ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
রাজশাহী মহানগরে চলাচলের জন্য সিটি করপোরেশন চালু করে অটোরিকশা (ছয় আসন বিশিষ্ট) ও ব্যাটারিচালিত রিকশার (দুই আসন বিশিষ্ট) লাইসেন্স প্রদান। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তারা এই লাইসেন্স দেওয়া শুরু করে। তবে বাহন দুটিকেই লাইসেন্স প্রদানের খাতে তারা উল্লেখ করছে নৌকা বা সাধারণ যানবাহন হিসেবে।
কিন্তু বাস্তবে আটোরিকশা বা ব্যাটারিচালিত রিকশা হলো মোটরচালিত। মোটর চালিত সব ধরনের যানবাহনের লাইসেন্স দেওয়ার একমাত্র কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সেই আইনের তোয়াক্কা না করে রাসিক কর্তৃপক্ষ তৎকালীন সরকারের প্রভাব খাটিয়ে নিজেরাই দিয়েছে এই অবৈধ অনুমোদন। এর মাধ্যমে ৫ বছরে রাসিক আয় করেছে প্রায় সাড়ে ২৬ কোটি টাকা।
বিআরটিএ ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে, রাসিক এটা দিতে পারে না। তারা জোর করেই এটি দিয়েছে। তবে সিটি করপোরেশন বলছে তারা যদি এগুলোর ক্ষমতা না রাখে তাহলে বিআরটিএ লিখিত আবেদন করুক।
আর সুশীল সমাজ বলছেন, যার কাজ তাকেই করাতে দেওয়া উচিত। এজন্য সিটি করপোরেশনের শাস্তি হলে সুশাসন ফিরে আসবে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, রাজশাহী সিটিতে চলাচলের জন্য ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে তারা এই লাইসেন্স কার্যক্রম শুরু করে। তৎকালীন সময়ে রাসিকের ৬ ওয়ার্ডে অটোরিকশার (ছয় আসন বিশিষ্ট) অনুমোদন দিয়েছে ৮ হাজার ৯৭০টি। ব্যাটারিচালিত রিকশার (দুই আসন বিশিষ্ট) লাইসেন্স দিয়েছে ৫ হাজার ৮১৯টি। এরপর তারা নতুন করে লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রেখেছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন প্রতিটি অটোরিকশার লাইসেন্স ফি বাবদ ধরেছে ৮ হাজার ৫০ টাকা। অর্থাৎ অটোরিকশার লাইসেন্স দিয়ে আয় করেছে ৭ কোটি ২২ লাখ ৮ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়াও ব্যাটারিচালিত রিকশার ফি ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৫০ টাকা। অর্থাৎ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স দিয়ে আয় করেছে ৫ কোটি ৮৪ লাখ ৯৫০ টাকা।
এদিকে এসব রিকশার লাইসেন্স প্রতি অর্থবছরই নবায়ন করতে হয়। একটি অটোরিকশার লাইসেন্স নবায়ন করতে খরচ হয় ২ হাজার ৫৫০ টাকা। প্রতি অর্থ বছরে লাইসেন্স নবায়ন করে রাসিক আয় করে ২ কোটি ২৮ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়াও একটি ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স নবায়ন করতে খরচ হয় এক হাজার ১৫০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি অর্থবছরে আয় হয় ৬৬ লাখ ৯১ হাজার ৮৫০ টাকা।
সেই হিসাবে ৫ বছরে শুধুমাত্র অটোরিকশার (ছয় আসন বিশিষ্ট) নবায়ন ফি দিয়ে আয় হয়েছে ১১ কোটি ৪৩ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা। আর ব্যাটারিচালিত রিকশার (দুই আসন বিশিষ্ট) নবায়ন ফি থেকে আয় হয়েছে ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৫৯ হাজার ২৫০ টাকা। ফলে ৫ বছরে নবায়ন ও লাইসেন্স ফি দিয়ে ব্যটারিচালিত রিকশা থেকে আয় করেছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার ২০০ টাকা। আর অটোরিকশায় আয় করেছেন ১৭ কোটি ২৮ লাখ ৪৮ হাজার ৪৫০ টাকা। মোট আয় করেছে ২৬ কোটি ৪৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬৫০ টাকা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) রাজশাহীর সহকারী পরিচালক আবদুর রশিদ বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে গাড়ির মালিকেরা নম্বর নেন এবং তাদের কাছে থেকেই তারা নবায়ন করেন। এটির সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে সিটি করপোরেশন এটি দিতে পারে না। তৎকালীন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ও এলজিইডি মন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, কোনো ব্যাটারিচালিত গাড়িকে সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা কোনো ধরনের গাড়ির লাইসেন্স দেবে না। তারপরও তৎকালীন সময়ে সরকারের প্রভাব খাটিয়ে তারা দিয়েছে। আমাদের তৎকালীন যারা ছিলেন তারাও কিছু বলেননি।
তিনি আরও বলেন, ২৫ হাজার লোককে তো আমরা পথে বসাতে পারবো না। তারা জীবিকার তাগিদে পথে নেমেছে। এগুলো একটি সিস্টেমেটিক ওয়েতে আসতে হবে। তবে সিটি করপোরেশন যে অনুমোদন দিয়েছে সেটি ডেফিনেটলি অবৈধ।
রাজশাহী মেট্রপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, এটি নিয়ে আমাদের কোর কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। বিআরটিএ যে কথা বলছে এটিই সঠিক। যেকোনো মোটরযান বলতে যা বোঝায় সেগুলোর লাইসেন্স দেওয়ার একমাত্র অথরিটি হলো বিআরটিএ। এটি আমরা সিটি করপোরেশন, বিভাগীয় কমিশনার, বিআরটিএ, আরডিএ সবাইকে বলেছি। বাস্তবতা হচ্ছে এটি দেওয়ার কোনো এখতিয়ার সিটি করপোরেশন রাখে না। কিন্তু সিটি করপোরেশন একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান, তারা না শুনলে আমাদেরতো কিছু করার নেই।
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. নূর-ই সাঈদ বলেন, সিটি করপোরেশন আমাদের আদায়ের অনুমতি দিয়েছে, আমার আদায় করছি। এগুলো আমরা অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছি। কিন্তু তারা এগুলো কীভাবে খরচ করে সেটি আমাদের জানা নেই।
তিনি আরও কলেন, সিটি করপোরেশনের ৪র্থ ধারায় একটি আইন আছে। সেখানে বলা আছে যানবাহন অথবা নৌকার লাইসেন্স তারা দিতে পারে। অটোরিকশা আর ব্যাটারিচালিত রিকশাতো মোটরযান না। তাই আমরা এগুলো দিয়েছি।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ.বি.এম. শরীফ উদ্দিন বলেন, আটোরিকশা ইঞ্জিনচালিত গাড়ি নয়। এটি বিআরটিএর এখতিয়ারে না। বহুদিন আগে থেকেই আমরা লাইসেন্স দিয়েছি। সিটি করপোরেশন দিতে পারে না, এটি যদি তারা লিখিতভাবে জানায় তাহলে সিটি করপোরেশন স্থানীয় সরাকার মন্ত্রণালয়কে জানাবে।
তিনি আরও বলেন, তারা আমাদের আইন দেখাক। এটি নিয়ে একাধিকবার সাবেক মেয়রের সঙ্গে তাদের মিটিং হয়েছে। সারা বাংলাদেশেই আটোরিকশা চলছে। আপনি যেহেতু বলছেন, আমরা বিআরটিএর কাছে আইনটি জানতে চাইবো।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন বিভিন্ন ক্ষেত্রে এরকম লাইসেন্স ইস্যু করতে পারে। এই আইনটি সিটি করপোরেশনের এখতিয়ারের মধ্যে আছে। আমাদের ১৯৫টি লাইসেন্সের এখতিয়ার আছে। এরমধ্যে একটি বিবিধ। এটি যদি অন্য কোথাও না পড়ে, তাহলে বিবিধের মধ্যে পড়বে। মানে আপনারটাও সত্য, আমারটাও সত্য। সুনির্দিষ্টভাবে নাই, কিন্তু অনির্দিষ্টভাবে আছে।
অপরদিকে সুজন রাজশাহীর সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, এখন অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারকে সব কাজ দিয়ে দিলেতো হবে না। আমাদের ভাবতে হবে আগে কোনটি, পরে কোনটি। এখন সংস্কারের বিষয় আছে। এগুলো একটু নজরে আনতে হবে। এগুলো তারা (সিটি করপোরেশন) করলে কোন ধরনের শাস্তি আছে সেটি বানাতে হবে। তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাহলেই এগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।
এফএ/এএসএম