আ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া: সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে

1 day ago 1
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

সানজিদা জান্নাত পিংকি

২৪ জানুয়ারি। একটি ব্যতিক্রমী দিন। সবুজ নিবিড়ে ঘেরা বত্রিশ একরের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের করিডোর। পা রাখতেই মনে হলো, কোনো সাহিত্যিক জাদুর ভুবনে প্রবেশ করেছি। চারপাশ সজ্জিত বর্ণিল আলোয়। দেওয়ালে ঝুলছে এডওয়ার্ড মরগ্যান ফরস্টারের অমর কীর্তি ‘আ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’র বিভিন্ন দৃশ্যচিত্র। আরেক পাশে বইয়ের স্তূপে সাজানো উপন্যাসটির নানা সংস্করণ। সেই করিডোরে হাঁটতে হাঁটতে মনে হলো, সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে যেন ১৯২৪ সালে ফিরে গেছি—ব্রিটিশ ভারতের দিনগুলো যেন সামনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে।

এই মহাযজ্ঞের নেপথ্যের গল্পটি শুরু হয়েছিল ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আফরোজা সিদ্দিকার এক ভাবনায়। ‘কেন আমরা ফরস্টারের এই মাস্টারপিসের শতবর্ষ উদযাপন করবো না?’ তার সেই প্রস্তাব যেন মুহূর্তেই সবার মনে সাড়া ফেলে। সবাই যেন মুগ্ধ হয়ে সেই ভাবনা গ্রহণ করলো। এরপর শুরু হলো প্রস্তুতির পালা। বিভাগের ৩২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দিলেন এ আয়োজনে। রাত-দিন পরিশ্রম, পরিকল্পনা আর সৃজনশীলতায় তারা এক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান উপহার দিতে প্রস্তুত।

সেদিন দুপুরে লাল ফিতা কেটে উৎসবের সূচনা করেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মনসুর মুসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অফিসার ও আবৃত্তিশিল্পী এনামুল হক। এরপর অতিথিদের বক্তব্য যেন ফরস্টারের উপন্যাসের গভীরতাকে আরও জীবন্ত করে তুললো। তাদের কথায় যেন দর্শকদের হৃদয়ে নতুন করে সাহিত্যপ্রেম জেগে উঠলো।

 সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে

এরপর উপস্থিত সবাই একটি বিশেষ মুহূর্তের সাক্ষী হলেন—এক নীলাভ সজ্জিত কেক কাটা। কেকটির ওপর বড় করে লেখা ছিল, ‘A Century of A Passage to India’। শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত হাত ধরে কাটা হলো এ কেক। মুহূর্তটি ছিল আনন্দে ভরা, যেন শতবর্ষের গৌরব ভাগাভাগি করার এক অনন্য উদযাপন।

মূল আকর্ষণ ছিল এরপর। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপন্যাসটির বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে মঞ্চ নাটক পরিবেশন করলেন। পুরো প্রেক্ষাগৃহ যেন মুহূর্তেই রূপ নিলো ব্রিটিশ ভারতের এক টুকরো মঞ্চে। একজন অভিনয় করলেন ডক্টর আজিজ, যার চরিত্রে ফুটে উঠল এক হৃদয়বৃত্তি ও ভুল বোঝাবুঝির গল্প। আরেকজন হয়ে উঠলেন অ্যাডেলা কোয়েস্টেড, যার দোদুল্যমান মন এবং সংস্কৃতির সংঘর্ষ দর্শকদের আবেগে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। মঞ্চে ম্যাজিস্ট্রেট ফিল্ডিংয়ের চরিত্রও ছিল অসাধারণ। শিক্ষার্থীদের অভিনয়ের গভীরতা আর উপস্থাপনার মুন্সিয়ানায় যেন উপন্যাসটি নতুন করে প্রাণ পেল। নাটক শেষে করতালির গর্জনে পুরো মহল কেঁপে উঠল।

নাটকের মুগ্ধতা কাটতে না কাটতেই মঞ্চে উঠলেন নৃত্যশিল্পী আফিয়াত মিথী। তার নৃত্য যেন একেবারে ভিন্ন মাত্রার এক অভিজ্ঞতা। তার পরিবেশনায় যেন কাব্যের ছন্দ আর ঐতিহ্যের রূপ এক হয়ে গেল। প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি ভঙ্গিমা দর্শকদের এক নতুন মোহের জগতে নিয়ে গেল।

অনুষ্ঠানের শেষে দর্শকদের মন যেন ছিল ভারী। এক তরুণ শিক্ষার্থী বলেন, ‘এ আয়োজন শুধু একটি উৎসব ছিল না; এটি ছিল ইতিহাস, সাহিত্য আর সংস্কৃতির এক অনন্য মেলবন্ধন। আমরা শুধু একটি উপন্যাস উদযাপন করিনি, উদযাপন করেছি আমাদের সাহিত্যিক ঐতিহ্যকে।’

এভাবেই শেষ হলো সেই মহোৎসব। কিন্তু অনুষ্ঠানের পরও যেন সেই আবেগ, সেই মোহময়তা কাটতে চাইছিল না। সেদিন যারা সেখানে ছিলেন; তাদের জন্য এটি শুধু একটি দিন নয় বরং এক চিরস্থায়ী স্মৃতি হয়ে থাকবে। ‘আ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’র শতবর্ষ যেন আরও একবার প্রমাণ করলো—সাহিত্যই পারে সংস্কৃতি, ইতিহাস আর আবেগকে একসঙ্গে বেঁধে রাখতে।

লেখা: শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।

এসইউ/জিকেএস

Read Entire Article