামেরা ও অ্যারেসস্টারের কাজও করেন আলোচিত এই ব্যাংকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকে এ পর্যন্ত ব্যাংকার ওয়াহিদুজ্জামান চঞ্চল অন্তত শতকোটি টাকার বেশি ঠিকাদারি কাজ করেছেন। এর থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। অফিস ফাঁকি দিয়ে প্রায়ই তিনি দামি গাড়ি হাঁকিয়ে ঠিকাদারি কাজের সাইট পরিদর্শনে যান।
সূত্র বলছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে জনতা ব্যাংক কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস শাখায় কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি বদলি হয়ে পুলিশ লাইনস শাখায় যোগ দেন। এ দুটি ব্যাংকের শাখা প্রধানদের নগদ অর্থ এবং নানান উপঢৌকন দিয়ে তুষ্ট করতেন। বছরের পর বছর ব্যাংকের কাজে ফাঁকি দিয়ে ঠিকাদারি কাজ করে আসছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই ব্যাংক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন। এছাড়া নিজের লাইসেন্সে কোনো কাজ না করার সুবাদে এত বড় অনিয়ম করেও চঞ্চল পার পেয়ে যাচ্ছেন তিনি বলে সূত্রের দাবি।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুজ্জামান হোসেন জাহির তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করা ছাড়া তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তবে ওই অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দাবি করেন, ঠিকাদার ওয়াহিদুজ্জামান চঞ্চলের সঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলীর খুব দহরম মহরম। চঞ্চল প্রকৌশলী জাহিরের কার্যালয়ে নিয়মিত আড্ডা দেন। এ কারণেই প্রকৌশলী জাহির তথ্য দিতে গড়িমসি করছেন বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
- আরও পড়ুন
- রূপকথাকেও হার মানায় হানিফ-আতার উত্থানের গল্প
- ১৫ বছরে হানিফ-আতার ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে রকেটের গতিতে
ওয়াহিদুজ্জামান চঞ্চল কীভাবে অফিস ফাঁকি দিয়ে ঠিকাদারি কাজ করেন এ প্রশ্নের জবাবে কুষ্টিয়ায় কর্মরত জনতা ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, এ ধরনের তথ্য তার জানা নেই। এর থেকে বেশি কিছু জানতে হলে তার কাছে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করতে হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াহিদুজ্জামান চঞ্চল সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আগে ঠিকাদারি কাজ করলেও তিনি এখন আর কোনো ঠিকাদারি কাজ করেন না। ভায়রা রাজুর ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশোনা এবং ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
আল-মামুন সাগর/এসএইচএস/জিকেএস