ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS
সারাদেশের টমেটো উৎপাদনের বেশিরভাগই হয় রাজশাহীতে। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি টমেটো উৎপাদন হয় গোদাগাড়ী উপজেলায়। এজন্য ‘টমেটোর রাজ্য’ বলা হয় গোদাগাড়ীকে। তবে গত সাত বছরে টমেটো চাষে ‘নীরব বিপ্লব’ হলেও বাড়নি চাষের জমি। কৃষকরা বলছেন, বছরভেদে টমেটোর দাম বাড়া-কমায় চাষে থিতু হতে পারছেন না তারা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গোদাগাড়ীতে টমেটোর আবাদ হয় ২৬৫০ হেক্টর জমিতে। সেখানে উৎপাদন হয় ৫৮ হাজার ৫৯৫ মেট্রিক টন। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে আবাদ ২১৫০ হেক্টর, উৎপাদন ৪৯ হাজার ৫২৫ টন; ২০২০-২১ অর্থবছরে আবাদ ২৪৬০ হেক্টর, উৎপাদন ৫৯ হাজার ৪০ টন; ২০২১-২২ অর্থবছরে আবাদ ২৮৫০ হেক্টর, উৎপাদন ৭১ হাজার ২৫০ টন; ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদ ৩০১৫ হেক্টর, উৎপাদন ৮৭ হাজার ৪৩৫ টন; ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আবাদ ২২৪৫ হেক্টর; উৎপাদন ৬৫ হাজার ১০৫ টন এবং সবশেষ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে টমেটোর আবাদ হয়েছে ২৬৭০ হেক্টর জমিতে। এসব জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৪ হাজার ৭৬০ টন। এ বছর গড়ে ১৫ টাকা কেজি করে বিক্রি ধরা হলে আয় হবে ১১২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এসব টমেটো চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত আট হাজার কৃষক।
আরও পড়ুন:
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমি থেকেই বিক্রি হয় এসব টমেটো। উৎপাদন ও বিক্রি ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় টমেটো চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ফলে টমেমেটাতে আগ্রহ বাড়ছে। সাধারণত আউশ ধান কেটে নেওয়ার পরে টমেটোর চাষ শুরু হয়। গোদাগাড়ী উপজেলায় ১৭-২০ জাতের টমেটোর চাষ হয়। যার মধ্যে বেশিরভাগই হাইব্রিড। তবে অন্য যেকোনো মাঠ ফসলের চেয়ে টমেটো চাষ অত্যন্ত লাভজনক। তবে ভালো ফলন, বীজ ও দাম নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে কোনো বছর চাষের হার বেড়েছে আবার কোনো বছর কমেছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার হেলিপ্যাড এলাকার কৃষক নাইমুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘গোদাগাড়ীতে আগের মতো টমেটো চাষ নেই। এখন যা হয় সব মাঠেই বিক্রি হয়ে যায়। আগে তো মাঠের পাশেই অনেক টমেটো দেখা যেত। এখন সেখানে দেখা যায় না। তবে চাষ আছে। মানুষ চাষ করছে। ব্যবসায়ীরা জমিতে থেকেই টমেটো কিনে নেন। লাভও হচ্ছে।’
গো-গ্রামের চাষি বিভূতি ভূষণ বলেন, ‘আমি কয়েক বছর ধরেই টমেটো চাষ করছি। গতবছর তেমন দাম পাইনি। এজন্য এবার অল্প পরিমাণ জমিতে চাষ করেছি। বাকিটাতে সরিষার আবাদ করেছি। তবে সিজিন তো এখন শেষ। ভালোই দাম পেয়েছি।’
আরও পড়ুন:
কৃষক আব্দুল হাদি জানান, এবার ৬৪২ প্রজাতির (একটি জাতের নাম) টমেটো চাষ করেছেন। তবে অনেকে অন্য জাতের টমেটো চাষ করেছেন। এ বছর তুলনামূলক গাছে টমেটো কম। ভালো ফলন হয়নি। তবে দাম মোটামুটি ভালো।’
কথা হয় টমেটো ব্যবসায়ী শামসুল আলম বাবুর সঙ্গে। তিনি জানান, গোদাগাড়ীর টমেটো এক বছর ভালো গেলে পরের বছর খারাপ যায়। মূলত বাজার, বীজ, ভালো ফলন এসবের ওপরে নির্ভর করেই চাষ কমে আবার বাড়ে। এবার ভালো টমেটো আছে। ভালো দাম আছে।
তিনি বলেন, প্রতিদিন এক ট্রাক করে টমেটো ঢাকায় পাঠাই। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লায় যাচ্ছে এসব টমেটো। তবে এবার দাম বেশি হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীদের লোকসান হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ বলেন, এই অঞ্চলে দুবার টমেটোর চাষ হয়। এরমধ্যে গ্রীষ্মকালীন টমেটো রয়েছে। এই টমেটোর বেশি দাম পান চাষিরা। এবছর এই টমেটো ১৫-১৬০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গড়ে ১৫ টাকা কেজি করে বিক্রি ধরা হলে আয় হবে ১১২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, টমেটো বেচাকেনাকে কেন্দ্র অস্থায়ীভাবে ৮ থেকে ৯ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
এসআর/এমএস