ঘুড়ি ওড়ালে জেল জরিমানা হয় যে দেশে

4 hours ago 1
ARTICLE AD
468x60 AD AFTER 4 POSTS

বিকালে মাঠে কিংবা ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো গ্রাম বাংলার এক প্রাচীন খেলার মধ্যে একটি বলা যায়। বিশেষ করে বাংলাদেশে, বিশেষ করে পুরান ঢাকায় পৌষ মাসের শেষ দিন, অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব পালন করা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিশ্বকর্মা পূজার দিন ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথা রয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশে ঘুড়ি ওড়ানো একটি বিনোদনমূলক অবসর বিনোদন। তবে জানেন কি, ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশে আছে নানান নিয়ম কানুন। না মানলে হয় জেল জরিমানা।

ঘুড়ি ওড়ানো একটি জনপ্রিয় বিনোদনমূলক খেলা হলেও, অনেক দেশে এটি নিয়ে কঠোর আইন এবং বিধিনিষেধ রয়েছে। এসব আইন সাধারণত জননিরাপত্তা, পরিবেশ, বিমান চলাচল, এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে।

ভারত

ভারতে ঘুড়ি ওড়ানোর ক্ষেত্রে বেশ কিছু আইন রয়েছে, বিশেষ করে ভারতীয় বিমান আইন, ১৯৩৪ অনুযায়ী। ঘুড়ি একটি এয়ারক্রাফ্ট হিসেবে বিবেচিত এবং এটি ওড়ানোর জন্য বিশেষ অনুমোদন প্রয়োজন হতে পারে। যদি কোনো ব্যক্তি ঘুড়ি ওড়ানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটায় বা জনসাধারণের ক্ষতি হয়, তবে তাকে জরিমানা বা কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হতে পারে।

বিশেষ করে ম্যানজা (ধাতব বা কাচের গুঁড়া মেশানো সুতা) ব্যবহারে অনেক রাজ্যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, কারণ এটি গুরুতর আঘাত বা মৃত্যু ঘটাতে পারে। দিল্লি ও গুজরাটে বেশ কিছু দুর্ঘটনার কারণে মঞ্জা ব্যবহারে কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

ভারতীয় বিমান চলাচল আইন ১৯৩৪-এর ১১ ধারা অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তি ৬০ মিটার উচ্চতা অর্থাৎ ২০০ ফুটের ওপরে ঘুড়ি ওড়ায়, তবে তার জন্য অসামরিক বিমান চলাচলের ডিরেক্টরের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। ডিজিসিএ দেয় এই অনুমতি। পারমিশন ছাড়া এই উচ্চতায় একটি ঘুড়ি ওড়ানো হলে জেলে যেতে হতে পারে। এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে ২ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

পাকিস্তান

পাকিস্তানে ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য কঠোর আইন রয়েছে, বিশেষ করে পাঞ্জাব প্রদেশে। ঘুড়ি ওড়ানো বিশেষত বাসন্তী উৎসব (বসন্তের সময়) খুব জনপ্রিয় হলেও, দুর্ঘটনা এবং বিদ্যুৎ সংযোগে বিঘ্ন ঘটার কারণে এটি নিষিদ্ধ। পাঞ্জাব প্রহিবিশন অব কাইট ফ্লাইং অর্ডিন্যান্স, ২০০১ অনুযায়ী, ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য ৬ মাসের জেল বা জরিমানার বিধান রয়েছে। মঞ্জা সুতা ব্যবহার করা এখানে সম্পূর্ণ বেআইনি।

বাংলাদেশ

বাংলাদেশে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) আইন অনুযায়ী, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ লাইন, বিমান চলাচল এবং মানুষের উপর ঝুঁকি তৈরি করে এমন ঘুড়ি ওড়ানো নিষিদ্ধ। কোনো অনুমোদন ছাড়া ঘুড়ি ওড়ানো এবং বিশেষ ধরনের ধারালো সুতা ব্যবহার আইনত অপরাধ। এ কারণে নির্ধারিত জরিমানা বা প্রয়োজনে কারাদণ্ড হতে পারে।

যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যে ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে বিশেষ কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। দ্য এয়ার নেভিগেশন অর্ডার ২০১৬ অনুযায়ী, বিমানবন্দর বা এয়ারস্পেসের কাছে ৬০ মিটারের বেশি উচ্চতায় ঘুড়ি ওড়ানো নিষিদ্ধ। যদি কেউ এই নিয়ম ভঙ্গ করে, তবে তাকে জরিমানা বা জেলের সাজা হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রে ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট বিধি রয়েছে। ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এর নিয়ম অনুযায়ী, ঘুড়ি ১৫০ ফুটের বেশি উচ্চতায় ওড়ানো যায় না। বিমানবন্দর বা সামরিক এলাকাগুলোর কাছে ঘুড়ি ওড়ানো বেআইনি। আইন ভঙ্গ করলে জরিমানা বা মামলা হতে পারে।

ইন্দোনেশিয়া

ইন্দোনেশিয়ায় ঘুড়ি ওড়ানো একটি জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হলেও, এটি নিয়ে বিধিনিষেধ রয়েছে। ঘুড়ির কারণে বিমান চলাচলে বিঘ্ন বা বিদ্যুৎ সংযোগে সমস্যা হলে দায়ী ব্যক্তিকে জরিমানা বা জেলে পাঠানো হয়।

সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই)
দুবাইয়ে ড্রোন এবং ঘুড়ি উড়ানো কড়া নিয়মের আওতায় পড়ে। বিমান চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে এটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদি কেউ আইন ভঙ্গ করে, তবে ৫০ হাজার দিরহাম (প্রায় ১২ লাখ টাকা) পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

কেন এই আইনগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে?

ঘুড়ি ওড়ানো একটি মজার খেলা হলেও, এর নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির কারণে অনেক দেশে এটি আইন দ্বারা সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। যেমন- অনেক সময় ঘুড়ি ওড়ানোর কারণে বিমান বা হেলিকপ্টারের সাথে সংঘর্ষের ঝুঁকি তৈরি হয়। ঘুড়ির সুতা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটাতে পারে। ধারালো মঞ্জা সুতা ব্যবহারে মানুষ আহত বা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘুড়ির সুতা এবং ধাতব উপকরণ পরিবেশে দূষণ সৃষ্টি করতে পারে। বিভিন্ন দেশে আইন ও বিধিনিষেধ ভিন্ন হতে পারে। তবে এর মূল উদ্দেশ্য হলো জননিরাপত্তা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং বিমান চলাচল নিশ্চিত করা। তাই যে কোনো দেশে ঘুড়ি ওড়ানোর আগে স্থানীয় আইন মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

কেএসকে/এমএস

Read Entire Article