ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
তিন কোটি ৭৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘুস গ্রহণের অভিযোগে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
শিবলী রুবাইয়াত ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মোনার্ক হোল্ডিং ইনকরপোরেশনের চেয়ারম্যান জাবেদ এ. মতিন, ঝিন বাংলা ফেব্রিক্সের মালিক আরিফুল ইসলাম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এফএভিপি ইসরাত জাহান, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখার অপারেশন ম্যানেজার ইকবাল হোসেন এবং ব্যাংকটির এসইভিপি, অডিট অ্যান্ড ইনপেকশন ডিপার্টমেন্ট ও সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য ২০২২ সালের ১৪ এপ্রিল দুদকে নথি খোলা হয় বলে সংস্থাটির সূত্রে জানা গেছে।
- আরও পড়ুন
- বিএসইসির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত গ্রেফতার
- শিবলী-খোকন-বাবুর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুয়া বাড়ি ভাড়া চুক্তিনামা দেখিয়ে আসামি শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা বা প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার ৩০৮ মার্কিন ডলার ঘুস গ্রহণ করেন। এছাড়া ভুয়া পণ্য বিক্রয় চুক্তি দেখিয়ে পণ্য রপ্তানির কৌশলে ১ কোটি ৮৪ লাখ ২৮ হাজার ৮২০ টাকাসহ তিন কোটি ৭৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘুস গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।
২০২০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতকে প্রথম দফায় বিএসইসি চেয়ারম্যান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি সাধারণ বিমা করপোরেশনের (এসবিসি) চেয়ারম্যান ছিলেন।
সম্প্রতি তার পাসপোর্ট বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগে গত ৯ অক্টোবর দুদকের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ২০২০ সালের ১৭ মে থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় আসামির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি মোনার্ক হোল্ডিং ইন-এর অর্থ আসে।
২০২০ সালের জুলাই মাসে আসামির সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি হিসাবে ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব থেকে ৪টি ট্রান্সজেকশনের মাধ্যমে মোট এক কোটি ৯২ লাখ টাকা জমা হয়। আসামি ২০২০ সালের ১৩ জুলাই এ অর্থ উত্তোলন করেন। ব্যাংকের প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের ঘোষণা ফরমে তিনি এ অর্থকে পারিবারিক খরচ ঘোষণা করেন।
এ অর্থকে ঘুস দাবি করে এজাহারে আরও বলা হয়, গৃহীত ঘুসকে বৈধতা দিতে আসামি জাভেদ এ মতিনের সঙ্গে একটি ভুয়া বাড়িভাড়া চুক্তি করেন। পরবর্তীকালে আসামি শিবলী রুবাইয়াত আসামি জাভেদ এ মতিন গংদের নামে মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেড নামে ২০২১ সালের ডিসেম্বর ব্রোকার হাউজের লাইসেন্স দেন।
এজাহারে বলা হয়, আসামি মো. আরিফুল ইসলামের ঝিন বাংলা ফেব্রিক্স নামীয় ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে ১/কলমা, সাভার (শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের একটি বাড়ি) এ ঠিকানায় নিজ নামে ব্যবসার অনুমোদন নেন। ঝিন বাংলা ফ্রেব্রিক্স নামীয় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের হিসাব পরিচালনাকারী অন্য আসামি শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
ঝিন বাংলা ফেব্রিক্স ২০২০ সালের জুলাই মাসে মোনার্ক হোল্ডিংস ইন চুক্তি করে। যেখানে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে শিপমেন্টে ১,৪৫,০০০ ইউএসডি এবং ৩০-৯-২০২০ এর শিপমেন্টে ২,১৬,০০০ ইউএসডি মূল্যের পণ্য রপ্তানির উল্লেখ রয়েছে।
তবে ঝিন বাংলা ফেব্রিক্সের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি দিলকুশা শাখার ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২০ সালের ১৭ জুলাই ২,১৬,০০০ মার্কিন ডলার ও ২০ জুলাই ১,৪৫,০০০ মার্কিন ডলারসহ মোট ৩,৬১,০০০ ডলার (প্রায় তিন কোটি ছয় লাখ ২৭ হাজার ২৪০ টাকা) জমা হয়।
- আরও পড়ুন
- শিবলী রুবাইয়াত ও তার ছেলের ব্যাংক হিসাব স্থগিত
- শিবলী রুবাইয়াত ও তার সহযোগী ৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক
ওই সময়ে ঝিন বাংলা ফেব্রিক্সের হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স (২০২০ সালের) ব্যতীত এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো, রপ্তানি নিবন্ধন প্রত্যয়নপত্র, আমদানি নিবন্ধন প্রত্যয়নপত্র, বিজিএমইএ সদস্য সনদ, পরিবেশ ছাড়পত্র বন্ডেড ওয়ার হাউজ-এর অনুমোদন ছিল না। অর্থাৎ পণ্য রপ্তানির কোনো বৈধ কাগজপত্র ঝিন বাংলা ফেব্রিক্সের ছিল না।
দুদক বলছে, ওই সময়ে ঝিন বাংলায় পণ্য উৎপাদনের কোনোরকম তথ্য ঘটনাস্থল পরিদর্শনে কিংবা রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় যায়নি। সুতরাং ২০২০ সালের পণ্য বিক্রয় চুক্তিটি ছিল ঝিন বাংলা ফেব্রিক্স নামীয় শেল কোম্পানি কর্তৃক পণ্য নামান্তর।
এজাহারে আরও বলা হয়, আসামি শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম তার নিয়ন্ত্রণাধীন শেল কোম্পানির (জিন বাংলা ফেব্রিক্স) ব্যাংক হিসাবে প্রাপ্ত অর্থ থেকে ৮৯ লাখ ২৬ হাজার ২৯৬ টাকা নিজের সৃষ্ট ঋণ হিসেবে পরিশোধ করেন। ওই জমাকৃত অর্থ থেকে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সময়ে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম তার নিয়োগকৃত বাহক জনৈক দেলোয়ারের মাধ্যমে নগদে প্রায় ৯৫ লাখ ২ হাজার ৫২৪ টাকা উত্তোলনপূর্বক নিজে গ্রহণ করেন।
অর্থাৎ কোম্পানির হিসাবে আসা ৩ কোটি ৬ লাখ ২৭ হাজার ২৪০ টাকার মধ্যে তিনি ঋণ পরিশোধ ও নগদ হিসেবে ১ কোটি ৮৪ লাখ ২৮ হাজার ৮২০ টাকা ঘুস গ্রহণ করেন।
অবশিষ্ট টাকা তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ প্রেরণকারী আসামি জাবেদ এ মতিনের বাংলাদেশি মার্চেন্ট ব্যাংকিং হিসাবসহ তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে জমা নিশ্চিত করেন।
এসএম/এমকেআর/জিকেএস